লোহাগড়ায় বিআরডিবি কর্মকর্তার অনিয়ম-দূর্নীতি নারী কেলেংকারীর অভিযোগ নিয়ে তোলপাড়

0
533

লক্ষীপাশা(নড়াইল)প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তা জ্যোতি প্রকাশ মল্লিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দূর্নীতি ও নারী কেলেংকারীর অভিযোগ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। ক্ষমতাধর কর্মকর্তা জ্যোতি প্রকাশ মল্লিকের বিরুদ্ধে তার নিজ অফিসের নারী কর্মচারী ছাড়াও বহিরাগত একাধীক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলা বা অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদ ও বিআরডিবি অফিসের একাধীক কর্মচারীসহ স্থানীয় কয়েকজন জানান, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) কর্মকর্তা জ্যোতি প্রকাশ মল্লিক উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিআরডিবির আওতাধীন জোড়া বাড়ি কোয়ার্টারে প্রতিদিন দুপুরে যেতেন এবং সেখানে বিকাল পর্যন্ত সময় কাটাতেন। ওই জরাজীর্ণ কোয়াটারে দীর্ঘদিন ধরে বিআরডিবি অফিসের এক নারী কর্মচারী বসবাস করেন। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের অভিযোগ, ওই নারী কর্মচারীর সাথে বিআরডিবি কর্মকর্তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি সম্প্রতি জেলার উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন, বিআরডিবি কর্মকর্তাকে কয়েকবার অফিসের এক নারী কর্মচারীকে নিয়ে নৌকায় দৃষ্টিকটু অবস্থায় পার হতে দেখা গেছে। নৌকা পারাপারের সময় দেখা গেছে ওই কর্মকর্তা ওই নারী কর্মচারীর ঘাড়ের উপর অন্তরঙ্গভাবে হাত রেখে পার হচ্ছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে(ছাত্রী) অভিযোগ করেন, বিআরডিবি কর্মকর্তা জ্যোতি প্রকাশ মল্লিক নানা সময় আমাকে নানা কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি জানান, গত এক মাস আগে আমি আমার এক আত্মীয়র সাথে বিআরডিবি অফিসে গিয়েছিলাম। ওই আত্মীয়র সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বিআরডিবি কর্মকর্তা জ্যোতি প্রকাশ মল্লিক সেখানে আসেন। আমার আত্মীয় ওই কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। বিআরডিবি কর্মকর্তা জানতে চান, আত্মীয়র কাছে আমি কি কাজে এসেছি । আমি বলি, আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক কাজে এসেছি। বিআরডিবি কর্মকর্তা তখন বলেন, ইউএনও সাহেবের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক। আমি স্যারকে দিয়ে আপনার কাজ করে দিবানি। চলেন আমার রুমে গিয়ে বিস্তারিত শুনবো। সরল বিশ^াসে ওই ছাত্রী বিআরডিবি কর্মকর্তার রুমে যান। রুমে গেলে, বিআরডিবি কর্মকর্তা ছাত্রীকে বলেন, আমার কোয়ার্টারে চলেন। ওখানে নিরাপত্তা আছে। দুজনে সময় কাটাবানি। আমার সাথে সময় কাটালে আপনাকে দুই হাজার টাকা দিবানি। ওই ছাত্রী বলেন, ওই প্রস্তাবে আমি রাজি হইনি। পরে বিআরডিবি কর্মকর্তা আমাকে প্রস্তাব দেন তাঁর সাথে কোয়াকাটা সৈকতে যেতে। যাওয়া আসা খরচ বাদে নগদ ৫ হাজার টাকা সহ প্রসাধনী কিনে দিতে চান ওই কর্মকর্তা।
ওই ছাত্রী আরো অভিযোগ করেন, বিআরডিবি কর্মকর্তা আমাকে গোপালগঞ্জ নিয়ে যেতে চেয়েছেন। বলেছেন, আজ যাবেন, কাল ফিরবেন। টাকা যা লাগে, নেবেন। ওই ছাত্রী ওই কর্মকর্তার মোবাইলে কর্মকর্তার স্ত্রীর ছবি দেখেছেন। ওই ছাত্রী ওই কর্মকর্তাকে বলেন, স্যার আপনার বউতো সুন্দরী তা আপনি এসব করেন ক্যান। উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, একটু আনন্দ ফুর্তি করি আরকি। মাঝে মাঝে ওই কর্মকর্তা আমাকে ফোন দেন। আমি তার কুপ্রস্তাবে রাজি হইনি। ওই ছাত্রী আরো বলেন, স্যারের সাথে কথা বলতে এক নারী কর্মচারী আমাকে দেখেছেন। ওই নারী কর্মচারী আমার উপর ক্ষিপ্ত। আমি স্যারকে জানিয়েছি যে, আপনার সাথে দেখা বা কথা বললে আপনার অফিসের ওই নারী কর্মচারী ক্ষেপে যান ক্যান। আমার আত্মীয়র কাছে নালিশ করেছে। আমাদা গ্রামের মৃত হোসেন সরদারের ছেলে সাংবাদিক মোঃ রইচ উদ্দিন টিপু এবং লক্ষীপাশা গ্রামের মৃত আঃ সামাদ ঠাকুরের ছেলে সাংবাদিক টি,এম জহিরুল ইসলাম (জহির ঠাকুর) অভিযোগ করেন, দরিদ্র মানুষরা বিআরডিবি থেকে লোন নেয়। লোন পরিশোধে দেরি হলে তার নামে সার্টিফিকেট মামলা করা হয়। মামলা দায়েরের পর বিআরডিবি কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ভুয়া রশিদ দিয়ে ওই মামলা থেকে আসামী বা বিবাদীদের রক্ষা করেন। বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খান মশিয়ার রহমান অভিযোগ করেন, বিআরডিবি কর্মকর্তা জ্যোতি প্রকাশ মল্লিক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত। তিনি অসৎ মানুষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার বিআরডিবি কর্মকর্তা জ্যোতি প্রকাশ মল্লিক প্রতিদিনের ন্যায় নিজ অফিসের নারী কর্মচারীর সাথে আনন্দঘন সময় কাটাচ্ছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় সাংবাদিক মোঃ রইচ উদ্দিন টিপু ও জহির ঠাকুর বিআরডিবির আওতাধীন জোড়া বাড়ি কোয়ার্টারে বিকাল ৪ টারদিকে অভিযান চালান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বিআরডিবিরি কর্মকর্তা কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে এটিএন বাংলার নড়াইল প্রতিনিধি জহির ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে তালা ছুঁড়ে মারেন। এরপরই বিআরডিবি অফিসের এক নারী কর্মচারী ধারালো কোঁদাল দিয়ে জহির ঠাকুরকে কোপানোর চেষ্টা করে। ওই সময় দুপক্ষে মারামারি হয়। মোঃ রইচ উদ্দিন টিপু ও জহির ঠাকুর বলেন, আমরা জোড়া বাড়ি কোয়ার্টারে গিয়ে দেখতে পাই, জরাজীর্ণ ভবনে বিআরডিবি কর্মকর্তা খাটের উপর বসে আছেন। বেল্ট ও প্যান্টের চেইন খোলা। ওই নারী বাথরুমে। বিভিন্ন প্রশ্ন করলে ওই কর্মকর্তাসহ ওই নারী ক্ষেপে গিয়ে আমাদের আক্রমন করেন। আমরা আত্মরক্ষার চেষ্টা করি। ওই কর্মকর্তা পড়ে গিয়ে একটু বেশি আহত হন। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের রুমে বিষয়টি নিয়ে সরাহার বৈঠক হয়। লোহাগড়া প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ বদরুল আলম টিটোসহ স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজ অফিসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ সাংবাদিকদের নিয়ে বিষয়টির সূরাহা করতে বসেন। বিভিন্ন কথাবার্তার এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাংবাদিকসহ নেতৃবৃন্দদের জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব বুধবার বিষয়টির সমাধান করতে চেয়েছেন। একথা শুনে সাংবাদিকরা চলে আসেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে থানায় অন্য অফিসারদের নিয়ে উপস্থিত হয়ে এজাহার দেন। এ ঘটনায় বিআরডিবি কর্মকর্তা বাদী হয়ে ওই দুজন সাংবাদিকের নামে বুধবার লোহাগড়া থানায় চাঁদাবাজী ও মারপিট মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২০। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা(বিআরডিবি) জ্যোতি প্রকাশ মল্লিক তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতি ও নারী কেলেংকারীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের কাছে প্রমাণ থাকলে দেখাক। লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here