আম্ফান কেড়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই, ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা তারা

0
459

মেহেদী হাসান, মণিরামপুর ॥ সহায় সম্বল বলতে ছয়কাঠা জমির উপরে টিনের একটি খুপরিতে ১২জনের পরিবার নিয়ে দিনমজুর অমল তরফদারের (৫৫) মাথা গোঁজার ঠাঁই। সম্প্রতি যশোরের মণিরামপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সেই ঠাঁই টুকু কেড়ে নিয়েছে তার। এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটছে পরিবারটির। অমল মণিরামপুরের হেলাঞ্চি গ্রামের তরফদার পাড়ার মৃত অনন্ত তরফদারের ছেলে। তিন ছেলে, স্বামীহারা দুই মেয়ে, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিসহ কষ্টের সংসার অমলের। অমল ও তার তিন ছেলে দিনমজুরি করে সংসার চালান। এক টুকরা ভিটেমাটি ছাড়া মাঠে চাষের কোন জমি নেই। নিত্যসংগ্রাম করে ১২জনের জীবন চললেও তাদের সহযোগীতায় কখনো এগিয়ে আসেননি জনপ্রতিনিধি বা সমাজপতিদের কেউ। করোনাকালীন দুর্যোগে কর্মহীন পরিবারটি পায়নি সরকারি একমুঠো চালও। অমলের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী বলেন, গত ২০ মে রাতভর চলা ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে যায়। তখন থেকে পাশে ভাগ্নে জামাই বিমলের বাড়িতে থাকছি। ভাত জুটাতি পারিনে,তা টিন কিনব কি দিয়ে! কোন রকম ছেড়া টিন জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করছি। ঘর উড়ে গেলি মেম্বর সাধন দাসের কাছে গিলাম। সে বলল,আমারটাও (মেম্বরের ঘর) উড়ে গেছে। হেলাঞ্চি একই পাড়ায় খুপরিতে থাকতেন স্বামী-সন্তান হারা বিধবা কবিতা রানী (৬০)। ক্যান্সারে কবিতার স্বামী খোকন মন্ডলের প্রাণ গেছে চার বছর আগে। বড় ছেলে উজ্জ্বল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ছোট ছেলে নিতাই বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ নেয় না। ভিক্ষা করে যা পান তাই এনে খুপরিতে মাথা গোঁজতেন তিনি। আম্ফান তার আশ্রয়টুকুও কেড়েছে। একই ঝড় মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়েছে খেদাপাড়া ইউপির রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত মানিক মল্লিকের প্রতিবন্ধী ছেলে জীবন মল্লিকের। আম্ফানে ঘরের চাল উড়ে যাওয়ায় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বারান্দায় দিন কাটছে তার। আম্ফানে ঘরের চাল উড়ে মানবেতর জীবন কাটছে রোহিতা ইউপির পট্টি গ্রামের ভ্যান চালক জামাল উদ্দিন, সেলুন কর্মী এনামুল, দিনমজুর শরিফুল ইসলাম ও প্রতিবন্ধী আবুল কাশেমের। শুক্রবার (২৯ মে) সরেজমিন এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো আম্ফানের ক্ষতি কাটিয়ে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। স্থানীয় রোহিতা ইউপির এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমার ওয়ার্ডে অনেকের ঘর উড়েছে। তারমধ্যে শরিফুল, কাশেম, জামাল ও এনামুল এখনো ঘর ঠিক করতে পারেনি। সরকারি সহায়তা এদের খুবই দরকার। মণিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার বলেন, আম্ফানে প্রায় ১৪ হাজার ৮০০ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসে জমা দিয়েছি। মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, ইতিমধ্যে ডিসি স্যারের পক্ষ থেকে মণিরামপুরে ৩০০ বান্ডিল টিন ও দশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছে। ঝড়ে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারা আগে সহায়তা পাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here