মোংলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ির ঘের মালিকরা এখন দিশেহারা

0
399

মোংলা প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যাওয়া মোংলার প্রায় দুই হাজার চিংড়ি ঘের মালিক এখন দিশেহারা। ঘূর্ণিঝড়ে এসব মালিকদের অন্তত দু’কোটি টাকার চিংড়ি ভেসে গেছে। এতে পথে বসার অবস্থায় প্রান্তিক চিংড়ি চাষী ও রফতানীকারকদের। সংকট কাটিয়ে উঠতে এখন পর্যন্ত সরকারি তেমন কোন সহযোগিতা তারা পাননি।
লোনা পানি অধ্যুষিত সুন্দরবন উপকূলীয় মোংলাসহ আশপাশের এলাকায় বছরের অধিকাংশ সময়ই বাগদা চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে। অবশ্য খুব স্বল্প পরিসরে গলদা চিংড়ির চাষও সাম্প্রতিককালে শুরু হয়েছে। লবণ আবহাওয়ার কারণে এখানে ধান ও অন্যান্য ফসল ভাল উৎপাদন না হওয়ায় স্থানীয়রা সাধারণত চিংড়ি চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অন্যান্য বারের ন্যায় এবারে বাগদা চাষের মৌসুমের শুরুতেই প্রান্তিক চাষীরা হোচট খেতে শুরু করেন। লক ডাউনে হ্যাচারীগুলো বন্ধ থাকায় রেনু পোনার সংকট দেখা দেয় চরমে। এর পরও যে পরিমাণ চিংড়ি উৎপাদন হয় তা আবার করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বিদেশে রফতানীতে ব্যাপক ধ্বস নামাতে শুরু করে। এ অবস্থায় বাগদা চিংড়ির দাম কমতে থাকে আশংকাজনকভাবে। করোনার চলমান পরিস্থিতীতে চিংড়ি মাছের বাজার মুল্য দাড়িয়েছে চার ভাগের এক ভাগ। খামারে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়। চিংড়ির নায্যমুল্য না পেয়ে প্রান্তিক চাষীরা সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে ঠিক তখনই তাদের উপর নেমে আসে মরার উপর খারার ঘাঁ অবস্থা। সদ্য আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে মোংলার বিভিন্ন এলাকার ভেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে এখানকার ১৮৬৫ টি ঘের তলিয়ে ভেসে গেছে অন্তত দু’কোটি টাকার চিংড়ি মাছ। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক চাষীরা। চাষীরা দ্রুত সরকারী সহযোগীতা বা প্রনোদনার দাবি জানিয়েছেন।
মোংলা উপজেলায় ৮ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জলাশয়ের মধ্যে ৩১৫ হেক্টর জমিতে ঘেরের মাধ্যমে চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে সরকারী নিবন্ধিত ঘেরের সংখ্যা ৫ হাজার ৬০১টি। ৫ হাজার ৮৭৩ জন চাষী চিংড়ি চাষের সাথে সরাসরি জড়িত। বেসরকারী হিসেবে এ ঘের ও চাষীর সংখ্যা প্রায় দশ হাজার করে হবে। প্রতি বছর এখান থেকে গড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন হলেও এবার ঘূর্ণিঝড় আর করোনার কারণে এ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসার আশংকা করছেন স্থানীয় মৎস্য বিভাগ। মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ জেড এম তৌহিদুর রহমান বলেন, করোনার কারণে এমনিতেই চিংড়ি চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত। এর উপর আবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জলোচ্ছ্বাসে এখানকার বিভিন্ন এলাকার ঘের ভেসে চিংড়ি বের হয়ে গেছে। এতে প্রায় এখানে দু’কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষীদের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এসব চাষীদের সরকারী প্রণোদনা বা সহযোগীতার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, চিংড়ি শিল্প ধ্বংস হলে বেকার হয়ে পড়বে কয়েক লাখ মানুষ। পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে প্রান্তিক চাষীদের। আর ব্যাংক ঋণের বোঝা নিয়ে দেউলিয়া হবেন রফতানীকারকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here