স্টাফ রিপোর্টার : যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে পণ্যজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ধারনমতার দ্বিগুণ পণ্য বন্দর অভ্যন্তরে রয়েছে বলে বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একটি ট্রাক ভারত থেকে প্রবেশ করে পণ্য খালাস করে ফেরত গেলে আরেকটি ঢুকছে। বন্দর অভ্যন্তরে স্থানাভাবে পণ্য খালাসের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যবসায়ীরা গুরুতর তির শিকার হচ্ছেন। অবশ্য বন্দর কর্তৃপ বলছেন,করোনা মহামারির কারণে বন্দর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করে আমদানি বাড়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের আগে-পরে দশদিন শুধুমাত্র ভারত থেকে পণ্য এসেছে। বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য ডেলিভারি হয়নি। সরকারি বিধিনিষেধ, বর্ষা ও ফেরিঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী বন্দর থেকে পণ্য খালাস না নেওয়ায় পন্যজট বেড়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ভারত থেকে প্রতিদিন স্বাভাবিক সময়ে পণ্যবোঝাই সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০টি ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আসতো। এখন এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনশয়ের মতো। করোনাকালে প্রতিদিন ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভারত থেকে পন্যবাহী ট্রাক ঢুকিয়ে তা বিকেল পাঁচটার মধ্যে ফেরত পাঠানোর নিয়ম থাকলেও ওরা সকাল নয়টার আগে ট্রাক ঢোকাতে পারে না। আর রাত দশটা পর্যন্ত ট্রাক আসতে থাকে। এতে দিনের দিন ট্রাক ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ট্রাক আটকে থাকছে। সোমবার রাতে ঢোকা এমন ১৭৭টি ট্রাক আটকে আছে। এটা ওদের অনিয়মের কারণে হচ্ছে।
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স স্থলবন্দর সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে জায়গা সঙ্কট দীর্ঘদিনের। আমরা বারবার জায়গা বাড়ানোর দাবি করলেও কেউ শুনছেন না। বন্দরে জায়গা সঙ্কটের কারণে পেট্রাপোলে হাজারো পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। বন্দরের আশপাশে বেসরকারিভাবে ওয়্যারহাউস নির্মাণ ও আইসিটি গড়ে তোলাটা এখন সময়ের দাবি,’ বলেন মতিয়ার। যশোর মোটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহিনুর হোসেন বলেন, বেনাপোলে পণ্যজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ওপার থেকে বেনাপোলে প্রবেশ করতে দশ দিন সময় লাগছে। আবার তাড়াহুড়া করে পণ্য খালাস করায় অনেক সময় পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। পণ্যাগার, ইয়ার্ড ও জায়গার অভাবে বন্দরটি অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ধীরে ধীরে বন্দরটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই বন্দরকে আরো গতিশীল করতে প্রথমেই জায়গা সঙ্কট দূর করতে হবে। জায়গা সঙ্কটের কারণে অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। এই ব্যবসায়ী নেতার দাবি, বেনাপোল বন্দরকে বাণিজ্যের উপযোগী করে তুলতে এর ধারণ মতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণ করতে হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বাড়াতে হবে পণ্য উঠানামার যন্ত্রপাতি। সরকার যদি দ্রুত পদপে গ্রহণ না করে তাহলে বন্দরটি শিগগিরই অচল হয়ে পড়বে। বন্দরের জায়গা সঙ্কট ও যন্ত্রপাতি স্বল্পতার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপরে উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ দুটি ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পণ্য ধারণমতা বেড়েছে। ২৫ একর জায়গা আমরা অধিগ্রহণ করেছি। আরো সাড়ে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। শিগগিরই ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোলে কার্গো ভেহিক্যাল টারমিনাল স্থাপনের কাজ শুরু হবে। করোনার কারণে কাজ একটু পিছিয়ে যাচ্ছে। এসব বাস্তবায়ন হলে এই বন্দরে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ‘বন্দর থেকে পণ্যচালান খালাসের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সাথে সবাইকে কাজ করার জন্য বলেছি। আমরা পূর্ণপরিসরে স্বাভাবিক সময়ের মতো অফিস খোলা রেখেছি। দ্রুত পণ্যচালান খালাসের জন্য সবসময়ের জন্য প্রস্তুত আছি।