মালেকুজ্জামান কাকা, যশোর : যশোর শহরের নয়টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ ওয়ার্ডের কমুনিটি পুলিশিং ফোরাম কমিটি চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারনে বন্ধ হয়ে গেছে। ৬নং ওয়ার্ডেরও দুইটি পুলিশিং কমিটি এখন প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সকলকে ডিঙ্গিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে চলেছে এই ওয়ার্ডের রায়পাড়া মাদ্রাসা রোডের কমিটি। প্রশংসাজনক সামাজিক কাজ করছে বলে এখানকার পুলিশিং ফোরাম কমিটি কার্যালয়ে একজন বিট পুলিশ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই কার্যালয়ে বসে বিট পুলিশ অফিসার তার প্রশাসনিক কাজ নির্বিঘেœ করছেন। যেখানে অন্য কমুনিটি পুলিশিং কমিটি বন্ধ সেখানে রায়পাড়া মাদ্রাসা রোডের একই কমিটি কিভাবে চলছে তা জানালেন এই কমিটির সভাপতি নুর ইসলাম ওরফে সার্জেন্ট (অব:) বাবু ও সাধারন সম্পাদক মাহামুদুল হাসান বাবু। রায়পাড়া মাদ্রাসা রোড কমুনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি নুর ইসলাম ওরফে সার্জেন্ট (অব:) বাবু বললেন, শুরু থেকেই আমরা জনকল্যাণমূলক সামাজিক কাজ করে আসছি। এখানে কোন স্বজনপ্রীতি নেই, কোল টানা বিচার হয়না। গরীবকে দন্ডিত করার সিস্টেম নেই। তাই আমরা কেনা জানে বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর মাদক স্পট রায়পাড়া। সন্ত্রাস আর মাদক এখানে একসময় একাকার ছিল। ছিল তাদের পিছনে শক্ত প্রভাবশালী মহল। কিন্ত সকল চোখরাঙানী এড়িয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে একের পর এক কর্মসূচি এই এলাকায় চালু করেছি। আজ তাই রায়পাড়া সামাজিক মানুষের আদর্শ বসবাসের একটি মহল্লা। এখানে এখন না আছে চাঁদাবাজি, না আছে সন্ত্রাসীদের হুমকি ধামকি না আছে মাদকের কারবার। শক্ত হাতে কমুনিটি পুলিশিং ফোরাম কমিটি পুলিশকে সাথে নিয়ে মাদকের রমরমা বেচাকেনা থামিয়ে দিয়েছি। শুধু তাই নয় এখন এখানে কেউ মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে ভয় পায়। এজন্য আমরা প্রশংসার দাবিদার। তবে প্রশাসন ও সাধারন মানুষ মুখের প্রশংসায় প্রায়ই আমাদের ভাসায়। কথাটি শুনে এসময় উপস্থিত সকলেই হেসে ফেলেন। সভাপতি জানান, ২০১৬ সালে যাত্রা শুরুর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানেও যেমন একজন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুমন ভক্তের প্রত্যক্ষ তদারকিতে কমুনিটি পুলিশিং ফোরাম রায়পাড়া মাদ্রাসা রোডের কমিটিটি তার কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমাদের কাজে খুশি হয়ে প্রশাসন একই কার্যালয়ে ৬নং ওয়ার্ড বিট পুলিশিং কার্যালয় স্থাপন করে পুলিশের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এই বিট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যশোর কোতয়ালী মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার আফম মনিরুজ্জামান।
রায়পাড়া মাদ্রাসা রোড কমুনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারন সম্পাদক মাহামুদুল হাসান বাবু জানান, আমরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করেই মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। অন্য কমিটিগুলো চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করতো। এখানেই আমরা অন্যদের থেকে আলাদা। আর তাই তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে আর আমরা খুব ভালো ভাবে টিকে আছি। তিনি আরো জানান, প্রতি মাসে গড়ে এই অফিসে ১৬ থেকে ২০টির মত সামাজিক শালিষ হয়। পারিবারিক কলহ, জমাজমি সীমানা নির্ধারন, বিবাহ বিচ্ছেদ বা সংসার টিকিয়ে রাখা, নারী ও শিশু পাচার রোধ, মাদক সংক্রান্ত শালিষ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম হলেও আমরা তার শালিষ করি। এ কারনে শুধু ৬নং ওয়ার্ড নয় যশোর পৌরসভা এবং শহরের বাইরের গ্রামের সামাজিক শালিষ আমাদের পরিচালনার মাধ্যমে মীমাংষা করতে হয়। এ কারনে সকাল থেকে শুরু করে কোন কোন দিন গভীর রাত অব্দি আর নাওয়া খাওয়া হয়না। চা-বিস্কুট-কেক দিয়ে খাওয়ার কাজ সারতে হয়। শালীষ শেষ করে তবেই মুক্তি হয়। তিনি আরো জানান, কমুনিটি পুলিশিং ফোরাম রায়পাড়া মাদ্রাসা রোড কমিটির আওতায় প্রতি মাসে টিকা পর্বের আয়োজন করা হয়। এখানে বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের আয়োজন করা হয়। নিজস্ব অর্থায়নে প্রতি বছর দুইটি শীত বস্ত্র বিতরন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেখানে দরিদ্রদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরন করা হয়। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা ভূক্তভোগীদের সহযোগিতা করছি। মাস্ক, অষুধ, ত্রান বা খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এটিও অন্যান্য কমুনিটি পুলিশিং কমিটি করেনা। এখানেও আমরা এগিয়ে।
রায়পাড়া মাদ্রাসা রোড কমুনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি নুর ইসলাম ওরফে সার্জেন্ট (অব:) বাবু জানান, ১৬/০৩/২০১৭ দিনটিতে যশোর জিলা স্কুল অডিটরিয়ামে ১০ জেলার ২২ জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় ও খুলনা বিভাগীয় পুলিশের ডিআইজি মনিরুজ্জামান। সরকারের উদ্যেগে আমরা সমন্বয় করে মাদক ব্যবসায়িদের সামাজিক পূন:বাসনের সুযোগ দিয়েছিলাম। একই ভাবে মাদক, সন্ত্রাস, ছিনতাই-চাঁদাবাজি রোধে আমাদের ৩৩ সদস্যের কমিটি শুরু থেকেই একনিষ্ঠ কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের কাজে কোন স্বজনপ্রীতি নেই, ন্যয় সঙ্গত আইন সাপেক্ষে শালিষ করি বলে এখানে মানুষ আসে। অনেক শালিষ আমরা নিতে রাজি না হলেও মানুষ শোনেনা। এ কারনে কমুনিটি পুলিশিং ফোরামের দায়িত্¦ পালন করতে যেয়ে অনেক সময় আমাদের নিজেদের পরিবারের কাজ করা হয়না। তবে সামাজিক কাজের আনন্দ ভিন্ন তাই সে কথা আর মনে রাখিনা। রায়পাড়া মাদ্রাসা রোড কমুনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি নুর ইসলাম ওরফে সার্জেন্ট (অব:) বাবু ও সাধারন সম্পাদক মাহামুদুল হাসান বাবু বলেন, সুষ্ঠ ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হলে কমুনিটি পুলিশিং ফোরামের সামাজিক কমিটির পদধারী বা দায়িত্ববানদের ভাতার ব্যবস্থা করাটা জরুরী। কেননা পকেটের টাকা খরচ করে ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, আপ্যায়ন ও অন্যান্য খরচ করাটা কষ্টকর। একারনে সরকারের উচিৎ এই খাতে দায়িত্বশীলদের ভাতার আওতায় আনা। তা হলে সকলের জন্য মঙ্গলজনক। কেননা ভাতা বরাদ্দ হলে কাজের দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। তখন সামাজিক কাজে মন আরো বেশি দেওয়া যায়। পকেটের টাকা খরচ করে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন খুবই কষ্টকর। তাই আমরা ভাতার দিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।