চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হাকিমপুর ইউনিয়নের ৪নং হাকিমপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামানের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে এই তদন্তের অংশ হিসেবে গণশুনানি করেছেন তদন্তের দায়িত্বে থাকা চৌগাছার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র পাল।
এরই মধ্যে ২১ জুন (রোববার) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে ৩১ জন নারী-পুরুষ তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সহায়তার কার্ড ও কাজ দেয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে একটি গণ অভিযোগ দিয়েছেন। গণঅভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট জমা দিতে আসা নারী ও পুরুষরা এসময় কথা বলেন স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে। এসময় ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের স্বপ্না বলেন তাকে চালের কার্ড (ভিজিডি) করে দেয়ার নামে ৪ হাজার ৫শ টাকা নিয়েছে মিলন মেম্বার, জোসনা রাণি বলেন তার কাছ থেকে চালের কার্ডের (ভিজিডি) নামে ৪ হাজার, যাত্রাপুরের চম্পার কাছ থেকে রাস্তার কাজের নামে ৩ হাজার, হাকিমপুর গ্রামের সাজ্জাদ বলেন তার নিকট থেকে মাটিকাটা (এলজিইডির সড়ক মেরামত প্রকল্প) কাজ দেয়ার নামে ১৭ হাজার, একই গ্রামের আনোয়ারা বলেন তার নিকট থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতার নামে ২ হাজার ৫শ টাকা নিয়েছেন মেম্বার। বেড় তাহেরপুর গ্রামের জরিনা বলেন তার কাছ থেকে বিধবা কার্ডের নামে ৪ হাজার টাকা, মাঠ হাকিমপুর গ্রামের বিন্দু রাণি বলেন তার কাছ থেকে বিধবা কার্ডের নামে ১০ হাজার, তাহেরপুর গ্রামের নাছিমা বলেন তার কাছ থেকে চালের কার্ডের (ভিজিডি) নামে ৪ হাজার, তাহেরপুর গ্রামের ছালেহা বলেন তার কাছ থেকে চালের কার্ডের (ভিজিডি) নামে ৩ হাজার, সিতা বলেন তার কাছ থেকে চালের কার্ডের (ভিজিডি) নামে ৪ হাজার টাকা নিয়েছেন মেম্বার। মাঠ হাকিমপুর গ্রামের ঝর্ণা বলেন তার কাছ থেকে রাস্তার কাজের (এলজিইডির সড়ক মেরামত প্রকল্পে) নামে ১২ হাজার, মঞ্জুরী বলেন কাছ থেকে রাস্তার কাজ দেয়ার নামে ৫ হাজার এবং তার শ্বাশুড়ির বিধবা ভাতা বা চালের কার্ড করে দেয়ার নামে ৪ হাজার, মাঠ হাকিমপুরের কবিতা রাণি বলেন তার শ্বশুরকে প্রতিবন্ধী ভাতার নামে ৭ হাজার ৫শ, পান্না বলেন তার নিকট থেকে রাস্তার কাজের নামে ১০ হাজার, টুম্পা বলেন তার কাছ থেকে রাস্তার কাজের নামে ১০ হাজার, রেখা বলেন তার শ্বাশুড়ির বিধবা ভাতার নামে ৩ হাজার, মমতা বলেন কাছ থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতার নামে ৫ হাজার এবং কৃষ্ণা বলেন তার কাছ থেকে টিউবঅয়েল দেয়ার নামে ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন। উপস্থিত সকলের অভিযোগ মিলন মেম্বার নিজে তাদের বাড়িতে গিয়ে এই টাকা নিয়েছেন। কারো কাছ থেকে ১ বছর, কারো ২ বছর এমনকি ৩ বছর আগেও এই টাকা নিয়েছেন মেম্বার মিলন। অভিযোগকারীদের কথা মেম্বার আমাদের টাকাও ফেরৎ দিচ্ছেন না আবার কার্ড বা কাজও করে দিচ্ছেন না। তার কাছে গেলেই বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকী দিচ্ছেন। আবার বলছেন তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে। এছাড়াও লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন জামেনা, রেখা, আরতী রাণি, ফুলঝুরি, রাণি, আরতী, মায়া, আজিজুর, নারান ও বালা রাণি, পবিত্রা, হাসেম। এদের মধ্যে নারানের কাছ থেকে বয়স্ক ভাতার জন্য ২ হাজার, বালার বয়স্ক ভাতার জন্য ২ হাজার, আজিজুরের প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ৩ হাজার, মায়ার বিধবা ভাতার জন্য ৩ হাজার, রেখার রাস্তার কাজের নামে ১০ হাজার, রাণির চালের কার্ডের জন্য ৩ হাজার, পবিত্রার কাছ থেকে ৫ হাজার, হাসেমের কাছ থেকে ৩ হাজার, ফুলঝুরির বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য ৩ হাজার টাকা করে নিয়েছেন মেম্বার মিলন।
লিখিত অভিযোগে তারা জানিয়েছেন আমরা হাকিমপুর ইউনিয়নের ৪নং হাকিমপুর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামান মিলন একইসাথে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি আমাদের কাছ থেকে চাউলের কার্ড, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, এলজিইডির সড়ক মেরামতের কাজ এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এখন আমরা কার্ড অথবা টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে আমাদের হুমকি দেয় এবং বলে আমি হাকিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রশাসন আমার হাতের মুঠোয়। এছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়কে হুমকি দিয়ে বলে টাকা চাইলে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেয়া হবে। এসব কর্মকান্ডের সাথে তার ভাই পলা পেশী শক্তি দেখিয়ে মানুষজনকে হুমকি দিচ্ছে। আমরা এতদিন তাদের ভয়ে কোন কিছু বলতে পারি নি। আমরা টেলিভিশন ও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি যে, দেশ নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বলেছেন। তাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণ অভিযোগ করিলাম।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন ওই গ্রামের কিছু লোক একটি অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকে হওয়া একটি অভিযোগ সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদন্ত করছেন। আজকের অভিযোগটিও তার কাছে (এসিল্যান্ড) জমা দিতে বলা হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, আমি ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকে করা একটি অভিযোগের তদন্ত করছি। তদন্ত চলমান রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এবিষয়ে একটি গণ শুনানিও করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো শুনানি করা হবে। রোববারের অভিযোগটির বিষয়ে তিনি বলেন এমন একটি অভিযোগের কথা শুনেছি। সেটি আমার কাছে এলে তদন্ত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট জমা দেব। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামান মিলনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়েও বন্ধ পাওয়া গেছে।