রুদ্র মিজান : ভোগান্তির শেষ নেই। টাকা ছাড়া মিলছে না সেবা। নানা অজুহাতে ডাক্তাররা দেখছেন না রোগী। সেবিকারা ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। আর ওয়ার্ড বয়রা ব্যস্ত বকশিষের নামে চাঁদাবাজিতে। ডিসপেনসারির দায়িত্বশীল ব্যস্ত খাতা করমে ওষুধের হিসাব মেলাতে। কিন্তু রোগীদের সেবা করার কথা ছিল যাদের তারা সকলেই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যশোরের লাখো মানুষের চিকিৎসার একমাত্র নির্ভরশীল সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত যশোর ২৫০ শষ্যা বিশিষ্ট সদর জেনারেল হাসপাতালে। এখানে টাকা ছাড়া চিকিৎসা মিলছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তবে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলছেন ডাক্তারসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। অথচ গত ২ দিনে সরেজমিন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ খবর নিয়ে রোগী ও তার স্বজনদের এসব অভিযোগের শতভাগ সত্যতা মিলেছে ।
যশোর সদর হাসপাতাল যা বর্তমানে ২৫০ শষ্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল নামেই পরিচিত। জেলার ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র সরকারী সর্ববৃহৎ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। জরুরী বিভাগ, গাইনী বিভাগ, শিশু বিভগি, সার্জারী বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ, অর্থপেডিক বিভাগ, জেনারেল মেডিসিন বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ, ব্লাড ব্যাংক বিভাগ,ডায়রিয়া ওয়ার্ড, মেইল ও ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ড, চক্ষু বিভাগ, দন্ত বিভাগ, মডেল ওয়ার্ড, কার্ডিওলোজি বিভাগ ও সিসিইউসহ একাধিক বিভাগ রয়েছে জেলার সর্ববৃহৎ এই সরকারী চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে। প্রায় ৭০ জন চিকিৎসক, শতাধিক স্টাফ নার্স, শতাধিক স্টুডেন্ট নার্স, দুই শতাধিক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর স্টাফ ছাড়াও প্যাথলজি, ফার্সাসি ও বিভিন্ন ল্যাবে এ্যাসিস্ট্যান্টসহ প্রায় ৫শ’র অধিক কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন মানুষের সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্বে। কিন্তু সে সবই কাগজ কলমে। বাস্তবে এই হাসপাতালে সেবার মান ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগের অন্ত নেই রোগী ও তার স্বজনদের। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারনে এই অভিযোগের সিরিয়াল আরো দীর্ঘ হচ্ছে। রোস্টারিং ডিউটির অজুহাতে বর্তমানে তিন চতুর্থাংশ চিকিৎসক সময়মত হাসপাতালে আসছেন না। বাকী যাদের রোস্টারিং ডিউটি তারাও স্্েরাতে গা ভাসিয়ে ব্যস্ত প্রাইভেট প্রাকটিস নিয়ে। আর করোনা সংক্রমন রোধে যে সব ডাক্তারদের ডিউটি রোস্টারিং করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগ দিনের বেলায় যশোর শহরের নামী দামি কিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল গুলোতে চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত। ফলে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এছাড়া অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির তো কোন শেষ নেই। প্রতি পদে পদে এই হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনদের টাকা গুনতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের রোগীদের ইনজেকশন ফুটাতে, সেলাইন ফুটাতে, দিনের রুটিন অনুসারে ওষুধ প্রদানে, বিভিন্ন রিপোর্টের স্যাম্পল কালেকশনে, বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজে এখানে টাকার কোন বিকল্প নেই। এমনকি ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর বিছানার চাদর পাল্টাতে বা তার বেডের নীচের ময়লার পাত্রটি পরিস্কার করতে , টয়লেট গুলো পরিস্কার করতেও রোগীদের পয়সা গুনতে হচ্ছে। প্যাথলজিতে একজন কনসালটেন্টের অধীনে বহিরাগত ৭/৮ জন এ্যাসিস্ট্যান্ড পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ করছেন। যাদের এই কাজের কোন পূর্ব অভিঙ্গতা বা লেখাপড়া নেই। আর্টস বা কমার্স থেকে কোনক্রমে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে বিশেষ সুপারিশ বা কৌশলে এসব ব্যক্তিরা যশোর জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের একটি চেয়ার দখল করেছেন। তার পর বছর কি বছর তারা ওই চেয়ারে বসে দিব্যি পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট তৈরী করছেন। বিনিময়ে সরকারী নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে তাদের রুটিরুজি নিশ্চিত করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসাউন্ডসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও রোগীদের বাড়তি অর্থ পরিশোধের অভিযোগের শেষ নেই। পাশাপাশি ব্লাড ব্যাংক ও মেডিসিন ব্যাংকের বিষয়েও রোগী ও তার স্বজনদের অভিঙ্গতা সুখকর নয়। সমাজ সেবা বিভাগের একটি ইউনিটের মাধ্যমে এই হাসপাতালের রোগীদের সেবার মান নিয়ন্ত্রনে একটি ইউনিট কাজ করলেও তা কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ। এই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি নামে একটি সমাজ সেবামুলক ইউনিট আছে। যেখানে সমাজের শ্রদ্ধাভাজন দায়িত্বশীলরা পেশাদারিত্বের সাথে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন। কিন্তু সেই শাখাটিতেও রাজনীতিকরণের কারনে অপেশাদারিত্বদের দৌরাত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ ও বর্হিবিভাগের বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে পয়জোনিং কোন কেস আসলে তাকে ওয়াস ও ট্রিটমেন্টের নামে রীতিমত দরকষাকষি শুরু হয়। একই ভাবে আউটডোরে রোগীদের কাছে টিকিট বিক্রি ও ডাক্তার দেখানো হয়ে পড়েছে দালাল নির্ভর। হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কতিপয় স্টাফের সাথে যোগসাজসে এসব চিহ্নিত দালালরা অর্থবানিজ্যের মাধ্যমে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করেন। অর্থ প্রদান নিশ্চিত না হলে নানা অজুহাতে তাদেরকে টিকিট দেওয়া হয়না, কোন কোন ক্ষেত্রে টিকিট পেলেও কাঙ্খিত ডাক্তারের দরজায় বসে থেকেই দিন পার হয়ে যায়। দেখা মেলে না ডাক্তারের। এভাবে দিনের পর দিন বছরের পর বছর পার হচ্ছে জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসার মানের তেমন কোন পরিবর্তন হচ্ছে না বলে অভিযোগ রোগী ও তার স্বজনদের। এর পাশাপাশি রোগী ও তার লোকজনের সাথে দুর্ব্যবহারের খবর তো বেশ পুরোনো। রোগী ও তার স্বজনদের সাথে ডাক্তার ও তার সহকর্মী স্টাফদের দুর্ব্যবহারের কথা হরহামেশায় শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সে সব বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের।
গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ও ওয়ার্ড ঘুরে রোগী ও তার স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় মেইল মেডিসিন ওয়ার্ডে কথা হয় চৌগাছা থেকে আগত একজন রোগীর সােথে। নাম পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে তিনি জানালেন, সদর হাসপাতালে টাকা ছাড়া কোন সেবা মিলছে না। এর থেকে প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো অনেক ভালো। তিনি বললেন, গত তিন দিনে তার শরীরে ২টি সেলাইন ও ৫টি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে । এছাড়া দিনে তিন বার তাকে খাবার ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। যা সবই বাইরে থেকে কিনে আনা হয়েছে। অথচ এই ইনজেকশন ও সেলাইন পুশ করতে ও খুলে ফেলতে তাকে প্রায় ৩শ’ টাকা দিতে হয়েছে নার্স আর ওয়ার্ড বয়কে। এর পাশের বেডের একজন রোগীর স্বজন বললেন, বিছানা চাদর পাল্টাতে ও বেডের নীচের ময়লার পাত্রটি পরিস্কার করতে ওয়ার্ড বয়কে ১২০ টাকা দিতে হয়ে।ে ফিমেইল সার্জারী ওয়ার্ডে ভর্তি একজন রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বললেন, গত কয়েকদিন ধরে তিনি এই ওয়ার্ডে আছেন। তার এক আতœীয়া এই ওয়ার্ডে ভর্তি। কিন্তু এই তিন দিনে একবারও কোন ডাক্তার বা নার্স রোগীর কাছে যাননি। নার্সরা তাদের ডিউটি রুমে বসে ফাইল দেখে ওষুধের স্লিপ করে দিচ্ছেন। আমি বাইরে থেকে ওষুধ কিনে দিচ্ছি। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি যে ওষুধ কেনা হয়েছে তার অর্ধেকই প্রয়োজনের অতিরিক্তি। এছাড়া নার্সদের বায়না মেটাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস,মশার কয়েল ইত্যাদি আমাদের কিনে দিতে হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ড, চক্ষু বিভাগ ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের চিত্র আরো ভয়াবহ। দিনের বেলায় কোন কোন দিন একবার ডাক্তার এসে দূর থেকে একটু ভিজিট দিয়েই নিজেদের চেম্বারে বসে রোগীদের ফাইলে প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে যায়। বাকি কাজ নার্সরাই করেন। কিন্তু তারাও বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগীদের ধারে কাছেও যাচ্ছেন না। দূর থেকে শুনেই সব করছেন। আর সেলাইন বা ইনজেক দিতে হলে গুনতে হচ্ছে টাকা। দিতে হচ্ছে নানা উপহার। গত ২ দিনে এই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় ৩০ জন রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে মিলেছে একই তথ্য। এর পাশাপাশি এসব রোগীরা হাসপাতাল থেকে কি কি ওষুধ পেয়েছেন তার কোন সঠিক জবাব দিতে পারেননি নার্সবৃন্দ। তাদের সাফ জবাব যা সাপ্লাই আছে তাই রোগীরা পাচ্ছেন। কিন্তু রোগীদের অভিযোগ হচ্ছে তারা কোন সরকারী ওষুধ পাচ্ছেন না। রুপদিয়ার হারুন নামের একজন জানালেন, তার বোন পারিবারিক দ্বন্দের জেরে কীটনাষক পান করেছিল। তাকে হাসপাতালে এনে ওয়াশ করানো হয়। এর জন্য একজন ব্রাদারকে ৬শ’ টাকা দিতে হয়েছে। ওই রোগীকে নির্ধারিত ওয়ার্ডে নিতে স্ট্রেচার ভাড়া ও রোগী বহনের জন্য একজন ওয়ার্ড বয়কে ১শ’ টাকা দিতে হয়েছে।
এদিকে জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের দূনীতি আরো ভয়াবহ। এখানে নানা অজুহাতে রোগীদের গলাকাটা হচ্ছে। গত ২ দিনে এই সেকশনে বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি টেষ্টের জন্য সরকার নির্ধারিত একটি ফিস আছে। যা একটি সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টারের মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এক শ্রেণীর দালাল ও স্টাফরা যৌথ ভাবে রোগীদের ওই ক্যাশ কাউন্টারে যেতে বাঁধা দিয়ে নগদ টাকার বিনিময়ে তারা প্যাথলজি, এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি কাজ সেরে দিচ্ছেন। ফলে একদিনে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে দালালদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলরা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার হাসান আব্দুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সব অভিযোগ সত্য নয়। স্থানীয়দের অনুরোধে ২/১টি টেষ্ট তো এভাবে করতেই হয়। তাছাড়া এই প্যাথলজি বিভাগে লোকবলের অভাব মারাতœক। একজন মাত্র টেকনিশিয়ান আছে । যিনি বর্তমানে করোনা পজেটিভ হয়ে আইসোলেশনে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। ফলে যদি বাইরের লোক নিয়ে এসব কাজ না করতাম তাহলে রোগীরা তো ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতো। তাই তাদের সেবা নিশ্চিত করতে গত কয়েক বছর ধরেই বাইরে থেকে লোক নিয়ে তাদেরকে হাতে কলমে কাজ শিখিয়ে ল্যাব সচল রাখার চেষ্টা করছি। সম্প্রতি ২জন প্যাথলজি এ্যাসিসট্যান্ট নিয়োগ দিলেও করোনার কারনে তাদেরকে ডেপুটেশানে ফরিদপুর হাসপাতালে কাজ করানো হচ্ছে। ফলে এই বাইরের লোকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপার মহোদয়ের নির্দেশে এরা ল্যাবে কাজ করছে বলে দাবি করেন ডাক্তার হাসান আব্দুল্লাহ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে হাসান আব্দুল্লাহ বলেন, এই ল্যাবে যারা কাজ করছেন তাদের কোন নির্ধারিত বেতন নেই। আমরা স্থানীয় ভাবে ম্যানেজ করে এদের সামান্য কিছু সম্মানী ও যাতায়াত ভাতা প্রদান করি। একই অবস্থা করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ ও তাদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও। জরুরী বিভাগের বাইরে খোলা আকাশের নীচেয় একটি বিশেষ শেড নির্মান করে চলছে করোনা সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহের কাজ। কিন্তু সেখানেই রয়েছে অর্থবানিজ্যের অভিযোগ। বাড়তি টাকা ছাড়া এখান থেকে কোন সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ আগতদের। করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের চিত্র আরো ভয়াবহ। করোনা রোগী সন্দেহে যাদেরকে ভর্তি করা হচ্ছে তাদের ধারে কাছে কোন ডাক্তার বা নার্স যাচ্ছেন না। দূর থেকে সারছেন চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কাজ। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের অবস্থা আরো বেহাল। এখানে জরুরী যে সব রোগীরা আসেন শুরুতেই তাদের গলা কাটে ওয়ার্ড বয়রা। রাত দিনের অধিকাংশ সময় ডিউটি ডাক্তার বিশ্রাম কক্ষে অবস্থান করেন। আগত রোগীদের প্রাথমিক সেবা দেন ওয়ার্ড বয় আর ব্রাদাররা। রোগীর পার্লস পরীক্ষা, কাটা ছেড়া হলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা, প্রেসার মাপা, নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা, টিকিট বিক্রি করা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করছেন ওয়ার্ড বয়রা। পরে ডাক্তার সাহেব নিজ কক্ষে বসেই রোগীর প্রেসক্রিপশন লিখে দায়িত্ব শেষ করছেন। এর পর ওই রোগীতে নির্ধারিত ওয়ার্ডে স্থানান্তর থেকে শুরু করে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এসব ওয়ার্ড বয়কে বকশিষের নামে অর্থ দেওয়ার কোন বিকল্প নেই। হাসপাতালের ট্রলি ব্যবহার করতেও গুনতে হচ্ছে টাকা। একজন মুমুর্ষ রোগীকে নীচ থেকে উপরে বা উপর থেকে নীচেয় বা ওটি নিতে হলেও দিতে হচ্ছে টাকা। এছাড়া বেড পেতে হলে, কেবিন পেতে হলে, সিসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি হতে হলে টাকার কোন বিকল্প নেই। এক কথায় যশোর সদর জেনারেল হাসপাতালে টাকা ছাড়া মিলছে না চিকিৎসা সেবা।
এদিকে এসব বিষয় নিয়ে হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার আরিফ আহমেদ ও তত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায়ের সাথে কথা বললে তারা শুরুতেই বিষ্ময় প্রকাশ করেন। তত্বাবধায়ক বলেন, এই ধরনের অভিযোগ এই প্রথম আপনার কাছে শুনলাম। এই হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে কোন অর্থ লেনদেনের প্রশ্নই আসে না। পরে কয়েকটি ঘটনার তথ্য প্রমান উপস্থাপন করলে তিনি কন্ঠটি নরম করে বলেন, এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। তবে যারা সরকারী রসিদ ছাড়া টাকা লেনদেন করছেন তাদেরও দায় রয়েছে। আমাদের এই হাসপাতালে একটি সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টার করা হয়েছে। সেখানে সকল ধরনের টেষ্টের জন্য ক্যাশ বুঝে নিয়ে ম্যানি রিসিট প্রদান করা হয়। এর বাইরে কারা কিভাবে টাকা নিচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য সুপার তাৎক্ষনিক আরএমও ডাক্তার আরিফকে নিদেশনা প্রদান করেন। হাসপাতালে ডাক্তারদের অনুপস্থিতির তথ্য মানতে নারাজ তত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায়। তিনি বলেন, হাসপাতালকে রেড, গ্রীন ও ইয়োলো তিন জোনে ভাগ করে প্রতিটি জোনে বিশেষষ্ণ চিকিৎসকদের ডিউটি রোষ্টারিং করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন সকালে এসব ডাক্তাররা রোস্টারের ভিত্তিতে রাউন্ড দিচ্ছে। রোগীদের সেবা নিশ্চিত করছে।
প্যাথলজি সংক্রান্ত অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পর্কে সুপার বলেন, এখানে জনবলের সংকট রয়েছে। ফলে আবেদনের প্রেক্ষিতে সমাজের বিশেষজনদের অনুরোধে কিছু ছেলে মেয়েকে ল্যাবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একজন সিনিয়র কনসালটেন্টের অধিনে কাজ করছে। যেহেতু এই খাতে কোন সরকারী অর্থ বরাদ্ধ নেই। ফলে স্থানীয় ভাবে কিছু অর্থ কালেকশন করে তাদেরকে সামান্য সম্মানী প্রদান করা হয়।