মোঃ রাহাত আলী, স্টাফ রিপোর্টার, মণিরামপুর:
মণিরামপুরের ইমরান হোসেন (১০) একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মা-বাবা, এক ভাই, দু’বোন মিলে সংসারের সদস্য সংখ্যা ছয়। দুরন্ত শৈশবে যেখানে খেলাধুলা, হৈহুল্লোড় আর দুরোন্তপনায় কাটার কথা তার। ঠিক সেই বয়সে শুধু দু’মুঠো ভাতের জন্যে তাকেও সংসারের উপার্জনের হাল ধরতে হয়েছে। এই কনকনে শীতের মধ্যেও প্রতিদিন ইমরান পার্শ্ববর্তী বিল থেকে শাপলা সংগ্রহ করে মণিরামপুরের গ্রাম-গঞ্জে বিক্রি করে। আর এ থেকে যে টাকা আয় হয় তা মায়ের হাতে তুলে দেয়। মা তাই দিয়ে কোন রকমে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ইমরান উপজেলার সমসকাটি গ্রামের দিনমজুর আব্দুল জলিলের পুত্র।
কথায় আছে, পেটের ক্ষুধার জ্বালা যেমন পৃথিবীর কোন কিছুর সমিকরণ মানে না! এই ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ-কুকুরকে এক ডাষ্টবিনে অনেক সময় খাদ্য খেতে দেখা যায়।
ঠিক এমন বাস্তবতায় এ বৈশ্বিক মহামারী করোনার সময় ইমরানের দিনমজুর পিতার রোজগার কমে যাওয়া ও পরিবারের চরম দারীদ্রতায় যখন না খেয়ে থাকতে হতো, লেখাপড়া বন্ধসহ দিনদিন যখন তাদের স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে উঠছিল। ঠিক তখনই জিবন বাঁচাতে একপ্রকার বাধ্য হয়ে শিশু ইমরান নেমে পড়ে শাপলা বিক্রির এ জিবন যুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে মণিরামপুর পৌর শহরে ইমরানের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। ইমরান জানায়, সে সমসকাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় ভাই জুয়েল হোসেন হোগলাডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট বোন মারিয়া ২য় শ্রেণিতে আর সবার ছোট বোন আম্বিয়া এখনো স্কুলে যায়নি। সে আরো জানায়, করোনার কারণে তার পিতার ঠিকমত আয়-রোজগার নেই। যে কারণে তাদের অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হতো। করোনায় এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে। তাই কষ্ট হলেও প্রতিদিন ভোরে উঠে বাড়ির পাশে বিল থেকে শাপলা তুলে নিয়ে মণিরামপুর বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। এ থেকে প্রতিদিন এক’শ থেকে দেড়’শ টাকা আয় হয় এবং সেই টাকা মায়ের হাতে তুলে দেই। মা তা দিয়ে আমাদের কোন রকমে ভাতের ব্যবস্থা করেন। কোন কারণে একদিন শাপলা বিক্রি না করতে পারলে সেদিন না খেয়ে থাকা লাগে। ইমরান জানায় বিলের পানি শুকায় যাচ্ছে। কয়দিন পর আর শাপলা পাওয়া যাবে না তখন না খেয়ে থাকতি হবে। মুঠো ফেনে কথা হয় ইমরানের মায়ের সাথে তিনি বলেন, আমাগের কোন জমিজমা নেই পরের ক্ষেতে ওর বাপ কিষেন দেয়। এহন এই করোনার মধ্যি ঠিকমত কাজেও বচ্ছেনা। সেই জন্যি ছালেপিলের সব ওক্ত খাতি দিতে পারিনে। এহন মাঝে ছেলের স্কুল বন্ধ তাই ও এই শীতির মধ্যি খুব ভোরে ঠান্ডা পানিতে ভিজে নাল (শাপলা) তুলে তাই বাজারে নিয়ে বেচে। যা’ আয় হয় তাই দিয়ে কোন রকমে ওদের খাওয়াতি পারতিছি। মণিরামপুর বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুর রহমান বলেন, শাপলা বিক্রির কারণে ইমরান এখন এখানকার সবার কাছে পরিচিত নাম। কারন সে প্রতিদিনই শাপলা নিয়ে মানুষের কাছে হাজির হয়। আর খুবই কম মুল্যে তা সরবরাহ করে। জানতে চাইলে সমসকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান সরকার বলেন, ইমরান মেধাবী শিক্ষার্থী কিন্তু দারিদ্রতার কারনে এ শিশু বয়সে তার সংসারের নেক কাজ করতে হয়।