স্টাফ রিপোর্টার: আজ ১৬ জুলাই । যশোরের অকুতোভয় সাংবাদিক শামছুর রহমানের হত্যার ২০ তম বছর। ২০০০ সালের এই দিনে দৈনিক জনকন্ঠের যশোর ব্যুরো অফিসে কর্মরত অবস্থায় একদল আততায়ির হাতে খুন হন সাংবাদিক শামছুর রহমান। খুনিরা অফিসে প্রবেশ করে পরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় খুব কাছ থেকে শামছুর রহমানের বুকে গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে। সে সময় সাংবাদিক শামছুর রহমান দক্ষিনের সন্ত্রাস জনপদের চরমপন্থিদের খুনোখুনির বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখছিলেন। খুনিদের ছোড়া বুলেটে সেই রিপোর্টটিও রক্তাক্ত হয়।
এদিকে এই হত্যাকান্ডের পর দিন নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের নামে যশোর কোতয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে যশোর সিআইডর এএসপি দুলাল উদ্দিন আখন্দ দীর্ঘ ১ বছর তদন্ত শেষে ৫ সাংবাদিকসহ ১৬জনকে অভিযুক্ত করে অঅদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। যা নিয়ে শুরু থেকেই যশোরের সাংবাদিকরা এই চার্জশীট প্রত্যাখ্যান করে পুনতদন্তের মাধ্যমে শামছুর রহমানের প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করতে থাকেন। পরবর্তী সরকারের আমলে মামলার বর্ধিত তদন্তের নামে বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, এ মামলায় নতুন করে আসামি করা হয় সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে।
২০০৫ সালে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের পর বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মামলার বাদী নিহত শামছুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
আপিল আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরক ও মামলার অন্যান্য আসামির সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে, বাদীর পে খুলনায় গিয়ে সাী দেওয়া জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বাদীর এ আপিল আবেদনের পরিপ্রেেিত হাইকোর্ট ‘মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না’ তার জন্য সরকারের প্রতি রুলনিশি জারি করেন। কিন্তু সরকারের প থেকে অদ্যাবধি সেই রুলনিশির জবাব না দেওয়ায় মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে।
এদিকে, শামছুর রহমান হত্যার ২০তম বার্ষিকীতে তার স্ত্রী সেলিনা আখতার লাকি বলেন, ‘২০ বছর ধরে কত কথাই তো বলেছি। কত চোখের পানি ফেলেছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে স্বামী হত্যার বিচারের জন্য আকুতি জানিয়েছি। কিন্তু বছরের পর বছর পার হয়ে গেল, কোনো কিছুই তো হলো না। তাই, এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। কারণ, একই কথা বার বার বলে কান্ত হয়ে পড়েছি।‘
এদিকে, শামছুর রহমান কেবল হত্যার ২০তম বার্ষিকীতে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে), প্রেস কাব যশোর, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, বাংলাদেশ ফটো জার্ণালিষ্ট এ্যাসোসিয়েশন, যশোর সংবাদপত্র পরিষদ, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া , কালো ব্যাচ ধারন ও কবর জিয়াতর এবং মরহুমের স্মরণে তার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ। যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদ রহমান বকুল বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারনে বড় কোন কর্মসূচী গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারন লোক সমাগম করার কোন পরিস্থিতি নেই। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রেখে যতটুকু করা সম্ভব আমরা ততটুকু করতে যাচ্ছি।