মালেক্জ্জুামান কাকা, যশোর : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) গবেষকরা তিনটি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন করতে সম হয়েছেন। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন এই দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জিনোম সিকুয়েন্সগুলো ইতিমধ্যে বিশ্বখ্যাত জিনোম ডাটাবেস সার্ভার জিআইএসএআইডি-তে জমা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে জিনোম সিকুয়েন্স করেছে, সেখানে অপোকৃত নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হলেও নমুনা প্রসেসিং, ভাইরাস শনাক্ত, নিউকিক অ্যাসিড পৃথককরণ থেকে শুরু করে জিনোম সিকুয়েন্স পর্যন্ত যবিপ্রবির গবেষকরা নিজেরাই করেছেন। ঢাকার বাইরে এই প্রথম কোনো ল্যাবে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্স করা হলো। নড়াইল, ঝিনাইদহ ও বাগেরহাটে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ভাইরাস থেকে এই জিনোম সিকুয়েন্সগুলো করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এই অঞ্চলে সংক্রমিত ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি, তা কোথা থেকে ছড়ালো ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য্য বলেন, ‘এই জিনোম সম্পর্কিত বিশ্লেষণ আমাদের গবেষকরা করছেন এবং এ অঞ্চলের ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ শিগগিরই আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের জন্য পাঠানো হবে। ভবিষ্যতে এই ল্যাবে মেটাজেনোম করার মাধ্যমে রোগীদের সংক্রমণের তীব্রতার কারণ জানা যাবে।’ ‘একটি নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাবে করোনা পরীার পাশাপাশি জিনোম সিকুয়েন্স করা নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য’ উল্লেখ করে ভিসি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাহসী যোদ্ধাদের ধন্যবাদ দেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সুসংবাদ হিসেবে তিনি জানান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অত্যাধুনিক এনিমেল হাউস ও গ্রিন হাউস তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে বিএসএল-৩ ল্যাবরেটরি স্থাপন করে দুরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরিসহ আরো উচ্চমানের গবেষণা করতে তার গবেষক দল প্রস্তুত। সাংবাদিকদের প্রশ্নে যবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, তাদের ল্যাবে যাতে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার জন্য একটি দুষ্টু চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। এই ল্যাবে নমুনা পাঠানো প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সবার সহযোগিতায় সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা গেছে। এখন দণি-পশ্চিমাঞ্চলের আট জেলার নমুনা পরীা করা হচ্ছে এখানে। ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলাও বিশ্বমানের এই ল্যাবে নমুনা পাঠাতে চাইছে। এখানকার গবেষক, শিক ও স্বেচ্ছাসেবীরা পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা অকান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নমুনা পরীার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা পরীার অনুমোদন পায়। এরপর আজ পর্যন্ত এই ল্যাবে পাঁচ হাজার ২৭০টি নমুনা পরীা করা হয়েছে। এর মধ্যে পজেটিভ এসেছে ৮০৬টি নমুনা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রচণ্ড ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও যবিপ্রবি কর্তৃপ সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে জাতির ক্রান্তিলগ্নে নমুনা পরীার কাজে হাত দেয়। এই ল্যাবে বিশ্ব স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে নমুনা পরীার কাজ করা হয়। ইতিমধ্যে একজন উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ এসে ল্যাবের পরীা কার্যক্রম দেখে গেছেন। আমেরিকান ফেডারেল সরকার পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানের ওই বিশেষজ্ঞ যবিপ্রবি ল্যাব ও এর পরীা কার্যক্রম দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। ভিসি ড. আনোয়ার নিজেও দেশের অন্যতম শীর্ষ অণুজীব বিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে, বাংলাদেশের নভেল করোনা ভাইরাসের জিনোম সংক্রান্ত বিষয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরির আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত প্রথম গবেষণাপত্রটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের। এছাড়া এখানকার শিকদের বেশকিছু গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের জন্য রিভিউ পর্যায়ে আছে।’ সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবি ল্যাবে চলমান পরীণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ড. ইকবাল কবীর জাহিদ, ড. সেলিনা আক্তার, ড. শিরিন নিগার, ড. তানভীর আহমেদ, কিবরিয়া ইসলাম প্রমুখ।