ফরিদ শিকদার, বাগেরহাট : আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। ‘বাঘ সুরক্ষায় শপথ করি, সুন্দরবন রক্ষা করি- স্লোগান সামনে রেখে মোংলায় নানা আয়োজনে পালিত হবে দিনটি। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মোংলা শাখা, পশুর রিভার ওয়ার্টার কিপার, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ,মোংলা সাহিত্য পরিষদ, তারুণ্য মোংলা, শুদ্ধপ্রাণ সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ফেরিঘাটের মেরিন ড্রাইভ সড়কে সকাল ১১ টায় বাঘ সুরক্ষা ও সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে র্যালী, মানবন্ধন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার তথা বনবিভাগের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে পাচঁ বছরে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪ টিতে উন্নীত হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালের জরিপে ১০৬টি বাঘ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ পাঁচ বছরে বাঘ বেড়েছে মাত্র ৮টি। তবে গত পাঁচ মাসে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২ টি ও শরণখোলা রেঞ্জে ১টি বাঘ মারা গেছে। বনবিভাগ আরো জানিয়েছে, বাঘ সুরক্ষায় সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাইগার সেফটি জোনিং পদ্ধতির মাধ্যমে সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে সর্বশেষ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী ২০২৭ সালের মধ্যেই সুন্দরবনে বাঘের ক্যারিং ক্যাপাসিটির পরিমিত সংখ্যায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। সুন্দরবনে বাঘ কমে যাওয়ার পেছনে যেসব কারণগুলো রয়েছে তা হল- চোরা শিকারি চক্রের তৎপরতা, পাচার, বনাঞ্চলের নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং কীটনাশক প্রয়োগ। লবণাক্ত ও কীটনাশকযুক্ত পানি পান করে বাঘ লিভারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড এবং গ্লোবাল টাইগার ফোরামের তথ্য মতে, বিশ্বে বাঘ রয়েছে এমন ১৩টি দেশে ১৯০০ সালে বাঘ ছিল এক লাখ। এরপর গত এক শতাব্দীতে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা ৯৬ শতাংশ কমে ২০১৩-১৪ সালে দাঁড়ায় মাত্র ৩ হাজার ২০০টিতে। একই ভাবে সুন্দরবনে ২০১০ সালের জরিপে সাড়ে চারশ’ বাঘ থাকলেও ২০১৩-১৪ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কমে মাত্র ১০৬টিতে দাঁড়ায়। তবে সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষের দিকে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে এবং ২০১৮ সালের প্রধমার্ধে খুলনা ও বাগেরহাট রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে জরিপের ফলাফলে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি বলে জানা যায়।বন, পরিবশে ও জলবায়ু উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বাঘ সুরক্ষায় কাজ করছে সরকার। যার ফলাফল হিসেবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়াও সুন্দরবনে বণ্যপ্রাণী নিধনকারী, বিষ দিয়ে মাছ শিকারের সাথে যারা জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা বলে জানান তিনি।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি শেখ মো.নূর আলম জানান, গত পাঁচ মাসে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২ টি ও শরণখোলা রেঞ্জে ১টি বাঘ মারা গেছে। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের কারনে বাঘের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তিনি আরো জানান, বাঘের প্রধানতম আশ্রয়স্থল সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে প্রকল্পভিত্তিক কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও তা কোনো ভাবে কার্যকর ও দৃশ্যমান ভূমিকা রাখছে না। তাই ভবিষ্যতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের প্রাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিলুপ্তি রোধে দীর্ঘমেয়াদি ও গবেষণাভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।সুন্দরবনের করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, ২০১৫ সালের বাঘ জরিপের পর পাঁচ বছরে সুন্দরবনে বাঘের প্রাকৃতিক আবাসস্থল সুরক্ষা, অবৈধ শিকার ও হত্যা বন্ধে জিরো পোচিং থিওরি গ্রহণ, বাঘের বিভিন্ন হটস্পটগুলোতে যথাযথ মনিটরিং এবং টাইগার প্রজেক্ট বাস্তবায়নসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪টি হয়েছে।