এম হাসান মাহমুদ চৌগাছা (যশোর) ॥ ’গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ’ এটিই ছিল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিকতায় আজ সেই সব ঐতিহ্য বলাচলে অতীত। এখন আর দেখা যায় না রাখাল গরুর পাল নিয়ে মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে চলেছে মাঠের দিকে। বিশাল বিশাল মাঠে দেখা যায় না গরু ছাগলের অবাধ বিচারণ। গৃহকর্তাকে আর খেপলা জাল নিয়ে পুকুরে মাছ ধরতেও দেখা যায়না। এ সব স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে অনেক বয়োবৃদ্ধ হঠাৎ থমকে যান, ফিরে যান তার শৈশব আর কৈশরে।
চৌগাছা উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই দেখা গেছে মাটির ঘর, বাড়িতে বাড়িতে পালন করা হত গরু, ছাগল, হাঁস মুরগী। প্রতিটি বাড়িতে শোভা পেত ধানের গোলা আর ছোট বড় অসংখ্য পুকুর। এ সব পুকুরে কখনও বানিজ্যক ভাবে মাছ চাষ করা হয়নি। পুকুর মালিক তার পুকুরে যে মাছ চাষ করেছেন তা নিজের পরিবারসহ প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে দিয়েছেন। আশির দশকেও উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে এ সব কিছু দেখ গেলেও বর্তমানে তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। গ্রামের কিছুটা বৃত্তবান শ্রেনীর মানুষের বাড়িতে থাকত রাখাল। সে ওই বাড়ির সকল কাজ করত। এখন আর কোন বাড়িতে দেখা যায় না রাখালকে। গৃহকর্তা জাল নিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরের বুক সমান পানিতে নেমে মাছ ধরতেও দেখা যায়না, এমনকি গৃহীনি তার বাড়ির একমাত্র মাটির ঘরকে কাঁদা মাটি দিয়ে নেপে চকচকে করতেও আর দেখা যায় না।।
উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের ঘোষ পাড়ার বাসিন্দা নিতাই ঘোষ (৯০)। বর্তমানে একটি দূর্ঘটনায় তিনি পঙ্গু হয়ে বাড়িতেই আছেন। তিনি হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো নিয়ে স্মৃতিচারনে ক্ষনেকের জন্য থমকে যান। শতশত গরু পালন করে তিনি যে রেকর্ড সৃষ্টি করে গেছেন তা আজ শুধু অতীত। সে সময়ে তিনি যখন গরুর পাল নিয়ে মেঠো পথ দিয়ে বিলের মাঠের দিকে গেছেন, তখন ওই পথে অন্যদের চলাচল বলাচলে বন্ধ হয়ে যেত। আধুনিকতার পাশাপাশি নানা কারনে তিনি আজ গরু পালন বহুলাংশে কম করে দিয়েছেন। পৌর এলাকার কালাচাঁদ (৮৩)। তিনি বলেন, শৈশব আর কৈশরের কথা মনে উঠলে বড্ড খারাপ লাগে। কি ছিল আর এখন কি হয়েছে। বছরে দুই বার আমরা মাঠে ধানের আবাদ করেছি। বাকি সময়ে মাঠের পর মাঠ খালি পড়ে থাকত। সে সময়ে ছিল না কোন প্রতিবন্ধকতা, ছিল না হানাহানি সকলের ভিতরে ছিল অন্য রকমের এক আনন্দ। পুকুর, খাল বিল, নদ নদীতে ছিল মাছের সমারোহ, এখন সব কিছুই যেন স্মৃতি। আধুনিকতায় পরিবর্তন ঘটবে এটি স্বাভাবিক, তবে বাঙালীর পুরোনো সব ঐতিহ্য গুলোকে যে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে এমনটিই বলছেন এ জনপদের অসংখ্য বয়োবৃদ্ধরা।