গ্রামের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে খাদ্য সহায়তা থেকে

0
656

ইউনিয়ন প্রতি সরকারী বরাদ্ধ বাড়ানোর দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি : দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সামাজিক কনটিমিনেশন বা সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এই অবস্থায় সরকারী ভাবে সকলকে বাড়িতে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। সরকারী,বসরকারী ও আধাসরকারী থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফুটপাতের চায়ের দোকান তেকে বড় বড় শপিং মল বা কৃষি পণ্যের মার্কেট সব প্রায় বন্ধ। বাজারে বিরাজ করছে ক্রেতা সংকট। সামান্য মুজুরীর শ্রমিক থেকে মোটা অংকের বেতনধারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী সকলেই বাসায় বসে দিন কাটাচ্ছেন। রিকসা চালক, দিনমুজুর, নির্মাণ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে, ইজি বাইক চালক, মিল কলকারখানার শ্রমিক, পাইকারী বাজারের লেবার, কুলি মজুর, বাসা বাড়ির কাজের লোক, মোটর গ্যারেজের শ্রমিক, মোটর শ্রমিক, দর্জি শ্রমিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের খেটে খাওয়া মানুষরা আজ বেকার। এই অবস্থায় সরকারী ভাবে এসব নি¤œ আয়ের মানুসদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সরকারী ভাবে খাদ্য সরবরাহের ঘোষনা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেই ভাবে তিনি নির্দেশনাও প্রদান করেছেন। সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকবৃন্দ মাঠ পর্যায়ে এই খাদ্য সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা ও মনিটরিং করছন। ইতিমধ্যে ২ দফায় ইউনিয়ন ভিত্তিক এই খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই স্বল্প বলে দাবি করছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরবৃন্দ। এর বাইরে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিটি জেলা ও জেলা সদরে চাহিদা ভিত্তিক খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তাও চাহিদার তুলনায় কম বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে খাদ্য দ্রব্য বিলিবন্টনের নিয়মত নিয়ে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সরকারী সাধারণ ছুটি ঘোষনার পর এ পর্যন্ত সরকারী ভাবে দুই দফায় ইউনিয়ন প্রতি ২শ’ পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রথম দফায় প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য ১শ’ টি পরিবার ও ২য় দফায় আরো ১শ’ পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে চেয়ারম্যান মেম্বররা বলছেন, এই সরবরাহ চাহিদার একশত ভাগের দশ ভাগও পূরণ হচ্ছে না। চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় ৮ হাজার পরিবার রয়েছে যারা সরকারী খাদ্য সহায়তা প্রাপ্তির দাবিদার। কিন্তু ২ দফায় বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছ্রে মাত্র ২শ’ পরিবারকে। যা নিয়ে ৯টি ওয়ার্ডের মেম্বরগণকে সমান ভাগ করে ২০টি করে খাদ্য প্যাকেট প্রদান করা হয়েছে। যা চাহিদা তুলনায় খুবই কম। এর ফলে সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের চোর সাজতে হচ্ছে। তাদের ধারনা সরকারী ভাবে বরাদ্ধ আরো অনেক বেশি। চেয়ারম্যান মেম্বররা সব মেরে খাচ্ছ্ েফলে এই বদনামের হাত তেকে রেহাই পেতে ও ভোটারদের মন জয় করতে ব্যক্তি উদ্যোগে ও আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় আরো ৫/৭শ’ পরিবারকে খাদ্য সরবরাহ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫ হাজার পরিবারকে মাসিক ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা সরকারী ভাবে প্রদান করলে কোন রকমে ইজ্জত বাঁচে।
উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু বলেন, সরকারী ভাবে যে বরাদ্ধ দেওয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত অপ্রতুল। অবিলম্বে এই বরাদ্ধ বৃদ্ধি না করলে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষকে দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে ও রাজনৈতিক নেতা ও সামজিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় উপশহর ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার পরিবারে চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, আলুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হয়েছ্ েকিন্তু পরিস্থিতি যে ভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে তাতেসামনের দিনগুলি আরো ভয়াবহ হবে বলেই মনে হচ্ছে। তিনিও ইউনিয়ন প্রতি সরকারী বরাদ্ধ বৃদ্ধির দাবি জানান। লেবুতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন বলেন, সরকারী ভাবে ২শ’ পরিবারকে ও এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে আরো তিনশ’ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছ্ েকিন্তু চাহিদা তো আরো অনেক। কর্মহীন সব স্তরের মানুষের খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। নি¤œ ও ন্মি মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অবস্থা এক নয়। নি¤œ বিত্তরা তো মানুষের কাছে ভাবে চেয়ারম্যান মেম্বরদের কাছে হাত পাততে পারছে। কিন্তু মধ্যবিত্তরা লোকলজ্জার ভয়ে ঘরে বসেই মরছে। ফলে দ্রুত ইউনিয়ন প্রতি সরকারী খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধির দাবি জানান তিনিও। ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম দেয়াড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানসহ জেলা বিভিন্ন উপজেলার ইউিিপ চেয়ারম্যান ও মেম্বররা একই সুরে কথা বলেন।
এদিকে জেলা ও উপজেলা সদরের কাছাকাছি থাকা পরিবারগুলো সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা পেলেও দুর দুরান্তের মানুষ গুলোর কাছে এ পর্যন্ত কোন খাদ্য সহায়তা পৌঁছায়নি বলে দাবি অনেকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন টিভি সাংবাদিক বলেন, জেলা বা উপজেলা সদরের কাছাকাছি থাকা মানুষ গুলোর হাতে খাদ্যের প্যাকেট তুলে দিয়ে খুব সহজে মিডিয়া কাভরেজ নেওয়া যাচ্ছে। এই কারনে সকলেই শহর কেন্দ্রীক মানুষকে যে যা পারছেন তাই দিয়ে সহায়তা করছেন। কিন্ত অজ পাড়া গায়ে অবস্থানকারীদের ানেকেই ভুগছেন খাদ্য সংকটে। চৌগাছা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, নারায়নপুর, শিমুতলা, জগদীশপুর, বুড়িন্দিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে জানান গেছে এসব গ্রামে এখনো পর্যন্ত জ্জ জনের বেশি কেই কোন খাদ্য বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পাননি। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে। জগদীশপুর গ্রামের ইউপি মেম্বর মজনুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত জগদীশপুর গ্রামে মাত্র ১২টি পরিবারকে ১২টি খাবার প্যাকেট দিতে পেরেছি। আর কোন বরাদ্ধ নেই। প্রতিদিন এই ওয়ার্ডের ২/৩শ’ পরিবারের সদস্যরা তাদের চাহিদার কথা জানাচ্ছেন।কিন্তু খাবার তো পাচ্ছি না। দেব কি করে। কেশবপুর, অভয়নগর থেকে শুরু করে বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার চিত্র একই রকমের। যশোর জেলার বাইরে সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ. চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, বাগেরহাট, খুলনাসহ এই অঞ্চলের ১০/১২টি জেলার চিত্র প্রায় একই রকম। সরকারী বা বেসরকারী যে উদ্যোগেই খাবার সহায়তা প্রদান করা হেচ্ছে না কেন তা প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। অপরদিকে শহরের অনেক পরিবার বিভিন্ন জায়গা থেকে খাবার পেয়ে তা মজুদ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকে বলছেন, এই দুর্যোগে সর্বস্তরের মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌছাতে একটি নীতিমালার প্রয়োজন। এছাড়া সম্বন্বয়হীনতাও এই ক্ষেত্রে বড় বাঁধা বলে মনে করছেন অনেকেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here