রাজগঞ্জে দেড় বিঘা ফসলি জমিতে চুঁই চাষ করে সফলতা অর্জন করতে চলেছে দুই কৃষক

0
329

আনিছুর রহমান : যে চুঁই গ্রামাঞ্চলের আগানে বাগানে ও বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন গাছের গোড়ায় লাগানো হতো সেই চুঁই ফসলি জমিতে চাষ করে সফালতা অর্জন করতে চলেছে রাজগঞ্জের দুই কৃষক। তারা দেড় বিঘা জমিতে ৮ ফুট অন্তর অন্তর জিলের কচা পুতার পর প্রতিটি কচার গোড়াই গোড়াই চুঁই চারা রোপন করেছে। চুঁই গাছের বয়স ১০ মাস পার হওয়ার পর থেকে চুঁই কাটা শুরু হবে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে জানা গেছে, মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার হায়াতপুর গ্রামের বাবর আলীর ছেলে মাস্টার রেজাউল ইসলাম ১ বিঘা জমিতে ও তার ছোট ছেলে নিজামুদ্দিন ১০ কাঠা জমিতে চুঁই চাষ করেছে। তারা গত আশ্বিন মাসের মাঝের দিকে তাদের নির্দিষ্ট দেড় বিঘা ফসলি জমিতে ৮ ফুট অন্তর অন্তর জিলের কচা পুতে নিয়েছে। জিলের কচা মরে না তাই অন্য কিছু ব্যবহার না করে জিলের কচা কাজে লাগানো হয়েছে। কারণ চুঁই গাছ জীবন্ত গাছেরা আগলে হয়ে থাকে। যার কারণে কৃষক অন্য কোন কচা বা খুটি ব্যবহার না করে জিলের কচা ব্যবহার করেছে বলে জানান চাষি। এরপর প্রত্যেকটি জিলে কচার গোড়ায় গর্ত খুঁড়ে চুঁই চারা রোপন করা হয়েছে। রোপনের দুই মাস পার হতে না হতেই চুঁই গাছ জিলে কচা বেয়ে উপরের দিকে উঠছে। এখন প্রায় সাত আট ফুট লম্বা এই চুঁই গাছের পাতা অনেকটা পানের মতো দেখতে। তাই দূর থেকে এই তেটি দেখলে মনে হয় যেন পান চাষের তে। গাছের আঙ্গার দেখে ধারনা করা হচ্ছে এই চাষে অধিক পরিমান চুঁই কাটা যাবে। এদিকে তে মালিক মাস্টার রেজাউল ইসলাম জানান, ধান, সবজিসহ অন্যন্য ফসল চাষ করতে গেলে অনেক চাষ দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হয়, ফসল চাষে প্রচুর পরিমাণ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং অধিক শ্রম দিতে হয়। কিন্তু চুঁই চাষে এসব গুলো সীমিত পরিসরে করা লাগে। কারণ আগানে বাগানের গাছের গোড়ায় চুঁই গাছ হতো। যার কারনে অন্যান্য ফসলের তুলনায় চুঁই চাষ অনেকটা সহজ ও খরচ কম। তিনি আরো বলেন এ বছর ফসলী জমিতে নতুন চুঁই চাষ করা হয়েছে। তাই কেমন ফলন পাওয়া যাবে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও ধারণা করা হচ্ছে চুঁই চাষে খরচের তুলনায় ৫ গুণ লাভবান হওয়া যাবে। এক বিঘা জমিতে চুঁই চাষ করতে প্রায় সত্তর থেকে আশি হাজার টাকা খরচ হবে। যদি ভালোভাবে চুঁই উৎপাদন হয় তাহলে বিঘাপ্রতি প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার চুঁই বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছি। চুঁই চাষের প্রতি এতো আগ্রহ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, ইতিপূর্বে আমাদের এলাকায় কখনো লেবুর চাষ করতে দেখিনি। অথচ সেই লেবু আমাদের মাঠে মাঠে চাষ হচ্ছে। তাই আমি ভাবলাম যদি মাল্টা লেবুর চাষ হতে পারে তাহলে কেন ফসলি জমিতে চুঁই চাষ হবে না। এমন চিন্তা ভাবনায় আমি ফসলি জমিতে চুঁই চাষ করার উদ্েযাগ গ্রহন করি। তাই এবারে আমাদের হায়াতপুর মাঠে নিজস্ব ফসলী জমিতে চুঁই চাষ শুরু করেছি। আশা করছি আমার চাষ দেখে এলাকায় প্রচুর পরিমান ফসলি জমিতে চুঁই চাষ করবে কৃষকরা। তাহলে চুঁই বিক্রেতা ও ক্রেতাদের আর ভোগান্তি পেতে হবে না। কারণ তারা হাতের নাগালে পাবে এই চুঁই। দেখা গেছে ব্যাপারিরা অনেক কষ্ট করে দূর-দূরান্তের গ্রাম-গঞ্জ থেকে চুঁই সংগ্রহ করে হাট-বাজারে বিক্রি করতো। এখন আর চুঁই সংগ্রহ করতে দূরের কোথাও যেতে হবে না পাওয়া যাবে হাতের নাগালে। এমন চিন্তাভাবনায় এই দুই কৃষক ফসলি জমিতে চুঁই চাষ শুরু করেছে। চুঁই গাছের বয়স ১০ মাস পার হওয়ার পর থেকে চুঁই কাটা শুরু হবে বলে তিনি জানান। এদিকে ফসলী জমিতে চুঁই চাষ করার বিষয়ে কথা হয় উপজেলার চালুয়াহাটী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মারুফুল হক এর সাথে, তিনি প্রতিনিধিকে বলেন চুঁই চাষের কথা শুনে আমি সেখানে যেয়ে দেখে অনেকটা সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে। চুঁই চাষে রোগব্যাধি অনেকটা কম এবং ব্যয়ও সীমিত তাই ফসলী জমিতে চাষ করে অনেক লাভবান হবেন চাষিরা। তবে নতুন পদ্ধতিতে ফসলী জমিতে প্রথম চুঁই চাষ করাই কি পরিমান লাভবান হবে চাষি তা বুঝা যাবে চুঁই কাটার পর। এদিকে কম খরচে ফসলী জমির চুঁই চাষ দেখে অনেক চাষি আগামীতে এ চাষ করবেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here