বর্জ্য সংগ্রহকারী ভ্যান চালক (বাঁশিওয়ালা) কাজে এনজিও’দের অপতৎপরতা বন্ধ, পরিচ্ছন্নতা শ্রমিকদের প্রবিধানানুযায়ি মজুরি প্রদান, ছাঁটাই বন্ধ ও অহরিজনদের পরিচ্ছন্নতা কাজে চাকুরি না দেওয়াসহ শ্রম আইন বাস্তবায়নে ২০ ডিসেম্বর শহরে বিক্ষোভ মিছিলসহ মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট স্মারকলিপি পেশ
আজ ২০ ডিসেম্বর ২০২০ রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বর্জ্য সংগ্রহকারী ভ্যান চালক (বাঁশিওয়ালা) কাজে এনজিও’দের অপতৎপরতা বন্ধ, পরিচ্ছন্নতা শ্রমিকদের প্রবিধানানুযায়ি মজুরি প্রদান, ছাঁটাই বন্ধ ও অহরিজনদের পরিচ্ছন্নতা কাজে চাকুরি না দেওয়াসহ শ্রম আইন বাস্তবায়নের দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল লাল দীঘি পাড় থেকে শহর প্রদক্ষিণ করে যশোরের মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ তমিজুল ইসলাম খান মহোদয় বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এ সময় ডিসি মহোদয়ের কার্যালয়ের সামনে ও মিছিল পরবর্তি লাল দীঘি পাড়ে পথসভা করে। পথসভায় সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি রাজেন বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক আইয়ুব হোসেন ও দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান রাজেস। পথসভায় যশোর পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মতি লাল হরিজন, সহ-সভাপতি মন্টু ডোম, সাধারণ সম্পাদক কমল বিশ্বাস, সহ-সম্পাদক হরিন লাল সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা মহামারী মোকাবেলায় ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মিদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে আমরা পরিচ্ছন্নতা কর্মিরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছি। কিন্তু আমাদের জীবনের সমস্যা সঙ্কট অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মত বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। এ পর্যায়ে আমাদের ভ্যান চালকরা (বাঁশিওয়ালা) স্বউদ্যোগে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাড়ি বাড়ি থেকে কিছু বকষিশের বিনিময়ে রান্নাঘরের ব্যবহৃতসহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করে আসছিল। কিন্তু এখানেও আমাদের অসহায়তা উদ্ধারের দাবিদার এনজিও এডিবি’র প্রকল্পের অজুহাত দেখিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে তত্ত্বাবধানের নামে অর্থলোপাটের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। এমনিতে হরিজনদের যে মজুরি তা দিয়ে মোটেও সংসার চলে না। আমরা বাধ্য হয়ে বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করে যে বকশিষ পাই তা দিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছি। সেখানেও থাবা বাগিয়ে কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অজুহাতে এনজিও’দের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বাসা বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সংগ্রহের কাজ আমাদের মাধ্যমে করাতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এনজিও’রা সার্ভিস চার্জের নামে ৫০/১০০/১৫০/২০০ টাকা বাসা প্রতি নিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করছে। অথচ নামমাত্র বকশিষের বিনিময়ে আমরা এ কাজ করে আসছিলাম। এ কারণে আমাদের একদিকে উপার্জন বন্ধ অন্যদিকে নাগরিকদের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এনজিও ‘মানবতা’ রক্ষার নামে এতোদিন হরিজন সম্প্রদায়েরকে বুঝিয়েছে যে, তারা আমাদের (হরিজন) সামগ্রিক উন্নয়নের পক্ষে কাজ করছে। আজ তাদের (এনজিও) মুনাফালোভী আসল চরিত্র ফুটে উঠেছে। তারা রোড বা মহল্লা অনুযায়ী যা টাকা তুলে তার অর্ধেক দিয়ে আমাদের কাজ করিয়ে বাকী টাকা পকেটে পুরবে। এ ছাড়াও অহরিজনদের এই পেশায় যুক্ত করে আমাদের কর্মের একমাত্র অবলম্বনও ছিনিয়ে নিতে চায়। পরিবারের সবাই মিলে কাজ করেও পেট চলে না। আমাদের কর্মক্ষেত্রে এনজিওদের অপতৎপরতা বন্ধ না করে উল্টো নেতৃবৃন্দের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে হয়রানি করছে। সুতরাং জীবন-জীবিকার তাগিদে দূর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা ছাড়া আমাদের বিকল্প নাই। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বর্তমান পরিস্থিতিতে পৌরসভা থেকে যে যৎসামান্য বেতন আমরা পাই তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন অবস্থাতেই ৩/৪ দিনের বেশি চলা যায় না। ফলে প্রতিদিন লালদীঘি পাড়ে আমাদের বসে থাকতে হয় সাধারণ মানুষের কাজ থেকে কাজ পাওয়ার জন্য। যে দিন কাজ পাই সেদিন আহার জোটে আর যেদিন না পাই সেদিন অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি