সেলিম রেজা মুকুল, সাতক্ষীরা ব্যুরো : সাতক্ষীরায় ভোমরা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন নারী শিশু, মাদক দ্রব্য ও হু-ির মাধ্যমে বাংলাদেশি মুদ্রা, স্বর্ণ, ভারতের ভাইরাসযুক্ত গলদা রেণু পাচার হয়ে আসছে। লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্ত দিয়ে এসব পণ্য দাঁতভাঙা বিল হয়ে সাতক্ষীরা সদরে এসে বিভিন্ন স্থানে পাঁচার হচ্ছে।
ভোমরা ঘোষপাড়া, কানপাড়া, দাসপাড়া ও লক্ষ্মীদাঁড়ীর গ্রামবাসীর অভিযোগে জানা যায়, সীমান্তে এক শ্রেণির চোরাকারবারীরা ভোমরা সীমান্ত দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারী শিশুদের নিয়ে এসে ভারতে পাচার করছে। দালালদের মধ্যমে আসা এই সব নারী শিশু সীমান্তে পাচারকারী চক্রের ভারতে নিযুক্ত এজেন্ট বা আত্মীয়ের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের অন্যান্য প্রদেশে পাচার করছে বলে গ্রামবাসীরা জানায়। লক্ষ্মীদাঁড়ী গ্রামের তারক নাথের ছেলে ওমল ও কার্তিক, বাবর আলী ছেলে খোকন (জামাতকর্মী) দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশু পাচার করে আসছে। অমল ও কার্তিকের ফুফুর বাড়ি ভারতে ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে। খোকনের বোন রাবেয়ার বাড়ি ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে হওয়ায় তারা নারী-শিশুদের পার করে ফুফুর বাড়ি ও বোনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ভারতীয় দালালরা পার হয়ে যাওয়া ঐ সমস্ত নারী-শিশুদের ঘোজাডাঙ্গা থেকে নিয়ে যায়। এছাড়াও ফেন্সিডিল, ইয়াবা, ভারতীয় মদ পাচার করে নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয় বলে গ্রামবাসীরা জানায়। লক্ষ্মীদাঁড়ী গ্রামের জবেদ কান এর ছেলে সাদেক হোসেন প্রতিদিন ভারত থেকে লক্ষ লক্ষ ভাইরাসযুক্ত গলদা রেণু পাচার করে নিয়ে এসে দেবহাটা কুলিয়া মৎস্য সেটে বিক্রি করছে। ভারতীয় ভাইরাসযুক্ত গলদা রেণু দেশের মৎস্য ঘেরগুলোতে ভাইরাসের বিস্তার ঘটাচ্ছে। যেটা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া সাদেক মূল্যবান বনজ পাখি যেমন লাব্বাটি, ককটেল, ম্যাকাউট, কাকাতোয়া, থানকুরটিয়া, আরিকানগ্রে ও মূল্যবান কবুতর বিদেশ থেকে এ সমস্ত মূল্যবান পাখি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় আসলে এক শ্রেণির পাখি শিকারী এদের ধরে ভারতের পাচারের উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা ভোমরার লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্তে এনে সাদেকের মাধ্যমে ভারতে পাচার করে। এলাকাবাসী আরো জানায় হু-ীর টাকা, স্বর্ণ ও ভারতীয় মাদক পাচারের সাথেও সাদেক জড়িত। ২০১০ সালে সাদেক ভারত থেকে চোরাই মটরসাইকেলের ব্যবসা করত। এ সময় টালী ঘরে বসবাস করত। বর্তমানে সে আলীশান বাড়িতে বসবাস করে বলেও এলাকাবাসী জানায়। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্ত চোরাকারবারীরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি বা আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর নজরে আসেনি। ফলে বেপরোয়াভাবে ভোরমা সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশু, মাদক, হু-ির টাকা, স্বর্ণ, ভারতীয় ভাইরাসযুক্ত রেণু পাচার হচ্ছে। এ ব্যাপারে সাদেক মুঠো ফোনে এই প্রতিবেদক কে জানায় ‘আমি এসব করি না, আমি আমদানী রপ্তানীর ব্যবসা করি। আমাকে অহেতুক হয়রাণী করার জন্য এসব প্রচার করা হচ্ছে, আমি আপনার সাথে বিকালে দেখা করব।’ এ ব্যাপারে অমলের কাছে জানতে চাইলে সে বলে আমি ভাড়ার মটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। আমি কোন অবৈধ কাজের সাথে জড়িত নই। আমার কাছে অনেকেই টাকা পয়সা চাই আমি না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে এইসব বলে বেড়াচ্ছে। একই কথা বললেন খোকন আমি কোন পাচারের সাথে জড়িত নই, আমি জামায়াত-শিবিরের সাথেও জড়ি নই, আমাকে হয়রাণী করার জন্য এসব প্রচার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভোমরা ইউপি মেম্বর জালাল উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘দেখেন ভাই আমরা এলাকার জনপ্রতিনিধি, অনেক কিছু জানার পরেও আমরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারি না। সীমান্ত এলাকায় এসব তো হবেই। তিনি কারো নাম উল্লেখ না করেই বলেন যা রটে তা কিছু তো ঘটে’ এ ব্যাপারে ভোমরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ভোমরা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এরা আগে এসব কাজ করত বলে জানি কিন্তু এখন করে কি না বলতে পারব না। তবে সীমান্ত যখন আছে তখন তো এসব হবেই। তবে এলাকাবাসী জানায় করোনা পরিস্থিতির কারণে পাসপোর্টে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করা কঠিন হওয়ায় অবৈধভাবে যাতায়াতের প্রবণতা বেশি হয়েছে। অধিক মূল্য দিয়ে উল্লেখিত পাচারকারীদের মাধ্যমে অবৈধভাবে পারাপার হচ্ছে।