চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি ॥ যশোরের চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে ফঁসে উঠেছে ইউনিয়নবাসি। গরীব অসহায় মানুষের ঘাম ঝরানো টাকা আত্মসাৎকারী এই নেতার শাস্তির দাবিতে ভুক্তভোগীরা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। রবিবার দুপুরে প্রায় অর্ধশত নারী পুরুষ উপজেলা পরিষদে হাজির হয়ে এই অভিযোগ করেন।
সূত্র জানায়, হাকিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য বহু বিতর্কিত নেতা আক্তারুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে ফঁসে উঠেছে ইউনিয়নের হত দরিদ্র মানুষ। প্রায় ৩-৪ বছর ধরে ইউনিয়নের শত শত নারী পুরুষের নিকট থেকে বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় এই নেতা। সম্প্রতি ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি যশোর দূর্ণীতি দমন কমিশনে তার অপকর্ম তুলে ধরে একটি অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র্র্র পাল তদন্তে যান। সেদিন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষেদের সামনে শত শত নারী পুরুষ বিতর্কিত এই নেতার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার আশ^াসে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হন। এই রেশ কাটতে না কাটতেই রবিবার দুপুরে ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত হতদরিদ্র মানুষ উপজেলা পরিষদে উপস্থিত হয়ে আওয়ামীলীগ নেতার সুষ্ঠ বিচারের দাবি চেয়ে আরও একটি অভিযোগ করেন। এ সময় কথা হয় ভুক্তভোগী হাকিমপুর গ্রামের কিনা দাসের স্ত্রী বিন্দে রানীর সাথে। তিনি বলেন. দুই বছর আগে বিধবা ভাতার একটি কার্ড দেয়ার নাম করে তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয় আ’লীগ নেতা মেম্বর আক্তারুজ্জামন মিলন। এ পর্যন্ত তিনি কোন কার্ড দেয়নি এমনকি টাকাও ফেরত দেয়নি। টাকা ফেরত চাইলে তিনি প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন। ইউনিয়নের মুক্তার হোসেনের ছেলে দিনমজুর সাজ্জাদ হোসেন। দিন আনা দিন খাওয়া এই ব্যক্তির নিকট থেকে ১৭ হাজার টাকা নেয় মেম্বর মিলন। তার রাস্তায় মাটি কাটার লেবারে অর্ন্তুভুক্তি করার কথা বলে টাকা নেয়। কিন্তু আজ অবাধি টাকা বা কাজ কিছুই দেয়নি। একই অবস্থা ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামের আনোয়ারা বেগম, যাত্রাপুর গ্রামের জোসনা রানী, একই গ্রামের স্বপ্ন রানী, সীতা রানী, মাঠ হাকিমপুর গ্রামের কৃষ্ণা রানী, একই গ্রামের পান্না রানী, কবিতা রানী, মমতা বালা, টুম্পা রানী, তাহেরপুর গ্রামের সালেহা বেগম, স্বরুপপুর গ্রামের নিরালা রানী, একই গ্রামের নারানী সর্দারের বেলায়। উপজেলা পরিষদ চত্তরে উপস্থিত এ সব ব্যক্তিরা জানান, বিধবা, বয়স্ক, মাতৃত্বকালীন ভাতা, জন্ম নিবন্ধন, টিউবওয়েল দেয়া, লেবারের কাজ দেয়াসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা সে হাতিয়ে নেয়।
তথ্য অনুসন্ধানানে দেখা গেছে, আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামান মিলন ইউনিয়নের সংখ্যালঘু ও আদিবাসিদের নিকট থেকে সব ধেকে বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
হাকিমপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মিলন দলের নাম ভাঙিয়ে হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে যে ভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা কারও জন্যই কাম্য নই। ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিতে এসেছেন তাই আমি ওদের সাথে এসেছি, মানুষ গুলোকে সাহায্য করতে। আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামান মিলনের সাথে যোগাযোগের জন্য তার ব্যবহৃত ০১৭৩৯৯১৪৯১১ বারবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, একটি অভিযোগ তারা দিতে আসেছিলেন, সেটি সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিকট জমা দিতে বলেছি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের তদন্ত গত বৃহস্পতিবার করেছি, এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে আরও একটি অভিযোগ পেয়েছি, সেটি তদন্ত করা হবে বলে তিনি জানান।