প্রণব দাস : বৈশ্বিক মহামাররি করোনাকাল বিবেচনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যশোরে সল্প পরিসরে উদযাপিত হয়েছে বিশ^ বাবা দিবস। ‘আজি শুভ দিনে পিতার ভূবনে অমৃত সদনে চলো যাই’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যশোরে পঞ্চম বারের মত দিবস উদযাপন করা হয়। বিশ^ বাবা দিবস উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে রোববার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে শ্রমজীবী ৫ বাবাকে সম্মাননা জানানোসহ স্মারক উপহার প্রদান করা হয়। যারা তাদের স্বল্প আয়ের মধ্য দিয়ে একাধিক সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলেছেন এবং চিকিৎসক, শিক্ষকসহ নানা পেশায় অধিষ্ঠিত করেছেন।
সম্মাননাপ্রাপ্ত এ বাবারা হলেন, যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার ঝাঁল-মুড়ি বিক্রেতা স্বপন শেখ, বেজপাড়া শ্রীধর পুকুর পাড় এলাকার স্বর্ণ কারিগর বিষ্ণু দাস, সদর উপজেলার দাইতলা গ্রামের নছিমন চালক কবির হোসেন, বেজপাড়া বনানী রোডের ফল বিক্রেতা অজিত কুমার পাল এবং রেলগেট পশ্চিমপাড়ার সফিক ভুইঁয়া। অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্য প্রয়াত একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মহান মুক্তিুদ্ধের সংগঠক উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি কামাল লোহানীসহ করোনাকালে (বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, ডাক্তার, পুলিশ, নার্স) যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের শোকজ্ঞাপন করে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই এর পুলিশ সুপার রেশমা শারমীন। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রবীণ রাজনীতিক আমিরুল ইসলাম রন্টুর অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত থাকায় এতে সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যশোর জেলা শাখার সভাপতি হারুণ অর রশীদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ^ বাবা দিবস উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব প্রণব কুমার দাস। সঞ্চালনা করেন যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের (জেইউজে) সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন।
উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহামুদ হাসান বুলু, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারু, সাংস্কৃতিক নেতা অধ্যাপক সুকুমার দাস, দিপংকর দাস রতন, জেইউজে’র সভাপতি সাজেদ রহমান বকুল জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চণা বিশ্বাস ইভা, চারুতীর্থের সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, জেলা আইডিবি’র সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল, বিবর্তন যশোরের সহসভাপতি দীপংকর বিশ্বাস, স্পন্দন যশোরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সপ্তসুরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, স্বচ্ছ আর্ট স্কুলের পরিচালক চিত্রকর কাজী ইসরাত সাহেদ টিপ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রেশমা শারমীন তার বক্তব্যে বলেন, বাবা-মা চিরন্তন। তাই বাবা- মাকে দিবসে স্মরণ করার বিষয় নয়। তাদের সারাবছরই খেয়াল রাখতে হবে। তবে বর্তমান সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে অনেকে বাবা-মার কাছে ভালোমন্দ জীজ্ঞেস করাটাই ভুলে গেছেন অনেকে। এ করোনাকালে সে অবক্ষয় আরো প্রকট হয়েছে। যা কখন্ও কাম্য হতে পারে না। করোনাকালের এ দুঃসময়ে বাবা দিবস পালন ও বাবার অবদান সন্তানদের স্মরণ করিয়ে দেয়া একটি ভালো উদ্যোগ। এমন অনুষ্ঠানে বাবাদের সম্মাননা জানাতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রাপ্ত বাবারা জানান, বিনা স্বার্থে সন্তানদের লালন-পালন করেছেন। বাবা হিসেবে এমন সম্মাননা পেয়ে সম্মানিত বোধ করছেন। একইসাথে সকল বাবা-মাকে তাদের সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে আহবান জানিয়েছেন তারা। আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব প্রণব কুমার দাস বলেন, করোনাকালে বিধিনিষেধ থাকলেও সন্তানদের প্রতি পিতা-মাতার যে অবদান তা স্মরণ করিয়ে দিতে ছোট পরিসরে এ সম্মাননার আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যশা সন্তানরা পিতা-মাতাকে আমৃত্যু আগলে রাখবে যেমন তারা শিশুকালে আমাদের আগলে রেখেছেন। তারা সন্তানের জন্য এমন এক ভালোবাসার ব্যাংক ছিলেন। যেখানে সুদ বিহীন নিখাদ ভালোবাসা পেয়েছেন সন্তানরা।