স্টাফ রিপোর্টার, বাঘারপাড়া (যশোর) : যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের বিবদমান দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা হামলা মামলায় জড়িয়ে পড়ছে। ঘটছে হতাহতের ঘটনা। যার কারনে আসন্ন উপজেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান পদেও উপ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমগ্র উপজেলায় বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা । নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলায় সরকারী দলের দুই গ্রুপের প্রকাশ্য বিবাদে সাধারণ ভোটাররা হতোচকিত হয়ে পড়ছেন। বাড়ছে প্রাণহানির আশংকা।
গত ৭ সেপ্টেম্বর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা নাজমুল ইসলাম কাজল। তিনি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বিপুল ভোটে নৌকাকে পরাজিত করেন। তরুণ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম কাজলের মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশন এই উপজেলার চেয়ারম্যান পদটি শুন্য ঘোষনা করে ফের নির্বাচনী তফশীল ঘোষনা করেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর এই উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭শ’ ৭৯ জন ভোটার তাদেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এদিকে আসন্ন উপজেলা পরিষদেও চেয়ারম্যানে পদেও উপ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে প্রায় একডজন নেতা দলের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রয়াত কাজলের স্ত্রী মহিলা আওয়ামীলীগের নেত্রী ভিক্টোরিয়া পারভীন সার্থীকে নৌকার মনোনয়ন প্রদান করেন দলীয় প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। রাজনীতির মাঠে ও ভোটের রাজনীতিতে আনকোরা সাথী দলীয় নেতাকর্মীদেও আর্শিবাদ নিয়ে এখন মাঠে আছেন। তিনি নিজেকে প্রয়াত কাজলের স্ত্রী হিসেবে ভোটারদেও কাছে পরিচিত হচ্ছেন। তুলে ধরছেন রান্না ঘর ছেড়ে ভোটের মাঠে তার আগমনের কারন। তিনি তার প্রয়াত স্বামী কাজলের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান। তিনি বাঘারপাড়াবাসীর হৃদয়ে কাজলের যে স্থান ছিল তা আরো মজবুত করতে চান। তারই আলোকে তিনি ঘর সংসার ছেড়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোটের মাঠে রাজনীতির সাথ্ ে
এদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন জহুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা পিএম রেজাউল ইসলাম দ্বীন মোহাম্মদ (দিলু পাটোয়ারী)। দিলু পাটোয়ারি নিজেকে স্থানীয় সাংসদ রনজিত রায়ের প্রার্থী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে রাজনীতির মাঠে জায়গা কওে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তারই ধঅরাবাহিকতায় দিলু পাটোয়ারির নির্বাচনী ময়দান কাঁপাচ্ছেন এমপির সমর্থক নেতাকর্মীরা। যার কারনে বাঘারপাড়ায় এমপি ভার্সেস কাজল গ্রুপের নেতাকর্মীরা এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার ইন্দ্রা বাজারে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদেও মধ্যে দফাফ দফায় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলায় উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়। নৌকার প্রার্থী ভিক্টোরিয়া পারভীনের অভিযোগ হচ্ছে দিল ুপাটোয়ারির অতি উৎসাহী কিছু সমর্থক ইদ্রা বাজাওে নৌকার কর্মী সমর্থকদেও প্রচার কাজে ব*াধা দিলে সংঘষেৃও ঘটনা ঘটে। এসময় দিল ুপাটোয়ারির কর্মী সমর্থকরা নৌকা প্রার্থীর বেশ কয়েকজন প্রচার কর্মীকে মারপিট কওে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় ভিক্টোরিয়া পারভীনের দেবর ও জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টুটুল বাদী হয়ে দিল ুপাটোয়ারির ১৫/২০জন কর্মীকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেন। গত বৃহস্পতিবার দিলু পাটোয়ারির কর্মীদেও অনেকেই আদালত থেকে আগাম জামিন লাভ করেন। ওই দিনই দিলু পাটোয়ারি বাদী হয়ে ওই মামলার পাল্টা মামলা করেন। মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান টুটুল, শিক, ব্যাংক কর্মকর্তা, যুবলীগ নেতা, ব্যবসায়ীসহ নৌকা প্রার্থীর ২৫ নেতাকর্মী কে আসামী করা হয়েছে।
মামলায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে যুবলীগ নেতা জুলফিক্কার আলী জুলাই দাবী করেন। তিনি আরো জানান, মামলার ৩ নং আসামী খুলনা কৃষি ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় চাকুরি করেন । তাকেও দিলু পাটোয়ারির মামলায় আসামী করা হয়েছে। পার পাননি সংঘর্ষে গুরুতর আহতরাও। মামলায় আসামী করা হয়েছে, প্রয়াত নাজমুল ইসলাম কাজলের ছোট ভাই ও নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ভিক্টোরিয়া পারভিন সাথীর দেবর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম টুটুল, রামনগর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে হান্নান, ইন্দ্রা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার শহিদুল্লাহ’র ছেলে সাজ্জাদ হোসেন, জাফরের ছেলে জাকির, মৃত জহুরুল ইসলামের ছেলে শরিফুল, ফেরদৌস, আব্দুর রব ও জাকারিয়া, মুজিবর মোল্যার ছেলে ইলিয়াস, জাফরের ছেলে তরিকুল, আব্দুল মজিদের ছেলে হানিফ, আব্দুর রহমান মোড়লের ছেলে মুকুল, মৃত মহাতাব মোল্যার ছেলে জাহাঙ্গীর, আব্দুল্যা খন্দকারের ছেলে মিলন ও খন্দকার মেহেদি, সুলতান মোল্যার ছেলে মাসুদ, মালঞ্চি গ্রামের মকবুল কারিগরের ছেলে বাবর আলী, দোহাকুলা গ্রামের কাশেম মোল্যার ছেলে যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, হোসেন আলী মোল্যার ছেলে যুবলীগ নেতা জুলফিক্কার আলী জুলাই, মোশারেফ হোসেনের ছেলে শিমুল হোসেন, ভিটাবল্লা গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে কামাল, সদুল্যাপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মাহমুদ, মহিরণ গ্রামের মৃত মোনছের মোল্যার ছেলে কাছেদ আলী, মৃত নাদের হোসেন মোল্যার ছেলে কাছেদ আলী, তোরাব আলীর ছেলে হিরু আহম্মেদ। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত মঙ্গলবার রাতে ইন্দ্রা বাজারে পৌঁছালে আসামীরা তার গাড়ির গতিরোধ করে গাড়ি ভাংচুর করে দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। মামলা রুজুর বিষয়ে বাঘারপাড়ার থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন নিশ্চিত করেছেন। মামলা নং-১৫ ।
অপরদিকে গতকাল শুক্রবারও বাঘারপাড়ায় নৌকার কর্মী সমর্থকদের সাথে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনামুলক কথা কাটাকাটি ও হুমকি ধামকি প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ভোটারদের আশংকা পরিস্থিতি যে ভাবে এগুচ্ছে তাতে কওে আসন্ন নির্বাচনের প্রচার প্রচারনায় যে কোন মুহুর্তে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে। ফলে দ্রুত এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর দাবি ভোটারদের।