বাঘারপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি : সমাজসেবার দেয়া কার্ডে লেখা আছে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাশ বই। কিন্তু আর্থিক ও শারীরিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। অথচ স্বচ্ছল ব্যক্তির বাড়ির সামনেই রয়েছে ১২ বছরের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। আজ অবধি তার কোন কার্ড হয়নি। সমাজসেবা বলছে প্রতিবন্ধী ভাতার ফরমটা পূরণ করেন মাত্র, বাকি কাজ করেন চেয়ারম্যান ও মেডিকেল অফিসার। তবে ভাতাভোগী সম্পর্কে যদি কারও কোন অভিযোগ থাকে তদন্ত করে বাদ দেয়ার একতিয়ার আছে মন্তব্য করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। আর্থিক ও শারীরিক অস্বচ্ছল ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী বানানোর ঘটনা ঘটেছে বাঘারপাড়ার দরাজহাট ইউনিয়নে। ব্যাপারটা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, যশোর বাঘারপাড়া উপজেলার বলরামপুর গ্রামের মৃত জগীন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে অশোক বিশ্বাসকে শারীরিক প্রতিবন্ধী বানানোর অভিযোগ উঠেছে দরাজহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বাবলু ও ইউনিয়ন সমাজকর্মী সোনিয়া আক্তার বিরুদ্ধে। এদিকে বলরামপুরের অশোক বিশ্বাসের বাড়ির সামনেই বিষ্ণুপদ বিশ্বাস ওরফে গঙ্গাচরনের ছেলে ইন্দ্রজিত একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। যার বয়স এখন প্রায় ১২ বছর। কিন্তু আজ অবধি তার নাম উঠেনি প্রতিবন্ধী তালিকায়। অথচ ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও চেয়ারম্যানদের কিছু উপরি টাকা দিলেই নাকি এ সব ভাতা হয়ে যায় বলে ওই গ্রামের এক মুরুব্বী (নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক) দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেন, দরাজহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শুধু এই না দীর্ঘদিন ভারতে বসবাসকারী ব্যক্তিদের বিভিন্ন ভাতার তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। যা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন।
আরও একাধিক এলাকাবাসী বলেন, যে অশোক বিশ্বাস প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন তার ছেলে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। যাকে প্রতিবন্ধী বলা হচ্ছে তিনি নিজেও ধান, সবজিসহ নানান ধরনের চাষাবাদ করেন। তার শরীরে কোন প্রকার শারীরিক অক্ষমতা ছিল না। তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ। তারা সমাজসেবার কার্যক্রমকেই দায়ী করেছেন।
তারা আরও বলেন, একজন সুস্থ্য মানুষ যদি ভাতা পেতে পারে তাহলে ১২ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ইন্দ্রজিতকে কেন ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে না। মজার ব্যাপার হলো অশোকের বাড়ির সামনেই ইন্দ্রজিতের বাড়ি। এ ব্যাপারে সম্প্রতি বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের সমাজকর্মী সোনিয়া আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। তার কাছে অশোক বিশ্বাসের তালিকা সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ওনাকে প্রতিবন্ধীর ভাতা দেয়া হয়েছে ভালো হয়েছে, যদি কিছু পারেন করেন। এবিষয়ে চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বাবলুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টার করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। এবিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, যদি কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত করে দেখা হবে তিনি কেন ভাতায় আওতায় এসেছেন। তবে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী তালিকা প্রস্তুতে কর্তব্যরত চিকিৎসকের ভূমিকা মূখ্য। প্রতিবন্ধী ভাতার ফরমটা পূরণ করেন মাত্র বলেও মন্তব্য তার। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ বলেন, প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণে ডাক্তারের ভূমিকায় প্রধান। কিভাবে ওই ব্যক্তি কার্ড পেল, বিষয়টি নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ১২ বছরের ওই ছেলেকেও ভাতার আওতায় আনার জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।