যশোর প্রতিনিধি : যশোর কোতয়ালি থানার পাশে আলোচিত সোনার দোকান প্রিয়াঙ্গন জুয়েলার্সে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় দায়েরকরা মামলার চার্জশিট দিয়ে ডিবি পুলিশ। চার্জশিটে আন্তঃ জেলা চোরচক্রের ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় যশোরের আব্দুল আলিম ও প্রদীপ কুমার রক্ষিততে অব্যহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলো, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পশ্চিম রাউজান গ্রামের আব্দুল আওয়ালের ছেলে রহিম বাদশা, বাকনিয়া উপজেলার বাদশা মিয়া কলোনীর মৃত. সোনা মিয়ার ছেলে সোহেল ওরফে মোটা সোহেল, কুমিল্লা মুরাদ নগরের ইউসুফ নগর গ্রামের তারু মিয়ার ছেলে সাব্বির হোসেন ওরফে উজ্জল হোসেন এবং গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সুমন, মিজানুর রহমানের ছেলে রুবেল মিয়া, নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার মজুবন গ্রামের মৃত নবদ্বীপ বিশ্বাসের নেপাল বিশ্বাস, কুমিল্লার দ্বেবীদার উপজেলার ধলাহাঁস গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ ওরফে আব্দুল, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার নারীবাজার এলাকার গোপাল দেবনাথের ছেলে ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ ও চট্টগ্রামের বকানিয়া উপজেলার কালামিয়া বাজারের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে বাদশা মিয়া ওরফে ছোট বাদশা।
ডিবি পুলিশের এসআই শামিম আহমেদ আদালতে চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন, বেজপাড়া শ্রীধর পুকুরপাড় এলাকার অমিত রায় আনন্দের চৌরাস্তায় থানার পাশে প্রিয়াঙ্গন জুয়েলার্স নামক একটি সোনার দোকান আছে। ২০১৯ সালের ২৭ জুন দুপুরে তিনি খাবারের জন্য বাড়িতে যান। কিছু সময় পর মোবাইল ফোনে জানতে পারেন তার দোকানে চুরি হয়েছে। তিনি দোকানে এসে দেখেন দোকানের সার্টার ও ক্লবসিবল গেট ভাঙ্গা। দোকানের মধ্যে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা চুরি হয়েছে। সংবাদ পেয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় দোকানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ জব্দ করেন।
পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারে, দুপুর ৩টার ৫২ মিনিটের দিকে দোকানের সামনে তিন যুবক একটি হাল্কা প্রিপল ভাজ করতে থাকে। অন্যজন একটি ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। আরো একজন একটি রিকসা নিয়ে দোকানের সামনে দাড়িয়ে থাকে। ত্রিপল ভাজ করার আড়ালে একজন দোকানের চারটি তালাভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে। ভেতরে ঢুকেই ওই যুবক মাথায় একটি কালো রংএর হ্যাট (টুপি) পরে নেয়। তার পরনে ছিল একটি লাল রং এর গেঞ্জি এবং কালো রং এর প্যান্ট। হাতে ছিল একটি ব্যাগ।
ওই যুবক ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে দোকানের সামনে থেকে ত্রিপল নিয়ে অন্যরা সরে যায়। বাইরে থেকে জুয়েলার্সের সার্টার লাগানো থাকায় কারোর কোন বোঝার উপায় ছিল না যে ভেতরে চুরি হচ্ছে। ভেতরে ওই যুবক মুখে মাক্স পড়ে নেয়। ফলে দোকানের ভেতরের সিসি ক্যামেরায় চেহারা বোঝার কোন উপায় নেই। মোবাইল ফোনের টর্চ ব্যবহার করে সোনার অলংকার গুলো ব্যাগের মধ্যে রাখে। ৪টা এক মিনিটের সময় দোকান থেকে বের হয়। বের হওয়ার আগেই আবার সেই ত্রিপল ভাজ করার নাটক সাজিয়ে রাখে দুই যুবক। একজন ছাতা ধরে থাকে। ওই যুবক ব্যাগ নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে দৌড়ে আরএন রোডের দিকে চলে যায়। পুরো নয় মিনিট ধরে চুরি করার সময় ওই যুবক বাইরে তার সহযোগির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। এর পরপরই সামনে জয় স্টোরের মলিক প্রদীপ দোকানের সামনে গিয়ে চিৎকার করতে থাকে। সে সময় লোকজন জড়ো হয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও দোকান মালিক আনন্দ ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখেন দোকানের মধ্যে থাকা সোনার গহনা চুরি হয়ে গেছে। চোরেরা মোট ৩৭ ভরি ১২ আনা সোনার অলংকার ও নগদ আড়াই লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এই ব্যাপারে দোকান মালিক অমিত রায় আনন্দ বাদি হয়ে অজ্ঞাত চোরের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ডিবি পুলিশ দীর্ঘ সময় ধরে নানা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে চারজনকে আটক করে। উদ্ধার করে ৩ ভরি সোনার গহনা ও দেড় লাখ টাকা। এরপর মামলার তদন্ত চালিয়ে চুরির সাথে যুক্ত ৯ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। চার্জশিটে বাদশা মিয়া, ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ ও আব্দুল্লাহকে পালাতক দেখানো হয়েছে।