মোঃ রাহাত আলী, স্টাফ রিপোর্টার, মণিরামপুর : ছেলে হবে ডাক্তার। এমন টাই স্বপ্ন মায়ের। কিন্তু কেমন করে হবে, সেই ভাবনাও মায়েরই। কারণ প্রতিদিন চুলোয় আগুন না জ্বালালে পেটের খাবারই জোটবে না। সেই চুলোতেই আগুন দেয়া যার রোটিন মাফিক কাজ। নারীর নাম সালমা বেগম। ছোট্ট একটা স্টল। প্রতিদিন কাজ হচ্ছে চা বানানো। মাঝে মাঝে শরীরটা কাজের সায় না দিলেও চা বানাতে যেতেই হয়। কারন এই চায়ের সাথেই যে ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন জড়িয়ে আছে।
উপজেলার ঢাকুরিয়া বাজারে কোন রকমে টিনের ছাউনি দিয়ে চলে তার দোকান। আর এই দোকান চালিয়ে তারা তিনজনের জীবন চলে। একটি সংসারের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে গেল। একমাত্র ছেলেকে ডাক্তার বানানোই যেন জীবনের মূল ল্য। আর তাই তার জীবনের এমন নিষ্টুরতার গল্প শুনে সত্যিই কেঁদেছিলাম নীরবে। ঢাকুরিয়া বাজার এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চা খাওয়া। আর সেখান থেকেই পরিচয় মা নামক সালমার সাথে। শুনলাম তার সংগ্রামী জীবন কথা। দীর্ঘণ বসে তার সংগ্রামী জীবন উপলব্ধি করি। সে অল্প স্বল্প জানায় তার নিজের কথা। জানা হলো যে নারীর প্রতিটি দিন শুরু হয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। জীবনের সাথেই যুদ্ধ যার নিয়তি। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় চায়ের কেটলীতে পানি ঢালা। নাম তার সালমা বেগম। বয়স হবে ৩৫। স্বপ্ন একটাই একমাত্র ছেলেকে ডাক্তার বানানো। মা বাবা ভাই বোন কেউ পাশে নেই। তবে রয়েছে মনোবল। চায়ের দোকান করে সংসার চালানো। কিন্তু নেই, সেই চুপরি একটা ঘর করে একটা বেঞ্চি আর একটা চুলার জায়গা। দোকান চালানোর নিশ্চয়তাটুকু। এসবের মধ্যেই যুদ্ধ করে যাওয়া। এসবের মধ্যেই ছেলেকে ভাল স্কুলে পড়ানো সব মিলিয়ে যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।
মণিরামপুর উপজেলার ব্রক্ষ্মপুর গ্রামে স্বামী হাবিবুর রহমান লিটনের ৩শতক জায়গায় তৈরী করেন ৪ খুটির ছোট্ট একটি নীড়। বাস করেন তিনজন। ২০ বছর আগে সালমা বেগম হাবিবুর রহমানের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই থেকে চলে তাদের সুখের সংসার। গত ৪ বছর আগে সড়ক দূর্ঘটায় স্বামী পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়ে স্ত্রী সালমা বেগম। খেয়ে না খেয়ে চলে তাদের সংসার। এরপর সালমা বেগম নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তারপর ঢাকুরিয়া বাজারে চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন। ছোট ছেলে সাকিব ঢাকুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। সেই ছেলেকে মানুষ করার স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছেন তিনি। চায়ের স্টলই এখন তার ভাগ্য বিধাতা।
সরকারের পাশাপাশি সালমা বেগমদের মত এমন হার না মানা নারীদেরকে সহযোগীতার জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসা উচিৎ বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।