মালেক্জ্জুামান কাকা, যশোর : যশোরের মণিরামপুর উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ নিলামকে কেন্দ্র করে হামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানমের ব্যক্তিগত সহকারী মনিরুল ইসলাম নয়ন ছুরির আঘাতে আহত হয়েছেন। ঘটনার সময় আরো আহত হন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সন্দ্বীপ ঘোষ ও সবুজ কর নামে এক যুবক। ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে হামলাকারীরা উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানমকেও লাঞ্ছিত করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান বুধবার প্রেসকাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি সকল ঘটনার জন্য প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে ভাগ্নে উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ও তার সন্ত্রাসীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম ছাড়াও আহত সন্দ্বীপ ঘোষ, আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ ঘোষ, মিকাইল হোসেন, কাজী টিটো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, হামলায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে ভাগ্নে উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু, বিএনপি থেকে রাতারাতি আওয়ামী লীগে নাম লেখানো আলমগীর হোসেন রানা, কুদ্দুস জড়িত। তাছাড়া এই বাচ্চু চক্রবর্তী ৫৪৯ বস্তা সরকারি ত্রানের চাল চুরি মামলায় চার্জশীটভূক্ত আসামী। (মামলা নং এস.টি.সি ১৬১/২০২০) তা সর্ত্ত্বেও তিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। তার বহিষ্কার হওয়ার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে তা হয়নি। উল্টো প্রকাশ্যে থেকে থেকে সে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। প্রশাসন তাকে ধরছেনা। তার কারনে প্রতিটি ওপেন টেন্ডারে রাষ্ট্র আর্থিক ক্ষাতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন বাচ্চু গং উপজেলা চেয়ারম্যানকেও পদচ্যুুত করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে নানা ভাবে।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে এই ঘটনা ঘটে। হামলার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী ওই মাঠে নিলাম ডাকার কাজ করছিলেন। নাজমা খানম জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৭টি গাছের নিলাম ডাকা শুরু করেন এসিল্যান্ড। নিলামে অংশ নিতে সেখানে যান তার পড়শী হাবিবুর রহমান হাবিব ও সবুজ কর নামে দুই ব্যবসায়ি। এসময় বাচ্চু বাহিনী তাদের মারধোর করে তাদের কাছে থাকা টেন্ডারের তিন লাখ টাকা কেড়ে নিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখে। খবর পেয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী নয়ন ও সবুজসহ ৫-৬ জনসহ উপজেলা চেয়ারম্যান সেখানে যান। তারা নিলামে অংশ নিতে গেলে একদল যুবক তাদের বাধা দিয়ে একটি কে আটকে রাখে। খবর পেয়ে সন্দ্বীপ ঘোষসহ সেখানে উপস্থিত হন তিনি। সেখানে পৌঁছুলে পেছন থেকে সন্দীপ ঘোষের মাথায় আঘাত করে এক দল দুর্বৃত্ত। ওই সময় নয়ন ও সবুজ এগিয়ে এলে নয়নের পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। মারপিটের শিকার হন সবুজ। ঘটনার প্রতিবাদ করলে তিনিও লাঞ্ছিত হন। সবুজ বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি এবং চিকিৎসা নিচ্ছেন। নাজমা খানম অভিযোগ করেন, এসিল্যান্ডের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে তাকে নিলাম বন্ধ রাখতে বলা হয়। সবকিছু উপো করে তিনি নিলামের কাজ চালিয়ে যান।
এদিকে আহত নয়ন, সন্দ্বীপ ঘোষ ও সবুজকে দুপুরে মণিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বিকেলে নয়ন ও সন্দ্বীপ ঘোষকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। এসিল্যান্ড খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, হামলার ঘটনা জানি না। উপজেলা চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছেন, তার লোকজনকে টেন্ডারে হাজির হতে দেওয়া হচ্ছে না। আমি পুলিশের সহযোগিতায় তাদের আনার চেষ্টা করেছি। তারা আসেননি। তিনি বলেন, ‘নাজমা খানম ফোন করে আমাকে টেন্ডার বন্ধ রাখতে বলেছেন। কিন্তু এই কাজের সভাপতি ইউএনও। টেন্ডার বন্ধ করতে হলে ইউএনও-এর লিখিত অনুমিত লাগবে। তার অনুমিত বাদে আমি কাজ বন্ধ রাখতে পারি না। বরং টেন্ডার বন্ধ রাখতে বলে উপজেলা চেয়ারম্যান সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে অপরাধ করেছেন। মণিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান বলেন, হামলার ঘটনায় এখনো থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রজাতির ৩৭টি গাছের নিলাম কাজ শুরু হয়। সরকারের প থেকে এসিল্যান্ড খোরশেদ আলম চৌধুরী দুই লাখ ৭৫ হাজার ৩১৮ টাকা ভিত্তিদর ঘোষণা করেন। পরে পারখাজুরা এলাকার দীপংকর হালদার নামে একজন তিন লাখ ২৬ হাজার টাকায় নিলামে গাছগুলো কিনে নেন। এই ঘটনা নিয়ে সৃষ্ট গণ্ডগোলে লিপ্ত দুই পই সরকারি দলের।
Home
যশোর স্পেশাল নিলাম নিয়ে মণিরামপুরে মারপিট ছুরিকাঘাত যশোর প্রেসকাবে উপজেলা চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন