বিশেষ প্রতিনিধি : যশোরে এবার নুতন করে ৪ জনের করোনায় পজিটিভ রিপোর্ট আসায় তাদের বাড়িগুলো লডডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আক্রান্তদেরকে নিজনিজ বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওই ৪জনের সাথে সংস্পর্শে এসেছেন এমন ১৯জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। একই সাথে ওই ৪জনের সাথে সম্পৃক্ত ১৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে যশোরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। নুতন করে যশোরে করোনায় শনাক্ত ৪ জনের মধ্যে দুই জন নারী ও দুইজন পুরুষ। নারী দুইজনের মধ্যে একজন স্বাস্থ্য কর্মী ও অপরজন গৃহকর্মী। পুরুষ একজন গার্মেন্টস কর্মী অপরজন স্কুল ছাত্র, তবে তার মা স্বাস্থ্য কর্মী।
স্থানীয়রা জানান, যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠির উত্তরপাড়ায় করোনা শনাক্তের ওই যুবক ঢাকার উত্তরায় একটি গার্মেন্টসে চাকুরি করতেন। ৪ দিন আগে সে ঢাকা থেকে চুড়ামনকাটিতে তার নানা বাড়িতে আসেন। পিতৃহীন এই তরুণ নানাবাড়িতেই বেড়ে উঠেছেন। সেখান থেকে তিনি ঢাকার আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় কাজ করতে চলে যান বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ‘লকডাউনের’ মধ্যে ঢাকা থেকে ফিরে আসায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠান হয়।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, ‘ফ্লু কর্নার’-এ ভর্তি করা হয়েছিল ওই তরুণকে। তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মঙ্গলবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পাঠানো হয়। যবিপ্রবি ল্যাবে বুধবার সকালে যে ১৩টি নমুনা পজেটিভ বলে শনাক্ত হয়, তার মধ্যে একটি এই তরুণের।
চুড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না জানান, বিষয়টি জানার পর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান, সেনাবাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চুড়ামনকাটিতে যান। তারা গ্রামটির উত্তরপাড়া লকডাউন করে দেন। এখন ওই তরুণ বাড়িতেই আছেন।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম জানান, চৌগাছা আক্রান্ত দুই জনের বাড়ি লকডাউন করে দুটি পারবার থেকে ৮ জন সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য যশোর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আক্রান্ত ওই স্কুলছাত্র শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সে শহরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার মা শহরের ডাক্তার আনিছুজ্জামান নাহার ডায়াবেটিক সেন্টারের কর্মী। আক্রান্ত নারী শহরের ২নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার জানান, আক্রান্তদের মধ্যে কিশোরের ডায়রিয়া ও জ্বর আর ওই নারীর জ্বর ও গলাব্যথা ছিল। তারা পরীক্ষা করাতে না চাইলেও তাদের নমুনা জোর করে মঙ্গলবার সিভিল সার্জনে পাঠান হয়। রিপোর্ট পজেটিভ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, রোগীদের বাড়ি লকডাউন করে দ’ুটি পরিবারের ৮ জন সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে’।
ডাক্তার আনিছুজ্জামান নাহার ডায়াবেটিক সেন্টারের কর্মীর নমুনা পজিটিব হলে সেন্টারটি লকডাউন করা হবে কিনা তখন চিন্তা করা হবে বলে জানান।
শার্শার লক্ষণপুর ইউনিয়নের গোড়পাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যারামেডিকেল ডাক্তার ওই নারীর করোনায় পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার সংস্পর্শে এসেছেন এমন ১১জনকে হোম কোয়ারেন্টইনে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০জন চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত। একজন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। তার স্বামীর নমুনা সংগ্রহ করে মঙ্গলবার পাঠানো হয়। তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় নতুন করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ ইউসুফ আলী আরো জানান, ওই নারীর বাড়িটি লডডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে যশোরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, এই জেলায় নতুন করে আক্রান্ত চারজনকেই নিজ নিজ বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই দায়িত্ব পালন করছে একাধিক মেডিকেল টিম। দরকার হলে রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে।