শীতের আগমনের সাথে সাথে শার্শায় চাহিদা বেড়েছে মাটির তৈরি ভাড়ের

0
381

হুমায়ন কবির মিরাজ, বাগআঁচড়া প্রতিনিধি: বাংলা শিল্পের ঐতিহ্য অন্যতম স্থান দখল করে আছে মাটির তৈরি মৃৎশিল্প। প্রাচীন আমল থেকেই এই শিল্পটি লালন করে আসছে ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন কুমার শিল্পীরা। বর্তমান শীত আগত, আর এই শীতের আগমন বার্তায় বয়ে নিয়ে এসেছে রসের চাহিদা আবার অন্যদিকে চাহিদা বেড়েছে মাটির রস রাখার পাত্র বা ভার।

খুলনা বিভাগের যশোর জেলার খেজুরের রস ও গুড় একটি বিখ্যাত নাম। আর এই বিখ্যাত খেজুরের রস ও গুড় রাখার পাত্রটিকে যশোরের ভাষায় ভার বলা হয়। শীতের আগমনকে ঘিরে চাহিদা বেড়েছে এই ভাড়ের। তাইতো যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়াসহ বিভিন্ন জায়গার কুমার শিল্পীরা ব্যস্ত তাদের ভাড় তৈরীর কাজে। বাগআঁচড়ার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যাই, কুমার শ্রেণীর পেশাজীবী মানুষগুলো দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন মাটির বিভিন্ন জিনিস। যশোরের জেলার শার্শা থানার কায়বা ইউনিয়নের বাগুড়ি বেলতলা, দিঘা চালিতাবাড়িয়া, গোগাসহ বিভিন্ন এলাকার কুমার পাড়াতে দেখা গেছে বিভিন্ন রকমের মাটির জিনিস রোদে শুকানোর দৃশ্য। রোদে শুকিয়ে পরে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হবে।

সেখানে এক কুমারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তারা প্রতিদিন সকালবেলা মাটি দিয়ে তৈরি করেন তাদের জিনিস গুলো। পড়ে সেগুলো ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে দিতে হয় পাজাঁয়। রোদে শুকিয়ে শক্ত করে না নিলে ভাল মানের শিল্প কার্য সম্ভব হয় না বলে জানান এই কর্মকার।

মাটির আসবাবপত্র টি যেখানে পুড়িয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হয় সেটিকে পাঁজা বলে। যশোর জেলার শার্শা উপজেলার ৭ নং কায়বা ইউনিয়নের দিঘা গ্রামের শপন পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও মাটির তৈরি ভারসহ মাটির তৈরি মালসা, পুতুলসহ বিভিন্ন খেলনা, টালি, সরা এবং মাটির কলস রোদে শুকানো হচ্ছে। পাজাঁতেও কিছুসংখ্যক ভাড় পুড়িয়ে রাখা হয়েছে ঠান্ডা করার জন্য।

এ সময় শপন পালের স্ত্রী সোনালী পাল (৩০) কাছ থেকে জানা যায় পূর্বপুরুষদের থেকে চলে আসছে এই কাজটি। তিনি আরো, জানান শীত আসছে বলে এখন ভাড় কিছুটা বাজারে চলছে অন্যান্য পণ্য গুলো এখন আর বাজারে আগের মত চাহিদা নেই। মানুষ এখন মাটির তৈরি জিনিস গুলো বেশি একটা ব্যবহার করতে চায় না, তার জন্য আমাদের হাতের কাজ খুবই কম আমাদের অন্যান্য প্রতিবেশীরা এখন বিভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে এই শিল্পের এখন ঘুনে ধরা অবস্থা। এই শিল্পের উপর নির্ভর করে সংসার চলছে না বললেই চলে বলে জানান শপন পালের স্ত্রী।

নিবিড় বিচক্ষণে বসে থাকা শপন পালের মা কাঞ্চন রাণী (৭০) সাংবাদিকদের জানান তার বয়সে তিনি দেখেছেন এই শিল্পে চাহিদা এক সময় আকাশ ছুয়া। বাংলার মানুষ মাটির হাড়িতে রান্না করতো। এই প্রবীণ কাকিমা কাঞ্চন রাণী আমাদেরকে আরো জানান গ্রামের এক সময় সবথেকে প্রচলিত ছিল মাটির কলস। গ্রমের সবায় পানি রাখতো এই মাটির কলসে। এ সকল জিনিসপত্র সে সময় গ্রহণযোগ্যতা ছিল গ্রামের বাজারগুলোতে কিন্ত এই শিল্পের চাহিদা বর্তমান নেই বললেই চলে। প্রবীণ এই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত কাঞ্চন রাণী তার পুরনো দিনের কথা মনে করে তিনি বলেন, শার্শা উপজেলাতে এক সময় বিভিন্ন মেলা ও পুজোর মাঠে প্রচুর পরিমান মাটির তৈরি জিনিস এবং বাচ্চাদের বিভিন্ন রকমের হাঁড়িকুড়ি পুতুলের খেলনা বিক্রয় হত বর্তমান এইসব জায়গাই মাটির তৈরি মালামালওে কোন চাহিদা নেয়।

কালের বিবর্তনে বর্তমান এই শিল্পটি বিলীনের পথে আগের বর্তমান এই চাহিদা কমে গিয়েছে বিভিন্ন কারণে বলে মনে করেন এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা মিলবে আবারো ফিরে আসবে এই শিল্পের আগের অবস্থান এমনটাই ধারণা করে আশায় বুক বেধে বসে আছেন যশোরের শার্শা উপজেলার মৃৎশিল্পের কারিগররা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here