নড়াইল জেলা প্রতিনিধি : নড়াইলের পল্লীতে আত্মগোপনে যান স্ত্রী ও ছেলে ইউএনও নিজেই ঘর থেকে বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর লাশ বের করেন চিতায় উঠান!নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (৯ মে) গভীর রাতে মারা যান তিনি। যদিও তার পাশে ছিলেন না পরিবারের সদস্যরা। ঘরের মধ্যে তার মৃতদেহ রেখে আত্মগোপনে যান স্ত্রী ও ছেলে। এ পরিস্থিতিতে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হুদা নিজেই ঘর থেকে বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীর লাশ বের করেন, চিতায় উঠান এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেন। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় গেল পারিবারিক বন্ধন। উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালিয়ার বড়দিয়া গ্রামের নির্মল রায় চৌধুরীর ছেলে বিশ^জিৎ রায় চৌধুরী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরি করতেন। ঢাকা থেকে কাশিসহ করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দু’দিন আগে বাড়িতে আসেন। এরপর আলাদা রাখা হয় বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীকে। শনিবার রাতে তিনি মারা যান। রোববার সকালে বাড়ির লোকজন তার মৃত্যুর বিষয়টি টের পেলে কেউ কাছে যায়নি। এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফসিয়ার রহমান জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই (বিশ^জিৎ) বাড়িতে পৌঁছান তিনি। এ সময় কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তারা জানতে পারেন বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীর মৃতদেহ ঘরের মধ্যেই পড়ে আছে। পরিবারের লোকজন কেউ কাছে যাচ্ছেন না। অনেক খোঁজাখুজি করেও তার (বিশ্বজিৎ) স্ত্রী ও সন্তানের দেখা পাননি তারা। একপর্যায়ে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুদা মৃত ব্যক্তির ঘরে প্রবেশ করেন। সঙ্গে ছিলেন কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কাজল মল্লিকসহ সাংবাদিক ফসিয়ার রহমান। এ সময় মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর কাঁধে করে বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীর মরদেহ ঘর থেকে বের করেন ইউএনও নাজমুল হুদাসহ ওই সাংবাদিক। এ কাজে সহযোগিতা করেন মৃত বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীর দুরসম্পর্কের এক নাতি ও সৎকারের জন্য ইউএনও’র উদ্যোগে আসা কালিয়ার মন্টু বৈরাগি। ভ্যানযোগে শ্মশানে আনার পর মৃতব্যক্তিকে চিতায়ও তোলেন ইউএনও। সাংবাদিক ফসিয়ার রহমান বলেন, আত্মগোপনে থাকার অনেক পরে মৃত বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীর ছেলে এগিয়ে আসেন। তার বাবাকে দাহ করার সময় ছেলেটি উপস্থিত থাকলেও কোনো আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা ছিলেন না। তার স্ত্রী ও অন্য সন্তানেরও (মেয়ে) দেখা পাওয়া যায়নি। রোববার দুপুরে চোরখালি শ্মশানে বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীকে দাহ করা হয়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুদা বলেন, পরিবারের কেউ এগিয়ে না আসায় নিজে কাঁধে করে মৃত বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীর সৎকারের ব্যবস্থা করেছি। এ কাজে সাংবাদিক ফসিয়ার রহমানসহ আরো তিনজন সহযোগিতা করেন। এছাড়া বিশ^জিৎ রায় চৌধুরীর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।