একটি শর্ত পুরোনে ব্যর্থ হওয়ায় এমপিও পাওয়া থেকে বঞ্চিত চৌগাছার একটি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিনা বেতনে চাকুরী করতে করতে অবসরে যাওয়ার উপক্রম

0
249

এম হাসান মাহমুদ চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছার ঝিনাইকুন্ড সাদিপুর জামিরা নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পর এমপিওর সুযোগ পেলেও তা হাতছাড়া হয়ে যায়। স্থানীয় এক শিল্পপতি প্রতি মাসে কিছু সম্মানী দিতেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে সেটিও বন্ধ। বিদ্যালয়টি পুনরায় এমপিও ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক কর্মচারীসহ এলাকাবাসি। গ্রামের অসহায় গরীবের ঘরে জন্ম নেয়া মেয়ে শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষে ২০০০ সালে উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের জামিরা গ্রামে অত্যান্ত মনোরম পরিবেশে ৫৮ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় বালিকা বিদ্যালয়। স্থানীয় কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্বের হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় ঝিনাইকুন্ড সাদিপুর জামিরা নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আলো ছড়াতে থাকে বালিকা বিদ্যালয়টি। বর্তমানে প্রায় ২শ শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। আর শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা ১১ জন। প্রতিষ্ঠালগ্নে স্থানীয়দের সহযোগীতায় একটি টিন সেটের ভবন নির্মান করেন শিক্ষক কর্মচারীরা। বিদ্যালয়ের ভাল ভবন বলতে ওই টিন সেটের ভবনটিই বিদ্যমান। প্রতি বছর জেএসসি ও এসএসসিতে বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা চমক সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এমনটিই জানালেন এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়টি এমপিও না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝেও বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে শুধু মাত্র পিতা মাতার সাথে থেকে একটি চাকুরী করবেন এই মানষে বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে যোগদান করি, বিদ্যালয়ে অনেক টাকাও খরচ করি, কিন্তু চাকুরী করতে করতে অবসরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে অথচ আজও মেলেনি সরকারী বেতন। উপজেলার বিশিষ্ঠ শিল্পপতি রায়হিন সাহেব প্রতি মাসে একটি সম্মানী দিতেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে তিনি সেটি বন্ধ করে দিয়েছেন। সে কারনে অনেক কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে সকলকেই। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দার রহমান বলেন, উপজেলা সদর হতে বেশ দুরে এই বিদ্যালয়টির অবস্থান। এলাকার গরীব অসহায় পরিবারের মেয়ে সন্তানরা বাড়িতে থেকেই পড়া লেখার সুযোগ পাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক কর্মচারী তাদের মেধার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০ বছর ধরে বেতন নামক সোনার হরিনকে আমরা চোখে দেখতে পাইনি।
প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম পলাশ জানান, ২০১৯ সালে সর্বশেষ এমপিও ঘোষনা করেন সরকার। আমরাও আবেদন করি। কিন্তু আবেদেনে যে ৪টি শর্তের উপর সরকার এমপিও দিয়েছেন তার ৩টি পুরোনে আমরা সামর্থ হলেও ১টি পারেনি। সেটি হচ্ছে সর্বশেষ এসএসসি পরীক্ষায় ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে, আমাদের ছিল ২৬ জন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি গ্রামে অবস্থিত, সে কারনে জেএসসি পাশ করার পর অনেকে উপজেলা সদরে চলে যায়। আর যা থাকে এরমধ্যে এসএসসি পাশের আগেই অনেকে নানা কারনে ঝরে পড়ে। ফলে ২৫/৩০ এর বেশি আমরা পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠাতে পারিনা। ফলে সরকার ঘোষিত এমপিও তালিকা থেকে আমরা বাদ পড়েছি। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের প্রাণ শিক্ষার্থী, সেই শিক্ষার্থীর কোন কমতি নেই, প্রতি বছর রেজাল্টও ভাল তারপরও একটি মাত্র শর্তের কারনে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও পায়নি। শিক্ষক কর্মচারীর মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটির এমপিও হওয়া জরুরী। সে জন্য তিনি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here