আজ যশোর মুক্ত দিবস

0
359

 

স্টাফ রিপোর্টার : দশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার প্রথম স্বাধ পেয়েছিল যশোর জেলা এইদিনে। উড়ে ছিল স্বাধীন বাংলার রক্তরঙে খচিত গাঢ় সবুজ পাতাকা। ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জেলাকে প্রথম শত্রুমুক্ত করেন। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন জেলা হিসেবে এই গৌরব উজ্জল দিনটি যশোর তথা বাঙালী জাতির ইতিহাসে চির জাগরুক হয়ে আছে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সব থেকে বড় সাফল্য ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের জুলাই মাস থেকে মূলতঃ এই অঞ্চলের স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিধারা পাল্টাতে থাকে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা ভারত সীমান্তবর্তী এই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচন্ড আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সারাদেশে মোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। বৃহত্তর যশোর জেলা ছিল ৮নং সেক্টরের অন্তর্গত। এই সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (আগস্ট মাস পর্যন্ত)। সেপ্টেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বরের স্বাধীনতা অর্জনের আগমুহুর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন মেজর এমএ মঞ্জুর। হাকিমপুর সাব সেক্টরের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ ও বেনাপোল সাব সেক্টরের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম পরে ক্যাপ্টেন তৈফিক ই-এলাহী।

অসীম সাহসীকতায় মুক্তিসেনারা ভারতীয় ৯ম ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল দলবীর সিং’য়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনীর সহযোগীতায় ৫ ডিসেম্বর যশোর ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন মনোহরপুর মাঠে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে ভীত হয়ে পড়ে যশোর ক্যান্টনমেন্টের হানাদার বাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান। তিনি তার সেনা সদস্যদের গুটিয়ে নিয়ে যান ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে। ওইদিন বিকেলে যশোর ক্যান্টনমেন্টের ৩ দিকে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী। ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান ওই রাতেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে সেনাদের নিয়ে পালিয়ে যায় খুলনায়। হানাদার মুক্ত হয় যশোর জেলা। ৬ ডিসেম্বরের ভোর থেকে হানাদারমুক্ত যশোর জেলা শহরে বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে দলে দলে ফিরতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিসেনা ও স্বাধীনতাকামী মানুষ। বিকেলে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক টাউনহল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় প্রথমে শহরের রেল স্টেশনে প্রথম উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। পরে উত্তোলন করা হয় যশোর কালেক্টরেট ভবনে। মুহুর্মুহ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে যশোর শহরের চারপাশ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্পন্দিত শ্লোগানে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে প্রথম স্বাধীন জেলার স্বাদ গ্রহণকারী লাখো জনতা। এদিকে বিভিন্ন তথ্য সূত্রে কেউ কেউ বলেছেন এদিন বিকেলে যশোর টাউনহল মাঠে প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বীরমুক্তিযোদ্ধা ফটো সাংবাদিক প্রায়াত এসএম সফি জীবিত থাকাকালীন বলেছিলেন, স্বাধীন বাংলার যশোরের মাটিতে প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয় ১১ ডিসেম্বর। এই তথ্যকে সমর্থন জানিয়েছেন এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সারীর প্রধান দুই নেতা রবিউল আলম ও আলী হোসেন মনি। তারা বলেন, ১১ ডিসেম্বর ওই জনসভায় বক্তব্য রাখেন ‘মুজিবনগর সরকার’ তথা বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই সেক্টরের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ যুদ্ধের বিভিষিকাময় দৃশ্য এক হাতে স্টেনগান ও অন্যহাতে ক্যামেরা নিয়ে চিত্র ধারণ করেছিলেন যশোর তথা বাংলাদেশের গর্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী ও সাংবাদিক এসএম সফি।

তিনি আজ বেঁচে নেই কিন্তু তার পুত্র সানোয়ার আলম সানু তার পিতার সৃষ্ট মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক তথ্যচিত্র সংগ্রহশালার মাধ্যমে তা জীবন্ত করে রেখেছেন। ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় কালেক্টর্ েচত্বর হতে র‌্যালি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জাতির পিতার ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। যশোরের জেলা প্রশাসক ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর উক্ত র‌্যালীতে সবাইকে স্ব-বান্ধবে অংশগ্রহণে জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

এদিকে ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন সকাল সকাল সাড়ে ৯টায় এতিহাসিক টাউন হল ময়দান থেকে গণ আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে।

শোভাযাত্রাটি শহর প্রদক্ষিণ করে মনিহার চত্ত্বরে বিজয় স্তম্ভে পূষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। শাভাযাত্রা শুরুর আগে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের শিল্পীরা পরিবেশন করবেন জাতীয় সঙ্গীত ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কালজয়ী গণসঙ্গীত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here