কোটিপতির প্রাইভেট কারে পিষ্ট দুই মাছ ব্যবসায়ির পুঁজি

0
392

মালেকুজ্জামান কাকা, যশোর : কোটিপতির প্রাইভেট কারের ধাক্কায় দুইজন ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ির ব্যবসা বিনাশ হয়েছে। তাদের পুঁজি শেষ হয়েছে। ঘটনাটি যশোরে। বিভিন্ন পর্যায়ে নালিশ করেও কোন লাভ হয়নি। কোন ক্ষতিপূরন দিতে রাজি নয় ঐ কোটিপতি। তার সাফ কথা ‘যা করার করতে পারো কিন্ত আমি একটি টাকা দেবো না’।
গত ২ জুনের ঘটনা এটি। চাঁচড়ার ভাই ভাই মৎস্য হ্যাচারী ও নার্সারী থেকে লক্ষাধিক টাকার পাবদা পোনা নিয়ে নসিমনে যাত্রা করেন খুদে পোনা মাছ ব্যবসায়ি শহিদুল ইসলাম, আব্দুর রউফ ও নসিমন চালক হাফিজুর। মনিরামপুর উপজেলার ষোলখাদা শ্মসান ঘাট এলাকায় পৌছানোর সাথে সাথে সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার নসিমনকে ধাক্কা দেয়। ফলে নসিমন উল্টে পড়ে তাতে থাকা সকল পাবদা পোনা বিনষ্ট হয়। এসময় আহত হন নসিমন চালক ও দুই মাছ ব্যবসায়ি। সকাল নয়টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। প্রাইভেট কারের নাম্বার ছিল ঢাকা মেট্টো খ- ১১/৬৮৭২। প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন মনিরামপুর উপজেলার ডুমুরখালি দশআনির মৃত ফজলে কবিরের পুত্র জালাল উদ্দীন। তিনি প্রাইভেট কার না থামিয়ে বীরদর্পে গাড়ি চালিয়ে চলে যান। ষোলখাদা প্রাইমারি স্কুলের সভাপতি সিদ্দিক হোসেন ও মদনপুর ডিগ্রী কলেজের সভাপতি বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, চাঁচড়া এলাকার নওয়াব আলী মোল্যার পুত্র শহিদুল ইসলাম ও আব্দুস সাত্তারের পুত্র আব্দুর রউফ অতি কষ্টে এক লাখ টাকা ধারদেনা করে যোগাড় করে পাবদা পোনা ক্রয় করেন। এরা ভাই ভাই মৎস্য হ্যাচারী ও নার্সারি তথা খলিলুর রহমানের কাছ থেকে পাবদা পোনা নিয়ে মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউপির মুক্তারপুর গোয়ালবাড়ি গ্রামের কবির হোসেনের ফার্মে যাচ্ছিলেন। পথি মধ্যে পোনা বিনষ্ট হওয়ায় এবং ডেলিভারি না হওয়ায় তারা কোন টাকা পাননি। মুক্তারপুর দশআনির মেম্বও ইব্রাহিম হোসেন বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতা করেন। তবে ঘটনার নায়ক জালাল উদ্দীন ক্ষতিপূরনের এক টাকাও দিতে ইচ্ছুক নয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় প্রাইভেট কারের দোষেই দূর্ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া জালাল উদ্দীনের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তার চার পুত্র বহু অপকর্মের হোতা ও বহু মামলার আসামি হিসেবে দেশ ছেড়ে বর্তমানে বিদেশে থাকে। তাদের পাঠানো টাকায় নব্য কোটিপতি হয়েছেন জালাল উদ্দীন। এ কারনেই গর্বে তার পা মাটিতে পড়েনা। তিনি এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়ালেও তার কুকর্মের প্রতিবাদ কেউ করতে পারেনা। সকলেই তার অত্যাচার নিরবে সহ্য করে। তার পুত্ররা দেশে থাকতে পিতার মতই চাঁদাবাজি, হুমকি ধামকিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিলো। প্রশাসনের ভয়েই তারা দেশ ছেড়ে এখন বিদেশে। খুদে পোনা মাছ ব্যবসায়ি শহিদুল ইসলাম ও আব্দুর রউফ জানান, তাদের লক্ষাধিক টাকার পাবদা পোনা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হওয়ায় তারা একেবারে পথে বসেছে। এখন না খেয়ে মরা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই। কেননা ধার দেনা করে তারা এই টাকা যোগাড় করেছিলেন। ভাই ভাই মৎস্য নার্সারী ও হ্যাচারীর মালিক খলিলুর রহমান বলেন, তার ফার্ম থেকে পাবদা পোনা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঐ দুই জন মাছ ব্যবসায়ি। তিনি দূর্ঘটনার কথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যান এবং প্রতিকারের উদ্যেগ নেন। কিন্ত ঘটনার নায়ক জালাল উদ্দীন কারো কথা শুনতে রাজি নয়। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ধার দেনা করে। শহিদুল ও রউফ পাবদা পোনা ক্রয় করে মুক্তারপুর গোয়ালবাড়ির কবিরের ফার্মে ডেলিভারি দিতে যাচ্ছিলো। দূর্ঘটনায় তাদের সব আশা ধূলিস্মাৎ হয়েছে। এ কারনে বিচার না পেয়ে তারা স্বর্বস্বান্ত হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর কান্না কাটি করছেন। তাদের সুবিচার করার যেন কোন আশাই নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here