বিশ্ব এখন লড়ছে করোনার সঙ্গে। ভয়াল করোনা হাজার হাজার মানুষের প্রাণই কেড়ে নিচ্ছে না শুধু, ভবিষ্যতকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারের দিকে। অর্থনীতির চাকাকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে। এ মূহূর্তে গোটা বিশ্ব থমকে আছে। প্রতিটি দেশ তার নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। মানুষের জীবন বাঁচাতে বিনা অস্ত্রে লড়াই করছে। একমাত্র ওষুধ এখন কোয়ারেন্টিন, লকডাউন। ঘরে থাকা ।
তারপরেও ইউরোপ্, আমেরিকায় দিন দিন বাড়ছে লাশের সারি। এশিয়া বিশেষ করে দক্ষিন এশিয়া এখন করোনার নজরে। এখানকার অর্থনীতির চাকা এখন একেবারেই অচল। বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্র সকল শিল্প কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ। আকাশপথ, জলপথ, স্থলপথ বন্ধ। সবকিছু বন্ধ মানে অর্থনীতির চাকাও বন্ধ। এ যুদ্ধ কতদিন চলে এর সময়সীমা নেই। সবার আশা সহসাই এ যুদ্ধ থামবে। এরপর বিশ্ব যে যুদ্ধের মুখোমুখি হবে তা হল অর্থনীতি মন্দার সঙ্গে যুদ্ধ। এ লড়াইও কঠিন হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকাল দশটায় সংবাদ সম্মেলনেও অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা ব্যাক্ত করেছেন। পাশাপাশি মন্দার সঙ্গে লড়াইয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। যা দেশের জন্য বয়ে আনবে মঙ্গল। প্রধানমন্ত্রীর আশার কথা শুনে অর্থনীতিবিদরা ও ফেলছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরবর্তী মন্দা মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের কথা মাথায় রেখে দুভাগে এ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করা হয়। এতে সকল পর্যায়ের শিল্প মালিকদের মনে আশার সঞ্চার হবে। মনে সাহস যুগাবে। তারা এই প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা নিয়ে মন্দা পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে পারবেন। সামলে উঠতে পারবেন। শুধু তাই নয় এ প্যাকেজের আওতায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পসমূহকে ওয়ার্কিং ক্যাপিট্যাল হিসেবে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋন দেয়া হবে। ৯ শতাংশ হারে দেয়া এ ঋনে মালিক পক্ষ দেবে সাড়ে ৪ শতাংশ। আর সরকার ভর্তুকি দেবে সাড়ে ৪ শতাংশ। অপরদিকে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পকে ৪ শতাংশ সুদে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋন দেয়ার ঘোষনা দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে দুঃস্থদের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরন করা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেয়া এ উদ্যোগ অবশ্যই দেশের অর্থনীতির চাকাকে ফের সচল করে তুলবে। শুধু শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকই নয়, এতে শ্রমিকরাও অনিশ্চিত জীবন থেকে রক্ষা পাবে। মুদ্রাস্ফীতির হ্রাস টেনে ধরার এ প্যাকেজের ফলে অবশ্যই মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। দেশজুড়ে স্থবির পরিস্থিতিতে শিল্প কারখানার মালিকরা এমন আশার বাণীই শুনতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে সকলকে ঘরে বসে পবিত্র শবে বরাত ও বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আহবান ও জানান।
দেশবাসীকে ঘরে থাকতেই হবে। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য। করোনার থাবা থেকে মুক্তির একমাত্র ওষুধ ঘরে থাকা। কোয়ারেন্টিনে থাকা। করোনার সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হলেইতো পরবর্তী যুদ্ধে লড়তে পারব। তাই সবাইকে করোনার সঙ্গে যুদ্ধের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দার যুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে এক্ষুনি। প্রধানমন্ত্রী সেই যুদ্ধে লড়তে অস্ত্র দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। সেই যুদ্ধে সবাইকে জিততেই হবে।