সুন্দরবনে শত বছরের ঐতিহ্যবাহি রাস মেলা এবার হচ্ছে না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে হবে পুণ্যস্নান

0
241

মোংলা প্রতিনিধি : করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সুন্দরবনের দুবলার চরে শত বছরের ঐতিহ্যবাহি রাস উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। মেলার পরিবর্তে শুধুমাত্র সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীরা রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর আগের বছর ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে কারণে রাস পূজা ও পুণ্যস্নান উপলে কোনো মেলা বা উৎসব হয়নি।এবার আগামি ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দূবলার চরে রাস পূজা ও ৩০ নভেম্বর সকালে দূবলার চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে রাস পূজা শেষ হবে। বন বিভাগের নির্ধারিত বিভিন্ন শর্ত মেনে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। জানা গেছে, বাংলাদেশের বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এক আকর্ষণীয় উৎসবের নাম সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোর কোলের রাস মেলা বা উৎসব। সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের পূজা অর্চনা ঘিরে এই রাস মেলা অনুষ্ঠিত হলেও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ বিদেশ থেকেও অনেক ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আসেন এই মেলায়।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে রাসপূজা উপলে রাস মেলার আয়োজনের সুবিধা-অসুবিধা ও সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে শর্তে সাপেে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা ও পুণ্যস্নানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন জানান, রাস উপলক্ষে পূণ্য ¯œান ও পূজায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের যে শর্ত দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো, ২৮ নভেম্বর রাস পূজা ও পুণ্য স্নানের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হবে। ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাস পূজা এবং ৩০ নভেম্বর সকালে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এবারের পূজা শেষ হবে। সুন্দরবনে প্রবেশ থেকে শুরু করে সার্বণিক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ভক্ত বৃন্দের। রাসপূজাগামী সকল জলযানে এবং পূজা স্থলে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্য সুরা সামগ্রী (হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ) রাখতে হবে। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রবেশ করতে পারবেন। এেেত্র অনুষ্ঠানের অন্তত সাতদিন আগে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের অফিসে ভক্তদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও লঞ্চের কর্মচারীদের তালিকাসহ আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া সুন্দরবনে রাস পূজার জন্য প্রবেশের অনুমতি প্রাপ্ত সকলকে জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হবে। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রার্থে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা তাদের সাথে রাখা জাতীয় পরিচয়পত্র পরীা করবেন। কোন ট্রলার বা লঞ্চে ৫০ জনের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না। পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, প্রত্যেক ভক্তকে তিনদিনের জন্য ৫০ টাকা, নিবন্ধনযুক্ত ট্রলারকে দুইশো টাকা এবং নিবন্ধনবিহীন ট্রলার প্রতি আটশো টাকা সরকারি রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে রাস পূজায় সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য।
এদিকে রাস মেলায় প্রবেশের জন্য এবার পাঁচটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। রুটগুলো হচ্ছে, বুড়িগোয়ালিনি, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী অতপর দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়ুয়া, শিবসা নদী মরজাত হয়ে দুবলার চর। নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। ঢাংমারী-চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ হয়ে দুবলার চর। বগী-বলেশ্বর-সুপতি কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর।
এবারের রাস পূজায় আইন শৃঙ্খলা রার্থে বনরীদের পাশাপাশি র‌্যাব-৬ খুলনা, কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন মোংলা, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের প থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োজিত থাকবেন। রাস উৎসবে আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী ব্যতীত কেউ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না। রাশ পূজা উপলে পরিবেশ দূষণ রোধেও ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপ। পূজায় আগত ভক্ত ও সংশ্লিষ্ট সকলের খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্যাকেটসহ বিভিন্ন দ্রব্য সাগর, নদী বা চরে ফেলা যাবে না। ট্রলারে রাখা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here