করোনায় হাঁসফাঁস করছে যশোরের মধ্যবিত্তরা

0
299

ডি এইচ দিলসান : করোনাকালে গরিবের জন্য খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে সরকারসহ দেশের বিভন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। উচবিত্তের জন্য শিল্পের প্রণোদনা। তবে সব ধরনের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মধ্যবিত্তরা। এই মধ্যবিত্তদের জন্য কী আছে?এমন প্রশ্ন যশোর শহরের মধ্যেবিত্ত সাংবাদিকসহ করোনায় হাঁসফাঁস অবস্থারত সাধারন মানুষ।
খোজ নিয়ে জানা গেছে যশোরসহ এই অঞ্চলের মধ্যেবিত্তদের অবস্থা এত বেশি শোচনীয় যে, বাড়ির রান্নার গ্যানটাও কিনতে পারছে না। যারা বেসরকারি চাকরি করেন তারা ইতমধ্যে তাদের সল্প গচ্ছিত অর্থ শেষ করে ফেলেছে। এখন বেতন পাচ্ছেনা বললেই চলে, পেলেও ৩ ভাগের ১ ভাগ, এর উপর বাড়ি ভাড়া আর নিত্ত প্রয়োজনিয় দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি তাদের বেচে থাকাটাই অভিসাপ হয়ে উঠেছে।
যশোর শহরের হোটেল রেস্টুরেন্ট মালিক ও শ্রমিকরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৫ মাসে এই সেক্টরের মানুষ গুলো যারা মোটামুটি সচ্ছল ছিলো তারা নেমে এসেছে অসহায় মধ্যেবিত্তদের কাতারে আর শ্রমিকরা নেমে গেছে অতি দরিদ্রদের কাতারে, এছাড়া, এনজিও কর্মীদেও বেতন থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে একটি মোটা অংকের পারসেন্টটেন্স। জাগরনি চক্রের এক কর্মী বলেন আমাদের বেতন থেকে স্বাস্থ, বাসস্থানসহ মূল বেতনের বাইরে সেবব সুভিদা দেওয়া হত সেগুলো এখন আর দিচ্ছে না। তবে ছোট ছোট এসজিও গুলো বেতন চিচ্ছে না বললেই চলে। এছাড়া শহরের ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্টানে যারা চাকরি করতো তাদের অর্ধেকের চাকরি নেই, যারা আছে তাদের বেতন এখন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। যশোর সিটি প্লাজার এক কর্মচারী বলেন ৪ মাস বেতন না পেয়ে খালি হাতে চাকরি ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হলাম।
বিশ্বব্যাংক আর গবেষকরা মধ্যবিত্তের একটা চেহারা দাঁড় করিয়েছেন আয় অথবা ক্রয় ক্ষমতা দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশে এই করোনায় যশোর শহরের মধ্যবিত্ত চেনা যাচ্ছে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। কারণ, মধ্যবিত্ত ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারেন না। অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারেন না৷ মধ্যবিত্তের অবস্থান মাঝখানে। তাই না পারে নীচে নামতে , না পারে উপরে উঠতে। এই করোনাকালে তাই সে হাঁসফাঁস করছে মধ্যবিত্ত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা জরিপ অনুযায়ী করোনার আগে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২০.৫ ভাগ দারিদ্র্য সীমার নীচে ছিল। আর চরম দরিদ্র ছিল ১০ ভাগ।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, এক জনের দৈনিক আয় এক ডলার ৯০ সেন্ট হলে ওই ব্যক্তিকে দরিদ্র ধরা হয় না। এর নীচে হলে দরিদ্র। এখন মধ্যবিত্তের আয়সীমা কত? এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলছে, এক ব্যক্তির ক্রয় ক্ষমতা (পিপিপি) যদি প্রতিদিন দুই মার্কিন ডলার থেকে ২০ মার্কিন ডলারের মধ্যে হয় তাহলে তাকে মধ্যবিত্ত বলা যায়। এই হিসেবে তারা বলছে, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত হলো তিন কোটি ৭ লাখ। সেই হিসেবে যার মাসিক আয় ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা সেই মধ্যবিত্ত। এটা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ ভাগ। ১৬ কোটি মানুষের হিসেবে সংখ্যাটি দাঁড়ায় চার কোটি ৮০ লাখ।
প্রশাসনিক কাঠামোর দিক থেকে যশোর বাংলাদেশের ১৩তম বৃহত্তম জেলা। খুলনা ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী যশোর জেলার মোট লোকসংখ্যা ২৭,৬৪,৫৪৭ জন। এর মধ্যে প্রায় ৮ লাখ লোক মধ্যবিত্ত।
বিআইডিএস-এর সাম্প্রতিক জরিপে বলা হচ্ছে, করোনায় এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে, দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে গেছে। তাই এখন দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি।
২০১৫ সালে বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন তার এক গবেষণায় দেশের তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষকে মধ্যবিত্ত বলেন। যারা দিনে দুই থেকে তিন ডলার আয় (পিপিপি) করেন তাদের তিনি মধ্যবিত্তের মধ্যে ফেলেন। আর তখন সংখ্যাটা ছিল মোট জনগোষ্ঠীর ২০ ভাগ। তিনি তখন ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশ মধ্যবিত্ত হবে বলে আশা করেন৷ তিনি তার গবেষণায় বলেন, বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের ৪৮.৪ শতাংশ বেসরকারি চাকরি করেন। ২০ শতাংশের বেশি সরকারি চাকরি করেন। প্রায় ২২ শতাংশ ব্যবসা করেন। নিম্নমধ্যবিত্তের মধ্যে ৫১.৬ শতাংশ বেসরকারি চাকরি করেন। আর ব্যবসায় যুক্ত ১৭ শতাংশ৷
বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের চাকরির আয় এরই মধ্যে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। একটি অংশের চাকরি আছে, কিন্তু বেতন নেই। আবার কারো বেতন কমে গেছে। এসএমই সেক্টরে ধস নেমেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আবু সিনা বলেন, ‘‘দিনে ১.৯ ডলারের দ্বিগুণ যাদের আয় তাদের আমরা বলি নিম্ন মধ্যবিত্ত । এরাই এখন সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখে আছেন। তারাই হয়তো দরিদ্রের কাতারে নেমে গেছেন। কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত, তারা এখনো টিকে আছেন। তাদের সংখ্যা হয়তো ঠিকই থাকবে। হয়তো ব্যক্তির পরিবর্তন হবে। কারণ, নতুন পরিস্থিতিতে পেশার পরিবর্তন হবে। নতুন ধরনের ব্যবসা আসবে, কাজ আসবে। কেউ ভালো অবস্থায় যাবেন। আবার কেউ খারাপ অবস্থায় পড়বেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ আব্দুস শাহীদ মিয়া মনে করেন,‘‘ যারা সরকারি চাকরিতে আছেন করোনা পরিস্থিতিতে তাদের আপাতত প্রত্যক্ষভাবে কোনো সংকট হয়তো হবে না কিন্তু পরোক্ষভাবে এমনকি এ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হলে তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকায় আছেন। অন্যদিকে যারা বেসরকারি খাতে আছেন তাদের অবস্থা আরো বেশি ভয়াবহ, তারা এখন জমানো টাকা খাওয়া শুরু করেছেন৷ এটা শেষ হলে ঋণ করে অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়বেন এমনকি নিম্নবিত্তের কাতারে নেমে যাবারও সমূহ আশংকা আছে।”
”বাংলাদেশে ৯০ লাখ মানুষ আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরি করেন। এর মধ্যে ১৫ লাখ সরকারি খাতে। বাকি ৭৫ লাখ মানুষ বেসরকারি খাতে । অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন ছয় কোটি ৮ লাখ মানুষ।
যশোরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব কবির বলেন, গত ৫ মাস ধরে হোটেলে কোন গেস্ট নেই, রেস্টুরেন্টে কোন কাস্টমার নইে, স্টাফদেও বেতন দিতে গিয়ে আমাদেরও হাসফাস অবস্থা। তবে তিনি বলেন অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন ঠিকমত দিতে পারছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here