চৌগাছায় প্রথম বারের মত এক স্কুল ছাত্রসহ করোনায় আক্রন্ত ২ সর্বত্রই আতংকিত মানুষ

0
550

আর ১৬ টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হল যশোরে

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় প্রথম বারের মত ২ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৩৭ বছরের এক নারী ও ১৩ বছরের এক স্কুল ছাত্র রয়েছেন। তারা সকলেই চৌগাছা পৌরসভার বাসিন্দা। উপজেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত দুই রোগীর বাড়ি লকডাউন ঘোষনা করার পাশাপাশি বাড়ি দুটিতে লাল পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। বুধবার সকালে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পৌর শহরসহ গোটা উপজেলাতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যে জনশূন্য হয়ে পড়ে চৌগাছা বাজার। তবে আতংকিত না হয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের স্কুলছাত্র জ¦র ও ডায়রিয়া নিয়ে এবং ২ নং ওয়ার্ডের ওই নারী জ¦র ও গলায় ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এই দুই রোগী দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সন্দেহ হলে তাদেরকে শতর্কতার সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেন। এরপর করোনা পরীক্ষা করার জন্য শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ওই দুই রোগীকে বাড়িতে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেন। এরপর সংগ্রহ করা নমুনা সাথে সাথে যশোর সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরীক্ষা করার জন্য নমুনা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। বুধবার ওই দুই রোগীর শরীরে করোনা পজেটিভ আসে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আতংকিত হয়ে পড়েন মানুষ। উপজেলা প্রশাসন, হাসাপাতাল ও পৌর কর্তৃপক্ষ দ্রুত ওই বাড়ি দুটিতে যান এবং দুই বাড়িই লকডাউন ঘোষনা করেন, ঝুলিয়ে দেয়া হয় লাল পতাকা।
২ নং ওয়ার্ডের আক্রান্ত ওই নারীর স্বজনরা জানান, তিনি অনেক বছর ধরেই স্বাস কষ্টসহ বেশ কিছু রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি রোগ বৃদ্ধি পেলে চৌগাছা হাসপাতালে যান। সেখানে ওষুধ দেয়ার পর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নিয়ে বাড়িতে চলে আসতে বলেন। আজ বুধবার সকালে আমরা জানতে পারি সে করোনায় আক্রান্ত। স্বজনরা আরও জানান, ওই নারী তার পিতৃলয়ে স্বামী ও ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। স্বামী বাস চালক, করোনার কারনে বাসচলাচল বন্ধ সে কারনে স্বামী সারাক্ষনই বাড়িতে থাকেন। একমাত্র ছেলে ঢাকার তেজগাঁও কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। গত মাসের ১২ তারিখে সে ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসে। বাবা, মা মিলে তারা তিনজন সারক্ষনই বাড়িতে থাকেন। বাইরের কোন লোকজনও ওই বাড়িতে বেড়াতে আসেনি বলে জানান স্বজনরা। তাহলে কেন ওই পরিবারের একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হল এই প্রশ্ন সকলের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এদিকে স্কুল পড়–য়া ওই শিশুর পিতা অনেক আগেই মারা গেছেন। মা চৌগাছার একটি বে-সরকারী হাসপাতালে সেবিকার চাকুরী করেন। ৮ নং ওয়ার্ডের একটি বাড়িতে তারা ভাড়া থাকেন। শিশুটির নানা বাড়ির অদুরে সড়ক সংলগ্ন একটি দোকান নিয়ে ওষুধের ব্যবসা করেন। স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুটি বাড়িতেই থাকে। মা হাসপাতাল ও বাড়ি এবং নানা দোকান ও বাড়িতে যাতায়াত। এরমধ্য শিশুটি করোনায় আক্রান্ত সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
তবে আশার বানী শুনিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফুন্নাহার। তিনি জানান, আক্রান্ত দুই রোগীই বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ্য। বুধবার দুপুরে তাদের বাসাতে হাসপাতালের একটি চিকিৎসক টিম যান এবং তাদের দেখা শুনা ও মাস্কসহ প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র দিয়ে এসেছেন। আক্রান্তদেরকে হোম আইসোলোশনে রাখা হয়েছে। পরিবারের বাকি সদস্যদেরকে একই অবস্থায় রাখা হয়েছে। দুই পরিবার থেকে ৮টি নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বুধবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্য হতে আরও ৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য যশোরে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল বলেন,সকালে আমি খবর পাাওয়ার সাথে সাথে ওই মহল্লা দুটিতে যায় এবং আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে অন্য কারো মেলামেশা না করার পরামর্শ দিয়ে আসি। পরবর্তীতি উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ দুটো বাড়ি লকডাউন করার পাশাপাশি সতর্ক চিহৃ হিসেবে লাল পতাকা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, করোনা আক্রান্তদের বাসা লকডাউন করা হয়েছে। ওই মহল্লাসহ পৌরবাসি ও গোটা উপজেলাবাসিকে এই দূর্যোগময় মুহুর্তে বাইরে না, ঘরে থাকার আহবান জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here