মালেকুজ্জামান কাকা, যশোর ঃ বন্ধ হয়ে গেলো যশোর শহরের টাউন হল ময়দানের মাছ বাজারটি। করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে গত ২৯ এপ্রিল যশোর জেলা প্রশাসন বড় বাজারের মাছ ও সবজি বাজার দুটিকে স্থানান্তর করে টাউন হল ও ঈদগাহ ময়দানে নিয়ে আসে। কিন্তু ১০ দিনের মাথায় গতকাল টাউন হল ময়দানে মাছ বাজারটি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন ঈদগাহ ময়দানের সবজি ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীদের এ সিদ্ধান্তকে হঠকারী বলে যশোর পৌরসভার মেয়র বলেছেন, আমাদের সাথে আলোচনা না করে কেউ বড় বাজারে দোকান বসাতে পারবেনা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বাজার দুটিকে স্থানান্তর করায় তারা নানা সমস্যায় পড়ছেন। খোলা আকাশের নিচে দোকান বসিয়ে মাছ বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে তারা আগের স্থানে ফিরে যাওয়ার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব দেখা দেওয়ার পর সারাদেশের ন্যায় যশোরে শুধুমাত্র ওষুধের দোকান, কাঁচা বাজার ও মুদি দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় যশোর জেলা প্রশাসন। প্রথমদিকে বড় বাজারের নির্ধারিত স্থানে সবজি ও মাছ বাজার চলতে থাকলেও পরবর্তীতে জেলা ও পৌর প্রশাসন বড় বাজার সংলগ্ন এইচএমএম রোডের ওপর সবজি বাজার ও খালধার রোড মূল সড়কের ওপর মাছ বাজার স্থানান্তর করে। কিন্তু এ বাজার দুটি আবাসিক এলাকায় ও সড়কের দুই পাশে স্থানান্তর হওয়ায় এবং প্রতিনিয়ত সামাজিক দূরত্ব ভেঙে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতির কারণে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে যশোরে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় যশোর পৌরসভা বাজার দুটিকে যশোর টাউন হল ময়দান ও ঈদগাহ ময়দানে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৯ এপ্রিল থেকে ঈদগাহ ও টাউন হল ময়দানে আনুষ্ঠানিক শুরু হয় তরকারি ও মাছের বাজার। কিন্তু ১০ দিনের ব্যবধানে টাউন হল ময়দানের মাছের বাজার বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বড়বাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কৃষ্ণপদ বিশ্বাস বলেন, টাউন হলে উন্মুক্ত ময়দানে মাছ বিক্রি করতে গিয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। মাছ বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট ঘর বা ছাউনি না থাকায় প্রচন্ড গরমে মাছ পচে যাচ্ছে। এতে আমাদের মাছ বিক্রি হচ্ছে না। যে কারণে আমরা মাছ বিক্রি বন্ধ করে পূর্বের স্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলম শেখ বলেন, টাউল হল ময়দানে কোনো বাজার বসার পরিবেশ নেই। প্রথম দিকে বাজারটিতে ক্রেতারা গেলেও এখন আর যেতে চাচ্ছেন না। তিনি বলেন, বাজার স্থানান্তর করা হয়েছে অথচ বড় বাজারে মুরগি ও মাংসের দোকানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকান রয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বড় বাজারে ফের চালু রাখার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা কোনো আন্দোলন করছি না। পরিবেশ না থাকায় আমরা ফের বাজারে ফিরে যেতে চাচ্ছি।
এদিকে টাউন হল ময়দানের মাছ বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঈদগাহ ময়দানের সবজি বাজারও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে যশোর বড়বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা সুশান্ত সাহা বলেন, মাছ বাজারের সাথে সবজি বাজার অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। এখন মাছ বাজার যদি বন্ধ হয়ে তাহলে আমাদের সবজি বাজার নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, সবজি বাজারের জন্য যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রয়োজন তা ঈদগাহ ময়দানে নেই। এখানে আড়ৎদাররা দাঁড়াতে পারেন না বা বসতে পারেন না। ফলে এ বিষয়ে যশোর পৌর ও জেলা প্রশাসনের পুনর্বিবেচনা করা উচিৎ। ব্যবসায়ীদের এ সিদ্ধান্ত হঠকারী দাবি করেছেন যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে সরকার সারাদেশের বড় বাজারগুলো উন্মুক্ত ময়দানে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যবসায়ীদের সম্মতিতে বাজার দুটিকে টাউন হল ও ঈদগাহ ময়দানে নিয়ে আসা হয়। অথচ ব্যবসায়ীরা আমাদের সাথে কথা না বলেই বাজার বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, টাউন হল ময়দানে বাজার বসার কোনো পরিবেশ নেই এমন অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ করেননি। ফলে আমাদের সাথে আলোচনা না করে কেউ বড় বাজারে দোকান বসাতে পারবেনা।