প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ঐতিহাসিক বাস্তাবতায় জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে ব্রিটিশ আমলের সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের ধারাবাহিকতায় পূর্বপাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের উত্তরসূরি হিসেবে ১৯৭৩ সালের ২৩ আগস্ট জাতীয় ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বক্তারা বলেন, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীরূপে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর পাল্লা বৃদ্ধির করে চলেছে। এ নিয়ে আন্তঃসা¤্রাজ্যবাদী দ্ব›েদ্ব আমেরিকা ও চীন একে অপরকে দোষারোপ করলেও এ ধরনের ভাইরাসের উদ্ভবের প্রকৃতিগত কারণ ছাড়াও পুঁজিবাদী- সা¤্রাজ্যবাদীদের প্রকৃতি বিধ্বংসী সকল রূপের তৎপরতা এর জন্য দায়ী। এই বৈশ্বিক মহামারীর (চধহফবসরপ) অদৃশ্য শত্রæর বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, এমনকি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মূলত সুরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়াই সেবা প্রদান করতে গিয়ে অনেককে সংক্রমিত হয়ে আত্মোৎসর্গ করতে হয়েছে। তদুপরি প্রচলিত সমাজের চিকিৎসাব্যবস্থা আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধির জন্যে দায়ী। একক পরাশক্তি মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদসহ অন্যান্য সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলি এই সমস্যা মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ মুনাফাভিত্তিক ব্যক্তি মালিকানাধীন চিকিৎসাব্যবস্থা। আর নয়াঔপনিবেশিক দেশগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থার দুরবস্থা উন্মোচিত হয়েছে বাংলাদেশের চিকিৎসার প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠার মধ্যদিয়ে। আবার ভ্যাকসিন ও ঔষধ নিয়ে আন্তঃসা¤্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা ও মিথ্যাচার কোভিড-১৯ মোকাবেলাকে কঠিন ও জটিল করাসহ বিশ্বজনগণকে বিভ্রান্ত করছে। করোনা মোকাবেলায় জনগণকে সচেতন না করে আতঙ্কিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে এর অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক তথা সামগ্রিক প্রভাবে দেশে দেশে কর্মহারা বেকারদের আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করার অপকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কোভিড-১৯সহ সামগ্রিক সঙ্কটের কারণ উৎপাদন সামাজিক কিন্তু মালিকানা ব্যক্তিগত। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বণ্টন নিয়ে আন্তঃসা¤্রাজ্যবাদী দ্ব›েদ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ৫-জি কার্যকরী করা নিয়ে সুতীব্র দ্ব›দ্ব এবং পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রচলিত শিক্ষার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল শিক্ষা সর্বজনীন করার তৎপরতা আমাদের মত নয়াঔপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক দেশে বিদ্যমান শিক্ষা সঙ্কট ও বৈষম্যকে ব্যাপকতর করছে। করোনা মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ‘নো টেস্ট নো পজেটিভ’ কৌশল নিয়েছে বলে ব্যাপকভাবে সমালোচনা হচ্ছে। বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সাথে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতায় জনস্বার্থ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। সম্প্রতি কক্সবাজারে সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা পুলিশ চেকপোস্টে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকারে দেশে সেনাবাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে দূরত্ব ও নানা তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। এতে বাহিনী দুইটির মধ্যে সমন্বয়হীনতার প্রশ্ন সামনে আসছে। জনস্বার্থে দুযোর্গ-মহামারী-দুর্নীতি-ক্ষু
সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রক্রিয়ায় শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের অবস্থা পূর্বের ধারাবাহিকতায় আরও সমস্যা-সঙ্কটগ্রস্থ হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে এসএসসি পরীক্ষা হলেও এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা হয়নি। ইতিমধ্যে অনলাইনে, সংসদ টিভি ও রেডিওতে বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। দেশে ইন্টারনেট অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা, গ্রামের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে অন্তরায় দেখা দিয়েছে।
সা¤্রাজ্যবাদের দালাল এদেশের শাসক-শোষক গোষ্ঠী কখনো ছাত্র সমাজের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখেনি বা রাখতে পারে না। তারা সমস্যা সঙ্কটকে দিনে দিনে বাড়িয়ে চলেছে। ছাত্র সমাজের এই সমস্যা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এ দেশের সামগ্রিক সমস্যার জন্য দায়ী সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দালাল সরকারগুলো। এ দেশের ছাত্র সমাজের রয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান ও ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের এক গৌরবময় ভূমিকা। ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের আহ্বান আসুন, সা¤্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকার এবং শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলি এবং এ আন্দোলন শ্রমিক-কৃষক-জনগণের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করে সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামকে বেগমান করি। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।