নিজস্ব প্রতিবেদক। শ্রীধাম পুরীতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের রথ তৈরীর স্বতঃস্ফূর্ত কর্ম যজ্ঞ অব্যাহত। মানব দেহ গঠিত ২০৬টি হাড় দিয়ে। পুরীর রথও নির্মিত হয় ২০৬ টিই কাঠ দিয়ে। সেই কাঠের কাঠামোয় প্রাণ দেন রথে অধিষ্ঠিত দেবতা। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝানো হয় মানব দেহও রথের মতোই কাঠামো মাত্র। অন্তরাত্মাই সেই রথের আসল চালক।
পুরীর রথের মোট ৪২ টি চাকা দেখা যায়। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা – প্রত্যেকের আলাদা আলাদা রথ রয়েছে। জগন্নাথের রথের নাম নন্দী ঘোষ বা কপিধ্বজ ৷ এই রথে রয়েছে ১৬ টি চাকা ৷ এই ১৬ টি চাকার একেকটি দশ ইন্দ্রিয় আর ছয় রিপুর প্রতিনিধিত্ব করে। বলরামের রথের নাম তালধ্বজ বা হলধ্বজ ৷ এর চাকার সংখ্যা ১৪৷ এই ১৪ টি চাকায় ধরা থাকে ১৪ টি ভুবনের কথা। আর সুভদ্রার রথ, দর্পদলন বা পদ্মধ্বজের ১২ টি চাকা বোঝায় ১২ মাসই ভজনের সময়।
পুরীর রথটি সম্পূর্ণই কাঠের তৈরি। তবে যে সে কাঠ হলে চলবে না। ফাঁসি ও ধাউসা গাছের কাঠ দিয়েই নির্মাণ করা হয় এই রথ। কথিত আছে প্রতি বছর মহানদীর স্রোতে ভেসে আসে রথ নির্মাণের প্রয়োজনীয় কাঠ। পুরীর কাছে এক স্থানে সেই কাঠগুলি মহানদী থেকে তুলে ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয়। এরপর দসাপাল্লা নামে একটি স্থান থেকে একদল বিশেষ কাঠমিস্ত্রি এসে রথ নির্মাণ করে। দসাপাল্লা আগে একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। এখানকার কাঠের মিস্ত্রিরা অত্যন্ত দক্ষ। রথযাত্রার শুরুর সময় থেকেই দসাপাল্লার কাঠমিস্ত্রিরাই রথ নির্মাণ করেন। রথের ছাউনি তৈরি হয় কাপড় দিয়ে। এতে ১,২০০ মিটার কাপড় লাগে।
রথটি শুধুমাত্র কাঠের তৈরি বলে চলার সময় কাঠের ঘড়-ঘড় শব্দ হয়। কেউ কেউ এই শব্দে বিরক্ত বোধ করলেও এই শব্দ কিন্তু রথযাত্রার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আসলে হিন্দু ধর্মে শব্দের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ঘন্টাধ্বনী থেকে মন্ত্রোচ্চারণ সব শব্দই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বেদে বলা হয়েছে ‘শব্দই ব্রহ্ম’। কাজজেই পুরীর রথের কাঠের চাকার ঘড়ঘড়ে শব্দেরও গুরুত্ব রয়েছে, একে বলা হয় বেদ। অর্থাত এই শব্দ বেদের মতোই সত্য। নবনির্মাণেও অপরিবর্তিত থাকে সকল বৈশিষ্ট রথ থেকে দেবতার বিগ্রহ সবই কাঠ-নির্মিত।