খনন কাজের অনিয়ম ও দূনীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ভৈরব নদের পেটে ২৭২ কোটি টাকা !!! #নদী ও চর আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদীপাড়ের সব স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি ভৈরব বাঁচাও কমিটির

0
454

বিশেষ প্রতিনিধি : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত যশোরের ভৈরব নদ খনন প্রকল্পে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন যশোরের এককালের প্রমত্তা ভৈরব খননের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি খাল তৈরী করছে। ভৈরবের দুই পাড়কে সংকুচিত করে মধ্যখানের কাদামাটি অপসারণ করে তা পাড়েই ফেলছে খননকারী প্রতিষ্ঠান গুলো। চলতি বর্ষা মৌসুমে পাড়ে জমা করা এসব কাঁদামাটির বৃহৎ অংশ ফের গড়িয়ে পড়ছে নদী বক্ষে। ফলে খননের নামে নদী বক্ষ থেকে যতটুকু কাঁদামাটি অপসারন করা হয়েছিল তা আবার হয়ে নদী পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ভৈরব নদ খনন করা হয়েছিল তা আঁতুর ঘরেই বিনষ্ট হতে চলছে বলে মনে করেন ভৈরব নদ খনন আন্দোলনের নেতা কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ। একই সাথে ভৈরব নদ খননের মাটি অবৈধ পন্থায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এই সব অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে ভৈরব বাঁচাও আন্দোলন কমিটি।
সূত্র বলছে, আগামী জুনে ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব নদ খনন কাজ শেষ হওয়ায় কথা । যা শুরু হয় গত ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের এই কাজের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের ডিজাইন অনুসারে স্থান কাল ও পাত্র ভেদে নদীর পাড় থেকে তলদেশ ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর করে খনন করার কথা। এছাড়া এস এ ও আর এস রেকর্ড মুলে ভৈরব নদের নিজস্ব জায়গায় স্থান ভেদে উপরে ৪০ থেকে ৫০ মিটার ও তলদেশে ৩০ থেকে ৩৪ মিটার প্রশস্ত করে খনন করার কথা। সেই অনুযায়ী নদীর খনন নকশা প্রস্তুত করা হলেও অধিকাংশ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তা অনুসরণ করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে ভৈরব নদের দুই পাড় দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার অধিকাংশ এখনো অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ভৈরব নদ খনন আন্দোলন কমিটির নেতারা বলছেন বিশেষ করে নদের শহরাংশে ৯২টি স্থাপনা রয়েছে যা নদীর অভ্যন্তরে অবস্থিত বলে সিএস ও এস এ রেকর্ড মুলে প্রমানিত। এছাড়া নদী ও চর আইনে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি যে পর্যন্ত গড়িয়ে উঠবে সেই পর্যন্ত নদীর সীমানা নির্ধারিত হবে। সেই আইনও এখানে প্রতি পদে পদে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম। তিনি বলছেন, বর্তমানে ভৈরব নদে কোন অবৈধ স্থাপনা নেই। যা ছিল তার সবই উচ্ছেদ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ -১৮ অর্থ বছরে একনেক সভায় যশোরের ভৈরব নদ খনন প্রকল্প নামে ২৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প সমুহের মধ্যে তালিকা ভূক্ত করে “ ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প” এর ভৈরব নদের ৯৬ কিলোমিটার অংশ খনন ও দুই পাড়ে ভেঁড়িবাঁধ তৈরী করে সেখানে বৃক্ষ রোপন ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা প্রদান করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। কাজটি দেখাশোনার দায়িত্ব প্রদান করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তরকে। সেই অনুযায়ী ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ভৈরব নদের ভাটি থেকে উজানে ৯৬ কিলোমিটার নদীকে ৩১টি ভাগে বিভক্ত করে কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। সিল কোটেশান দরপত্রের মাধ্যমে একাজে অভিঙ্গ শতাধিক প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করে। সকল প্রকার অফিসিয়াল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক গ্রুপ কাজের অনুমতি পেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে। এর মধ্যে ঢাকার মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকার সেনা কল্যান ভবনে অবস্থিত ডলি কনস্ট্রাকশন লিঃ এস-এ-এস-আই(জেভী)’র নামে ২,৩ ও ৪ নম্বর গ্রুপের ৩টি কাজে ১০ কিলো মিটার, যশোর পুরাতন কসবা মিশনপাড়ার মোঃ নুর হোসেন’র নামে ৫,৭,৮ ও ৩১ নম্বর গ্রুপের ১২ কিলোমিটার,যশোর পুরাতন কসবা মিশনপাড়ারএস এ-এমএসএ-এন এইচ(জেভী)’র নামে ৬ নম্বর গ্রুপের ৪ কিলোমিটার,যশোর পুরাতন কসবা মিশনপাড়ার এনএইচ-এমএসসি-এসএইউ৯জেভী),র নামে ৯,১০,১৬,২১,২৩ ও ৩২ সর্বোচ্চ ৬টি গ্রুপে সাড়ে ২৩ কিলোমিটার,ঠিকানাহীন টেকনিপ কর্পোরেশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে১১ নম্বর গ্রুপে৩ কিলোমিটার, যশোর পুরাতন কসবা মিশনপাড়ার মেসার্স কপোতাক্ষী এন্ট্রারপ্রাইজের নামে ১২,২০,২৭ ও ২৯ নম্বর গ্রুপের ১১ কিলোমিটার,যশোর পুরাতন কসবা বিবি রোডের মেসার্স রেজা এন্ট্রারপ্রাইজের নামে ১৩ নম্বর গ্রুপের ৩ কিলোমিটার , গোপালগঞ্জের মেসার্স এস এস এন্ডএমটি(জেভী)’র নামে ১৪ নম্বর গ্রুপের ৩ কিলোমিটার(দড়াটানা অংশে),যশোর পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার মেসার্স শামীম চাকলাদারের নামে ১৫, ২৮ ও ৩০ নম্বর গ্রুপের ৯ কিলোমিটার, গোলাপগঞ্জের মেসার্স এমটি এন্ড এসএস কনসোর্টিয়াম এর নামে১৭ ও ২৬ নম্বর গ্রুপের৬ কিলোমিটার, গোপাল গঞ্জের মেসার্স এসটি এন্ড এমটি(জেভী)’র নামে ১৮ নম্বর গ্রুপে ২ কিলোমিটার,সাতক্ষীরার ইটাগাছার শেখ আশরাফ উদ্দদীনের নামে১৯ নম্বর গ্রুপের ২ কিলোমিটার ও ৩৭ দক্ষিণ টুট পাড়া, ক্রস রোড-২ খুলনা মোঃ শামিম আহসানের নামে ২২,২৪ ও ২৫ নম্বর গ্রুপে সাড়ে ৭ কিলোমিটার নদী খননের কার্যাদেশ প্রদান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঢাক ঢোল পিটিয়ে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে কার্যাদেশ পাওয়া বেশ কিছু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু করে। তবে এসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ সাব এ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রদেয় নকশা ফলো না করেই কাজ অব্যাহত রাখে। এছাড়া প্রতিটি গ্রুপের কার্য এলাকায় সিটিজেন চার্টাড বোর্ড টাঙিয়ে কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ কোম্পানী সেদিকটা কৌশলে এড়িয়ে যান। ফলে গোটা কার্যক্রম নিয়ে জনগণের মধ্যে শুরুতে যতটা উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায় কিছুদিনের মধ্যে সেখানে ভঅটা পড়ে।
এ বিষয়ে ভৈরব বাচাও আন্দোলনের অন্যতম নেতা জিল্রুর রহমান ভিটু বলেন, যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বসুন্দিয়ার আফরা ঘাট থেকে চৌগাছার তাহিরপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ভৈরব নদ খননের মাধ্যমে খুলনার রুপসা ও চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে সংযুক্ত স্থাপনের মাধ্যমে জোয়ারভাটা সৃষ্টি করা। তাহলে ্েই নদটি বাঁচবে একই সাথে নদ পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানে আসবে পরিবর্তন। জীববৈচিত্র রক্ষায় ভৈরব নদ তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। জনগণের এই দাবির প্রতি একমত ও সহানুভুতি দেখিয়ে মাননীয় প্রধঅনমন্ত্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একনেক সভায় ২৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোনদ দেন।জনগণ আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রীর বিশেস অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্পে নয় ছয় হবে না। কিন্তু কাজ শুরুর পর থেকে গোটা প্রকল্পই নয় ছয়ে ভরপুর হয়ে যায়। নদী শাষনের কোন তোয়াক্কা না করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা রাতারাতি বড় লোক হওয়ার লক্ষ্যে যেনতেন ভাবে নদী খননের বৈধতা প্রদান করায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলো সুযোগকে কাজে লাগায়। ফলে নদী খননরে নামে ভৈরবকে একটি খালে পরিণত করা হলো। একই সাথে নদীর দুই পাড় ও তলদেশে বগল চাচার মতো সামান্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে সেখানে পানি ঢুকিয়ে শেষ করা হলো কোন কোন ঠিকাদারের কর্মকান্ড। এছাড়া শহরাংশে বিশেষ করে দড়াটানা ব্রীজের উভয় পাশের্^র বহু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই স্কেলেটর নামিয়ে নামকাওয়াস্তে গাদমাটি অপসারনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার কিছুটা ব্রীজের পশ্মিাংশে দৃশ্যমান হলেও পূর্বাংশে তা আজও অধরা। রহস্যজনক কারনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন ব্রীজের পূর্ব দিকে নজর দিচ্ছে না। ফলে এই বর্ষা মৌসুমেও ভৈরবরে শহরাংশে নদী খননের কাজে কোন গতি দৃশ্যমান হচ্ছে না। নদী বক্ষেই শোভা পাচ্ছে বড় বড় অট্ট্রালিকা, বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আর বাসাবাড়ি। অথচ নদীর দক্ষিনাংশের পাড়ে অধিকতর দূর্বল ৮৪টি স্থাপনা এক প্রকার জোর করেই জেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড উচ্ছেদ করলো। তিনি বলেন বর্তমানে ভৈরবের বুকে যে সব স্থাপনা দৃশ্যমান তার অধিকাংশের মালিক সরকার দলীয় সব প্রভাবশালীরা। ফলে প্রশাসন সেদিকে নজর দিতে সাহস পাচ্ছে না।
এ্যাডভোকেট মাহামুদ হাসান বুলু বলেন, ভৈরব নদ খননের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খনন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। নদীর দুই পাড়ের কাদামাটি ও তলদেশের গাঁদমাটি অপসারনের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে নদী খনন। ফলে নদের মধ্যে পানি ধারনের যে সক্শতা তা তো বাড়ছেই না; বরং পূর্বে যে প্রশস্ততা ছিল তা ক্ষেত্র বিশেষ আরো লোপ পাচ্ছে। নদী তার জায়গা হারাচ্ছে। এভাবে নদীর জমি প্রভাবশালীদের মধ্যে বিলিবন্টনের পাকাপাকি ব্যবস্থা করলো পানি উন্নয়ন বোর্ড। অপরদিকে নকশার তোয়াক্কা না করে যেনতেন ভাবে নদী খননের কাজ শেষ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলো। যা দেখার কেউ নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করে বুলু বলেন, দৃশ্যপট দেখে মনে হচ্ছে এই ভৈরব নদ খনন কাজের কোন অভিভাবক নেই। যেন সরকারী টাকা লুটপাট করতেই চলছে এই মহাযোগ্য। পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, ভৈরব নদ যশোর শহরের প্রাণ। এই নদীটি বাঁচলে যশোর শহরের ব্যবসা বাণিজ্য, পরিবেশ, জীববৈচিত্র সব দিক থেকে উপকৃত হতো। যশোর একটি প্রাচীন বানিজ্য নগরী। এই ভৈরব নদটি তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় সেই বানিজ্য নগরীটি হারিয়ে যায়। এক সময় নদী পথে কোলকাতার সাথে ব্যবসা বানিজ্য করতো এই যশোরের মানুষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভৈরব নদ খনন কাজে ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্ধ করায় এই অঞ্চলের লাখে মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু খনন কাজে যে গোজামিল চলছে তাতে মানুষ চরম হতাশ। এই খননে নদীর তলদেশে কোন পরিবর্তন ঘটছে। নদীর দুই পাশের জংলা পরিস্কার হচ্ছে। আর খননের নামে প্রমত্তা ভৈরবকে খালে পরিনত করা হচ্ছে। ভৈরবের বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধার না করে বরং দুই পাড়ে জমি বর্তমানে যতটুকু আছে তাও ছেড়ে রাখা হচ্ছে ভবিষ্যতে দখল বানিজ্যের জন্য। আর এসবই হচ্ছে প্রভাবশালীমহল, ঠিকাদার আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করলে ভৈরব বাঁচাও আন্দোলনের নেতা কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, এটা ভৈরব নদ খনন প্রকল্প নাম না দিয়ে বলা উচিৎ এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের কোটিপতি বানানোর একটা সরকারী প্রকল্প। পানি উন্নয়ন বের্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের অবৈধ সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। এক সময় কেজেডিআরপি প্রকল্পের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছিল। বহুদিন পর ভৈরব খনন প্রকল্পের নামে আবারো পানি উন্নয়ন বোর্ড ও তার চুক্তিযোদ্ধা ঠিকাদাররা কোটিপতি বনে যাচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো নদী খননের সিকি ভাগ কাজও দৃশ্যমান নয়। অথচ কাগজপত্রে কাজের ৫০ শতাংশের বেশি শেষ দেখিয়ে প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকা লুটপাট করা শেষ। তিনি বলেন, যতটুকু খবর রাখি গড়ে নদের পাড় থেকে তলা পর্যন্ত ১০/১২ ফুট গভীর হওয়ার কথা। নদীর উপরি অংশে দুই পাড়ের দূরত্ব হওয়ার কথা ৫০ থেকে ৬০ মিটার। আর তলদেশে ৩০ থেকে ৪০ মিটার। কিন্তু বাস্তবে তার কোন অস্থিত্ব নেই। বর্তমানে গড়ে নদীর গভীরতা ৪/৫ ফুটের বেশি কোথাও নেই। আর দুই পাড়ের উপরি অংশের ও তলদেশের ব্যবধানও নকশার সাথে মিল নেই। তারপরও নদীর বুক থেকে যতটুকু কাদামাটি কাটা হয়েছে বা ড্রেজিং করা হয়েছে তা নদীর পাড়েই স্তুপ করার ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে তা ফের নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদী পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। ফলে সরকারের ২৭২ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পটি ভৈরবের পেটেই সমাধিস্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারকে বলেছিলাম নদী খননের কাজটি স্থানীয় ভাবে মনিটরিং করার জন্য পিপিইর ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী কমিটি করা হোক। এই কমিটি গোটা খনন কাজ ও নদীর দুই পাড়ের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ সামগ্রিক কর্মকান্ডটি মনিটরিং করবে। যার ফলে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং অর্থ দুই সাশ্রয় হবে। কাজটি জনকল্যাণমুলক হবে। কিন্তু সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সেদিকে ভুরুক্ষ না করে নিজেই নদী ও চর আইন লংঘন করে সরকারের টাকা লুটপাটে সামিল হলো। তিনি বলেন ভাটিতে বসুন্দিয়ার কাছে আফরা ঘাটের সাথে ও উজানে দর্শনার কাছে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে ভৈরব ও আপার ভৈরবের সংযোগ ঘটাতে হবে। তাহলেই কেবল এই নদী বাঁচানো যাবে। দর্শনার কেরু এন্ড কোম্পানীর পাশ দিয়ে মাত্র সাড়ে ৩ কিলোমিটার নদী খনন করলেই মাথাভাঙ্গার সাথে ভৈরবের সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব। এর পাশাপাশি গোটা নদী পাড় থেকে ১০/১৫ ফুট গভীর করে খনন নিশ্চিত করতে পারলে বর্ষা মৌসুমে এই্ নদীতে পানির যে ¯্রােত তৈরী হবে তাতে দুই পাড়ের সব জংলা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। নদীতে সৃষ্টি হবে জোয়ার ভাটা। নদী তার যৌবন ফিরে পাবে। ক্রমে ক্রমে নদী তার নিজস্ব গতিতে নিজের জায়গা তৈরী করে নেবে । কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড তার লুটপাটের কৌশল হিসেবে সেদিকে হাটছে না বলে কমরেড জাহিদ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার যশোরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার মেসার্স শামীম চাকলাদার এর স্বত্বাধিকারী শামীম চাকলাদার বলেন, নদী খননের ব্যাপারে ঢালাও ভাবে যে সব অভিযোগ করা হচ্ছে তা বাস্তবতা বিবর্জিত। আপনারা যদি চৌগাছার তাহিরপুর থেকে ভাটিতে আসেন তাহলে দেখবেন ভৈরব নদের যৌবন ফিরেছে। নদীর দুই পাড়ে খননকৃত মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মান করে সেখানে বৃক্ষ রোপন করে সবুজায়ন করা হয়েছে। নদীতে বর্তমানে কোন কোন স্থানে ৪/৫ ফুট গভীরতায় পানি রয়েছে। এসব স্থানে গড়ে ১০ থেকে ১২ ফুট খনন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা শতভাগ ফলো করেই কাজ করা হয়েছে। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারনে বহু ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবে না আশংকায় ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই প্রকল্পের মেয়াদ ২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। ফলে এর মধ্যে নদী খননের সব কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা করেন। সরকারী অর্থ লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এই কাজটি সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিবসহ উন্নতন কর্মকর্তারা বহুবার সাইড পরিদর্শন করেছেন। তারা নকশার শতভাগ বাস্তবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে হ্যা যশোর শহরাংশের ৪ কিলোমিটার কাজের টেন্ডার পেয়েছে ঢাকার ডলি কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা এই গোটা প্রকল্পের সুনাম বিনষ্ট করছে। শামীম চাকলাদার বলেন, ভৈরব নদের দড়াটানা ব্রীজের পূর্ব ও পশ্চিমাংশের কাজের টেন্ডার ৬ বার করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড । কিন্তু ডিজাইনসহ পারিপাশির্^ক বহু কারনে কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই অংশের দরপত্রে অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঢাকার ডলি কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজের দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার নেয়। কিন্তু এই ধরনের কাজের কোন পূর্ব অভিঙ্গতা না থাকায় তাার দৃশ্যমান কোন কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। যার কারনে জনগণের ধারনা হচ্ছে গোটা প্রকল্পের কাজই মনে হয় এমন হয়েছে। কিন্তু তা নয়। বসুন্দিয়ার অংশে ও কপোতাক্ষ নদের উজানে চৌগাছা অংশে ভৈরব নদে যে কাজ হয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু তা মানুষের চোখে পড়ছে না। তিনি মিডিয়াকর্মীদের ভৈরব নদের ওই সব এলাকা পরিদর্শনের আহবান জানান।
এদিকে এসব বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত ১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ভৈরব নদের খনন কাজ শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২১ সালের ৩০ জুন। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারনে গত ৩ মাস প্রায় কাজ বন্ধ। এছাড়া এবছর আর্লি বর্ষার কারনেও খনন কাজ কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে। যার ফলে নির্ধারিত সময়ে ভৈরব খনন প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। ফলে বিষয়টি ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করলে প্রকল্পের মেয়াদ একবছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন, আমি প্রকল্পের মাঝপথে যশোরে যোগ দিয়েছি। তার পরও গোটা প্রকল্পের সব কাজ আমার নজরে এসেছে। এই ধরনের কোন বড় অনিয়ম দুর্নীতি আমার চোখে পড়েনি। বাইরে থেকে অনেকেই অনেক কথা বলতে পারে। আমরা প্রকল্পের ডিজাইন অনুসারে শতভাগ কাজ বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছি। নদের শহরাংেেশর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সম্পর্কে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বর্তমানে ভৈরব নদের সীমানার মধ্যে কোন অবৈধ স্থাপনা নেই। ফলে তা অপসারনের কোন প্রশ্নই আসে না। যশোর শহরের দড়াটানা ব্রীজের পূর্বাংশের কয়েকটি বড় বড় স্থাপনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো নদী সীমানার বাইরে। তবে সেগুলো নদী সীমানার একদম গাঁঘেষে গড়ে উঠেছে। ওই স্থাপনা গুলোর পেছনে যেমন তাদের কোন জায়গা নেই; তেমনি সেখানে নদীরও কোন জায়গা নেই। ফলে এই সব জায়গায় নদী খনন করে তার মাটি কোথায় ফেলানো হবে, বা সেখানে কিভাবে ওয়াকওয়ে তৈরী করা হবে সে সব বিষয় গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা কিছুটা ধীর গতিতে এগোচ্ছি। তার পরও নদী ও চর আইন যথাযথ ভাবে দেশে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। ফলে সব দিক বিবেচনায় নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। তিনি জানান, স্থান ভেদে নদীর গভীরতা হওয়ার কথা গড়ে ৮/১০ ফুট। আর চওড়ায় দুই পাড়ের দূরত্ব হওয়ার কথা ৫০ থেকে ৬০ মিটার। আর তলদেশে ৩০ থেকে ৪০ মিটার। সে অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে দাবি করেন নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলম। একই সাথে তিনি দাবি করেন, গোটা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে যশোরবাসী এর নান্দনিকতা দেখতে পাবে। ভৈরব পাড় হবে শহরের মানুষের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র। এমন ভাবেই নদীর দুই পাড়কে গড়ে তোলা হবে। এছাড়া দর্শনার কাছে মাথাভাঙ্গার সাথে ভৈরবের সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি কতৃপক্ষের বিবেচনাধীন। একটি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে ওই কাজটি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে কতৃপক্ষের দেওয়া এসব বক্তব্যেকে ঠান্ডা বাড়িবলে মন্তব্য করেন ভৈরব বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতারা। তাদের দাবি যশোর শহরের একটি প্রভাবশালী মহলের কারসাজিতে চলছে এই লুটপাট। ক্ষমতাশালী ওই মহলটি গোটা নদী ও তার খনন কাজের অর্থ পুরোটাই হজম করার পাঁয়তারা করছে। তাদের নির্দিষ্ট পরিমান হিস্যা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোন ঠিকাদার ভৈরব নদ খননের কাজে হাত দিতে সাহস পায়নি। ফলে তাদের হিস্যা ঠিকমতো বুঝে দিয়ে কাজ করার ফলে প্রতিটি গ্রুপের কাজে নয় ছয় মাত্রা ছাড়িয়েছে বলে দাবি নেতৃবৃন্দের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here