মরমী কবি পাগলাকানাইয়ের ওফাৎ দিবস পালন

0
388
কামরুজ্জামান লিটন ঝিনাইদহ : ‘মরণের আগে মর, সমনকে শান্ত কর, যদি তাই করতে পার, ভব পারে যাবিরে মন রসনা’ এমন হাজারো মরমী গানের শ্রষ্টা ঝিনাইদহের লোক কবি পাগলা কানাইয়ের ১শ’ ৩১তম ওফাৎ দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রোববার সকালে সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ। সেখানে দোয়া মাহফিল ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এসময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. আব্দুল রশীদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা শুভ, পাগলাকানাই ইউপি চেয়ারম্যান এ. কে এম নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মরমী কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। শেষে পরিবেশিত হয় কবির রচিত গান। পাগলা কানাই ১৮০৯ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবন কেটেছে বেড়বাড়ি বোনের বাড়িতে। বাবার নাম কুড়ন শেখ, মায়ের নাম মোমেনা বিবি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে কানাই সবার বড়। ভাইয়ের নাম উজ্জ্বল শেখ, বোন স্বরনারী। পাঠশালায় পড়াকালে তার বাবা কুড়ন শেখ মারা যান। পিতৃহারা হয়ে কানাই ভবঘুরে হয়ে যান। জীবনের তাগিদে মা মোমেনা বিবি কোনো উপায়ান্তর না দেখে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চেউনিয়া ভাটপাড়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে কিছুদিনের মধ্যে তিনিও মারা যান। মা হারিয়ে কানাই ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ড উপজেলার বলরামপুরে ভরস মণ্ডলের বাড়িতে গরুর রাখালির কাজ নেন। বোন স্বরনারী দুই ভাইকে সেখান থেকে নিজের আশ্রয়ে শ্বশুরবাড়ি মাগুরা জেলায় নিয়ে আসেন। বোনের শ্বশুরবাড়ির অবস্থা ভালো হওয়াতে কানাইয়ের গান চর্চার রাস্তা আরও সহজ হয়। কানাই বোনের বাড়ির গরুর পাল চরাতেন আর গান বাঁধতেন, তাতে সুর দিতেন। ছোটবেলা থেকেই পাগলাকানাই দুরন্ত প্রকৃতির, পাগলাটে স্বভাবের এবং আধ্যাত্ম প্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলেন। এ খেয়ালীপনার জন্যে শৈশবে স্নেহবশতঃ লোকে তার নামের সাথে “পাগলা’ অভিধাটি যুক্ত করেন। তার কর্মকীর্তির সাথে এ পাগলা উপাধিটি অভিন্ন সূত্রে গ্রথিত হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তার কোন সঙ্গীত শিক্ষা না থাকলেও জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কবির আত্মার আত্ম-জিজ্ঞাসা ও আত্ম-অন্বেষণ তাকে প্রখর অধ্যাত্মজ্ঞানে পরিপূর্ণ করে তোলে। তার গানে ইসলাম ও আল্লাহর প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এঁর প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ পায়। পাগলা কানাই নিরক্ষর হলেও তার স্মৃতি ও মেধা ছিল অত্যন্ত প্রখর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে একের পর এক গান রচনা করতে পারতেন। তিনি যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা রাজশাহী, বগুড়া প্রভৃতি স্থানে আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ গান গেয়ে বেড়াতেন। এ পর্যন্ত পাগলা কানাই রচিত গানের মধ্য মাত্র শ’তিনেক সংগৃহীত হয়েছে। মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, ড, মাযহারুল ইসলাম, আবু তালিব, আমিন উদ্দিন শাহ, দুর্গাদাস লাহিড়ী, উপেন্দ্রনাথ ভট্রাচার্য প্রমুখ মনীষীগণ পাগলা কানাইয়ের গানের সংগ্রহ ও গবেষণা করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here