কাঁকুড়িয়া বাওড়কে কেন্দ্র করে হত্যার অভিযোগ পরিবারের/ চৌগাছায় বিএনপি কর্মীর বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

0
467

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি ॥ যশোরের চৌগাছায় এক বিএনপি কর্মী অপহরনের দুই দিন পর তার বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। নির্মম হত্যার শিকার বিপুল হোসেন (৪০) উপজেলার বড় কাঁকুড়িয়া গ্রামের মৃত সামছুল হকের ছেলে। শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বেড়গোবিন্দপুর বাওড় সংলগ্ন মুলিখালী নামক স্থানে পাকা সড়কের পাশে ঝোপের মধ্য থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে পাঠিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ হত্যার সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। কাঁকুড়িয়া বাওড়কে কেন্দ্র করেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
থানা পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, গত ৩ জুন বুধবার সকালে চৌগাছা-যশোর সড়কের আখ সেন্টার পাড়ার ভ্যান চালক রেজাউল ইসলাম ওরফে লালনের বকাটে ছেলে রফিকুল ইসলাম গরু কেনার নাম করে বিপুলের বাড়ি থেকে ডেকে আনে। বেলা ১১ টার দিকে বিপুলকে তার মোটরসাইকেলে তুলে কাঁকুড়িয়া থেকে চৌগাছর উদ্যোশে রওনা হয়। এরপর হতে বিপুল হোসেন নিখোঁজ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার কোন খোঁজ না পেয়ে বিপুলের স্বজনরা এদিন চৌগাছা থানায় একটি ডায়েরী করেন। থানায় ডায়েরীর এক দিনের মাথায় শুক্রবার বেড়গোবিন্দপুর বাওড় সংলগ্ন মুলিখালী থেকে বিএনপি কর্মী বিপুল হোসেনের বস্তা বন্দি মরাদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিপুল হোসেনের ছোট ভাই, লিটন হোসেন জানান, স্থানীয় কাঁকুড়িয়া বাওড়কে কেন্দ্র করে হিজলী গ্রামের জাকিরের সাথে ভাই বিপুলের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় জাকির হাঁতুড়ি দিয়ে তার ভাইকে মারতে আসে। শুধু তাই না জাকির তাকে ফেনসিডিল দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়, এতে যদি সে সফল না হয় তাহলে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অবশেষে সে আমার ভাইকে প্রানে মেরেই ফেলে, এ কথা বলে সে শুধুই বিলাপ করতে থাকেন। এদিকে গরু কেনার নাম করে বিপুল হোসেনকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে তুলে আনা সেই রফিকুল ইসলামের বাড়ি চৌগাছার আখ সেন্টার পাড়ায় যেয়ে দেখা যায়, রফিকুলের বাড়িতে তালা ঝুলছে। হত্যা খবর প্রচার হওয়ার সাথে সাথে বাড়ির সকলেই ঘরে তালা ঝুলিয়ে চলে যায় আত্মগোপনে। এ সময় কথা হয় প্রতিবেশি আল আমিন. কুলসুম বেগম, তারাবানুর সাথে। তারা জানান, এ বাড়িতে রফিকুলের বাবা, মা ও দুই ভাই বসবাস করেন। বাবা ভ্যান চালায় আর দুই ভাই স্থানীয় ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করে। এই বাড়িতে রফিকুল খুব কমই থাকেন, সে থাকে হিজলী তার শ^শুর বাড়িতে। ছোট ভাই দুটো ইট ভটায় থাকলেও মা ভয়ে বাড়ি থেকে হয়ত অন্যত্র চলে গেছেন। এ বিষয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ রিফাত খান রাজীব জানান, শুক্রবার সকালে থানা পুলিশ জানতে পারে বস্তাবন্দি অবস্থায় মুলিখালী নামক স্থানে একটি লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। হত্যাকান্ডের বিষয়ে ইতোমধ্যে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। একাধিক সূত্র জানায়, কাঁকুড়িয়া বাওড়কে কেন্দ্র করে বিএনপি কর্মী বিপুল হোসেনকে হত্যা করা হতে পারে। বিপুল হোসেন স্থানীয় জেলেদের সহযোগীতা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ওই বাওড়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে তাকে আর ওই বাওড়ে নামতে দেয়নি একটি পক্ষ। ওই পক্ষ তাকে জোর করে বাওড় থেকে বের করে দেয়, এমনকি বাওড়ে ব্যয় করা অর্থ পর্যন্ত তাকে ফেরতও দেয়া হয়নি। ধারনা করা হচ্ছে বাওড়কে কেন্দ্র করে বিপুল হোসেনকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্বরুপদাহ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার শহিদুল ইসলাম বলেন, বিপুল হোসেন আমার দলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন, সে ছিল একজন প্রতিবাদি যুবক। তাকে যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে তাদের সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here