নড়াইলে ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহার

0
327

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি : করোনা সচেতনতায় আমরা যা ব্যবহার করছি তা নিয়ে কি আমরা ভাবছি ! বিশ্বে বর্তমান সময়ে মানুষের অন্যতম চিন্তার বিষয় কোভিড-১৯। যা থেকে উত্তোরণের পথ খুজে মরিয়া সকলেই। খাওয়া বা পান করার ক্ষেত্রে সবাই সচেতন হচ্ছে। কিন্তু কিছু বিষয় আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে তা আমরা লক্ষ্য করছি না । বৈশ্বিক মহামারির এই বিরুপ আচরণে ওয়ান টাইম সকল কিছুর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘরের বাইরে খাওয়ার জন্য ওয়ানটাইম প্লেট, গ্লাস, কাপ ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমানে। কিন্তু এই প্লাষ্টিকের ওয়ানটাইম পন্যগুলি ব্যবহারের ফলে আমাদের যে সমস্যাগুলি হচ্ছে তা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, মটির উর্বরতা নষ্ট সহ প্রাকৃতিক নানা সমস্যা আমাদের সামনে অপক্ষো করছে। বাংলাদেশে প্লাষ্টিক শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে। সেখান থেকে প্লাষ্টিক ব্যবহার দিন দিন এত বৃদ্ধি পায় যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহায্য জিনিস পত্রের একটি বড় অংশ হয়ে ওঠে। বর্তমান সময়ে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় যা আরও বড় প্রভাব ফেলছে। চায়ের দোকানে প্লাষ্টিকের ওয়ান টাইম কাপ ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন ফাস্টফুড ও রেস্তরার ভ্রাম্যমান খাবারের জন্য প্লাষ্টিকের প্যাকেট ব্যবহার হচ্ছে। এই সব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের তেমন কোন পরিকল্পনা না থাকায় হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে আগামীর পরিবেশ। শূধূ পরিবেশ বা আমাদের সমাজ নয়। এতে করে বড় হুমকিতে আছে জলাশয় গুলি। জলাশয়ের প্রাণি, মাছ থেকে শুরু করে পানির স্বাভাবিক গুণাগুন নষ্ট করে দিচ্ছে, যা মাছের প্রজনন ও বংশবিস্তারে ব্যবপক ক্ষতি সাধন করছে।
ব্যবহারের জন্য সহজ লভ্য ও কমদামে পাওয়ায় ওয়ান টাইম প্লাষ্টিকের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৩গুন। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ৩০০ শতাংশ প্লাষ্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে এই ওয়ান টাইম পণ্যের ব্যবহার ব্যপকতর হওয়াতে। বিশেষ করে চায়ের দোকানগুলিতে ওয়ান টাইম কাপ চলছে বেশি। এবার আসা যাক স্বাস্থ্য ঝুকির বিষয়ে এগুলি যত্রতত্র যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে সেখান থেকে কিছু অসাধু লোক সেগুলিকে নিয়ে আবার নতুন করে ব্যবহার করছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সারাদিন চায়ের দোকানে যে কাপগুলি ব্যবহার করা হয় সেগুলি রাতে নিয়ে নতুন করে ওয়াশ করে পরের দিন ব্যবহার হচ্ছে। যে কাপ গুলি নষ্ট করা হচ্ছে না বা সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে না। যেহেতু সচেতনতার অভাবে অনেক মানুষই এগুলি ব্যবহার করার পর নষ্ট করছে না। তাই পরের দিন হয়ত আরেক জনের ব্যবহার করা কাপে চা পান করছেন নিজের অজান্তেই। এক পর্যায়ে পরিবেশের মাধ্যমে মাটিতে মিশে যাওয়াতে আমাদের খাদ্যে প্লাষ্টিকের ক্ষতিকারক উপাদান গুলি জায়গা করে নিচ্ছে। মানব শরীরের থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য প্লাষ্টিক দুষণকে বিশেষভাবে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই বর্জ্য গুলি নিস্কাসন করার ব্যবস্থা যেমন থাকা দরকার তেমনই সাধারণ মানুষের সচেতনাও বৃদ্ধি করাও একান্ত জরুরী।
পরিবেশ বিপর্যয়- প্লাষ্টিক হল এমন একটি উপাদান; যা সিনথেটিক বা অর্ধসিনথেটিক জৈব যৌগের তৈরী। এটি ব্যবহারের পর সেটিকে সঠিক জায়গায় ফেলে নষ্ট না করে সরাসরি প্রকৃতিতে ফেলায় দূষিত হচ্ছে মাটি, পানি ও বায়ু। সেসঙ্গে এটি মাটির স্বাভাবিক চক্রায়ণ প্রাক্রিয়ায় বাধা প্রদান করে। ভূগর্ভস্থ পানি চলাচলে বাধা প্রদান করে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা, প্রশাসন ও ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে একসঙ্গে প্লাষ্টিকের উৎপাদন, বাণিজ্য ও ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এই করোনা মহামারি থেকে কিছু রক্ষা পেতে প্লাষ্টিক বর্জ্য যেন মহামারী আকার ধারন করতে না পারে সেজন্য এখন থেকেই দূষণ নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়তে পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here