চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি ॥ যশোরের চৌগাছায় এক আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ অত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে এক ব্যক্তি টাকা না পেয়ে দুদুকে অভিযোগ করেন। তারই প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বৃহস্পতিবার ঘটনাটি তদন্ত করতে যান। এ সময় ভুক্তভোগী অসংখ্য নারী পুরুষ ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ করেন বলে জানান স্থানীয়রা। তদন্তের ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান ও তদন্তকারী ওই কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের (হাকিমপুর) নির্বাচিত মেম্বর আক্তারুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তিনি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের গরীব অসহায় প্রকৃতির মানুষদেরকে নানা প্রলোভন যেমন বয়স্ক ভাতার কার্ড, বিধাব ভাতা, টিআর, কাবিখার শ্রমিকে নাম অন্তভূক্ত করা, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন, মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড দেয়ার নাম করে সর্বনিন্ম আড়াই হাজার আর সর্বোচ্চ ১০ হাজার হাজার টাকা গ্রহন করেছেন। কিন্তু মাসের পর মাস পার হলেও ভুক্তভোগীরা ওই নেতার নিকট থেকে কোন উপকার এমনকি জমা দেয়া টাকা ফেরত পাইনি। গত দুই মাস আগে ইউনিয়নের স্বরুপপুর গ্রামের মাহাবুর রহমানের ছেলে মকলেছুর রহমানের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দেয়ার নাম করে আ’লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান মিলন আড়াই হাজার টাকা নেয়। টাকা নেয়ার পর ওই নেতা তা সংশোধন করেননি এমনকি টাকা ফেরত চাইলেও দিতে টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায় ভুক্তভোগী মকলেছ যশোর দুদুক অফিসে একটি অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য দুদুক অফিস থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি চিঠি আসে। তারই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাহী অফিসার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র পালকে প্রধান করে সমাজসেবা কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে পাঠান। সংশ্লিষ্ঠ ইউপি চেয়াম্যানের উপস্থিতিতে সেখানে ঘটনার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলতে থাকে। এ খবর প্রচার হলে মুহুর্তের মধ্যে ইউনিয়ন ভবনের সামনে ভুক্তভোগী নারী পুরুষ উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তার আশ^াসে তারা শান্ত হন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দুলালপুর গ্রামের বিধবা আনোয়ার বেগম জানান, বিধবা ভাতার কার্ড দেয়ার নাম করে মিলন মেম্বর তার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে, অখচ আজও সে আমার কার্ড করে দেয়নি, টাকাও দেয়নি। বেড় তাহেরপুর গ্রামের মৃত মালেকের স্ত্রী মেঝে বেগমকে বিধবার কার্ড করে দেয়ার নাম করে নিয়েছে ৪ হাজার টাকা, একই গ্রামের মাজেদের স্ত্রীর নিকট থেকে নিয়েছে ৪ হাজার টাকা, বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার নাম করে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে স্বরুপপুর ঋষিপল্লীর দুলাল দাসের স্ত্রী নিরালা দাসের কাছ থেকে। ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড করে দেয়ার কথা বলে তাহেরপুর গ্রামের কাটু মল্লিকের ছেলের কাছ থেকে নেয়া হয়ে ৬ হাজার টাকা, বেড় গ্রামের নাচি বেগমের বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়ার নাম করে নেয়া হয়েছে ৪ হাজার টাকা, টিআর, কাবিখার কাজের শ্রমিকের তালিকায় নাম অন্তভূক্তির কথা বলে মাঠ হাকিমপুরের ঋষিপল্লীর দেবেন দাসের স্ত্রীর নিকট থেকে নেয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এ ধরনের গরীব অসহায় অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা সে আত্মসাত করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আ’লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামান মিলনের ব্যবহৃত ০১৭৩৯৯১৪৯১১ বারবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, অর্থ আত্মসাতের বিষয় নিয়ে একটি তদন্ত টিম আমার কার্যালয়ে আসেন এবং তারা সব কিছু নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় ইউপি ভবনের সামনে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে বিক্ষোভ হতে থাকে, পরবর্তীতে আমাদের আশ^াসে তারা শান্ত হন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে আমি হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে উল্লেখিত বিষয়ে তদন্ত করতে যাই। সেখানে সবার সাথেই কথা বলার চেষ্টা করেছি, রিপোর্ট তৈরীর পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে।