নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নাট্য সংগঠন বিবর্তন যশোরের ৩১ বছরপূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ফলদ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সবুজ শহরের প্রত্যাশায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে ১২ অক্টোবর এ কার্যক্রম শুরু হয়। ‘সংগ্রামে সৃজণে মানুষের পাশে, মানুষের সাথে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ‘ব্লাড ডোনার ব্যাংক’ গঠনের লক্ষ্যে রক্তদান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংগঠন কার্যালয়ে ৯ অক্টোবর এ উৎসব শুরু হয়েছে। বিবর্তন যশোরের ৩১ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে উৎসব উপলক্ষে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। বিবর্তন যশোরের গণমুখী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শহরের উপশহর কলেজ চত্বরে বৃক্ষরোপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল। করোনাকালীন বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এ উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবর্তন যশোরের সভাপতি সানোয়ার আলম খান দুলু। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতজন দীপংকর দাস রতন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কলেজের সহকারী শিক্ষক শাজাহান আলী, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শিল্পী সৃষ্টি যশোরের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক রবি। সঞ্চালনা করেন উৎসব আয়োজন কমিটির সদস্য শফিকুল আলম পারভেজ। এরপর যশোর বালিকা বিদ্যালয় ও গ্রীণ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করা হয়। কর্মসূচি পালন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যশোর জেলা শাখার সভাপতি হারুণ অর রশিদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য সুকুমার দাস, যশোর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রাবণী সুর, গ্রীণ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি প্রণব দাস, বিবর্তন যশোরের সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান রনি, বিবর্তন যশোরের ৩১ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক নওরোজ আলম খান চপল, সদস্য সচিব দীপংকর বিশ্বাসসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ। উৎসব বিষয়ে বিবর্তন যশোরের ৩১ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব দীপংকর বিশ্বাস জানান, ১২ অক্টোবর বিবর্তন যশোর ৩২তম বর্ষে পদার্পণ করছে। আর এ দিনটিকে স্মরণীয় করতে বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় সংক্ষিপ্ত এ উৎসবে রক্তদান, বৃক্ষরোপনসহ গণমূখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রক্ষদান কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপন কার্যক্রম চলবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্তব। এছাড়া ১৬ অক্টোবর উৎসবের সমাপনী দিনে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সন্ধ্যায় ৫জন সোনার বাংলার সোনার মানুষকে (কৃষক, শ্রমিক, গাছি, পরিচ্ছন্নকর্মী ও রেমিটেন্স যোদ্ধা) সম্মাননা জানানো হবে। একইসাথে উৎসব উপলক্ষে মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘নকশীকাঁথা’। বিবর্তন যশোরের সভাপতি সানোয়ার আলম খান দুলু জানান, ‘সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে নাটক’- এ শ্লোগানকে ধারণ করে ১৯৮৯ সালের ১২ অক্টোবর বিবর্তন যশোর শহরের কেশবলাল সড়কে (সঙ্গীতপাড়া) আত্মপ্রকাশ করে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা, শোষন, দুর্নীতি, মৌলবাদের আগ্রাসনে দেশ যখন আক্রান্ত, গণতন্ত্র এবং অধিকার আদায়ের দাবিতে চারদিক যখন উত্তপ্ত সেই সময় সৌর্ন্দয্য চেতনায় পরিশীলিত একটি সুস্থ সমাজ সংস্কৃতির অঙ্গীকার নিয়েই বিবর্তন যশোর পথ চলা শুরু করে। বিবর্তন একটি আন্দোলন, একটি সমাজ চেতনা, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের সমাজ সংস্কৃতির অভিব্যক্তি।
তিনি জানান, যশোর এ সংগঠনটি ১৯৮৯ সালে ‘ইতিহাসের পাতা থেকে’ নাটক মঞ্চস্থের মধ্য দিয়ে বিবর্তনের নাট্যচর্চা শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় একশত নাটকের (মঞ্চ, পথ ও শিশু) প্রায় চার সহগ্রাধিক প্রদর্শনী হয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো, যুদ্ধ, ইতিহাসের পাতা, পাইচো চোরের কেচ্ছা, পুরস্কার, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, মহাবিদ্যা, বিসর্জন, মনের আয়না, বিবাহ প্রস্তাব, রাজা প্রতাপাদিত্য, সিসিফাস, কৈবর্ত গাঁথা, হট্টমালার উপারে, জন্তুু ও আলোচিত মাতব্রিং। মাতব্রিং নাটকটি বিশ্ব অলিম্পিয়াড থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়। তিনি আরও বলেন, ভারতের দিল্লি, মুর্শিবাদ, কোলকাতা, নদিয়াসহ পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন স্থানে বির্বতন এ পর্যন্ত ১৬ বার আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করে সুনাম কুড়িয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হয় দেশের বাইরে নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ। এছাড়া বির্বতন এ পর্যন্ত জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ৪০টি নাট্য উৎসবে এবং শতাধিক পথনাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে। বিবর্তনের রয়েছে যশোর সরকারি এমএম কলেজে একটি শাখা। সম্প্রতি খোলা হয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। যা শিার পাশাপাশি কলেজের সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে প্রসার ঘটিয়ে চলেছে।