মোংলা প্রতিনিধি : এবারের নির্বাচনে মানা হলোনা আওয়ামীলীগের দলীয় হাই কমান্ডের নেতার নিদর্শেনা। তাই মোংলা পোর্ট পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির একক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী থাকলেও আওয়ামীলীগে বিদ্রোহী অনেক। ২৯ ডিসেম্বর ছিল প্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ দিন। কিন্ত নির্বাচন ঘোষনার পর থেকে শেষ দিনেও একক প্রার্থী দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বিধি অনুযায়ী কাউন্সিলর প্রার্থীদের দলীয় হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকলেও কয়েক দফা বৈঠকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দেওয়ার প্রচেষ্টা করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা। আওয়ামী দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে নি¤œ পর্যায়ের নেতা পর্যন্ত তাদের একক প্রার্থী দেয়ার ঘোষনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। তাই দলের শীর্ষ নেতাদের নিদের্শনা অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেয়া ও দলের শৃংঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ১৩ নেতা কর্মীকে আওয়ামীলীগের দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারনস ম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন ও পৌর মহিলা লীগের সভানেত্রী কামরুন্নাহার হাই এর স্বাক্ষরীত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচন ঘোষনা হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন সকালে খুলনা সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আঃ খালেক মোংলার প্রতিটি মানুষের সাথে কথা বলেন ও এ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে ভোট দেয়ার জন্য সভাইকে একাত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানায়। এসময় তিনি বার বার একটি কথাই উচ্চরন করেছেন, আমরা আওয়ামীলীগের দল করে যদি দলের বাহিরে কাজ করি তা হলে অন্যের ভোটের আশা করা বিফল হবে। তাই দীর্ঘ ১০ বছর পর মোংলা পোর্ট পৌরসভার রির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দলের সভানেত্রী ও সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিক নৌকার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তার এ দলে আর কোন দিন ঠাঁই হবেনা। দলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনে নৌকাই বিজয়ী হবে। মৃত মোংলা বন্দরকে উজ্জিবীত ও আলোকিত করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বন্দর ও দেশকে ধ্বংশকারীদের রুখতে মোংলাবাসীকে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। আমার নিদের্শনা অমান্য করে যারা বিদ্রোহী মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থী হবে তাদের সাথে রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংগঠনিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। এমন ঘোষনার পরেও তা শোনেননী অনেক নেতা-কর্মী। গত ২৯ ডিসেম্বর ছিল মোংলা পোর্ট পৌরসভার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। কিন্ত তিনি খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং মোংলা-রামপালের বেশ কয়েকবার এমপি থেকে মন্ত্রীও হয়েছে আলহাজ্ব তালুকদার আঃ খালেক। বর্তমান খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং তার সহধর্মিনী পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী। তাই গত ২২ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রার্থীদের জন্য যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, মনে করেছিল তার কথার কোন নরচর হবে না। তার পরেও সম্ভব্য অনেক মেয়র প্রার্থী মনের রাগ ও ক্ষোভ থাকার পরেও বিদ্রোহী প্রার্থী না হলেও দলের অন্য নেতারা এসকল কথায় কর্নপাত না করে অনেকেই কাউন্সিলর বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে।
তাই ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মোংলা দলীয় কার্য্যালয়ে মোংলা উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ আয়োজিত বর্ধিত সভায় খুলনা সিটি কপোর্রেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক নেতাকর্মীদের নিয়ে এক সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। আর এ সভার সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সুনীল কুমার বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মোংলা উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের মহিলাসহ ১৩ নেতাকে বহিস্কার করা হয়েছে।
বহিস্কৃতরা হচ্ছে, পৌর আওয়ামীরীগের সাবেক সহ-সভাপতি ১নং ওয়ার্ড’র কাউন্সিলর মোঃ হাবিবুর রহমান, ১নং ওয়ার্ড’র আওয়ামীলীগ সদস্য মামুন হাওলাদার বাচ্চু, ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল জলিল সিকদার, ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গির হোসেন, ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সাধারন সম্পাদক এমরান হওলাদার, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ মাসুম বিল্লাহ, ৫নং ওয়ার্ড’র সাবেক পৌর আওয়ামী সদস্য মোঃ মনিরুজ্জামান জামাল, ৬নং ওয়ার্ডের-উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগ সহ-সভাপতি ফিরোজ শাহ, ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ওবায়দুল হাওলাদার। এছাড়া সংরক্ষীত মহিলা ১,২,৩ নং-ওয়ার্ড’র প্রার্থী ২নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগের সদস্য পারভীন আক্তার, ৪,৫,৬ নং এর প্রার্থী ৬নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগের সদস্য শিরিন বেগম, একই ওয়ার্ডের আওয়ামী সদস্য ৪,৫,৬ নং প্রার্থী কহিনুর বেগম ও ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ড’র পৌর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সুমী লীলাকে বহিস্কার করা হয়েছে। পৌর আওয়ামীরীগের সাবেক সহ-সভাপতি ১নং ওয়ার্ড’র কাউন্সিলর মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আমি বার বার নির্বাচিত কাউন্সিলর, আমাকে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমার প্রতি জনগণের আস্থা আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনগণ আবারও আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। তবে দলের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলছি। দলের সিদ্ধান্ত অবশ্যই মানতে হবে। এ বিষয়ে সদ্য বহিস্কৃত যুব মহিলা লীগের সভাপতি সুমী লীলা বলেন, বহিস্কারের বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি দলকে ভালবাসি, দলের প্রতি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি নূন্যতম ভালবাসার কোন ঘাটতি আমার নেই। দল যে সিদ্দান্ত নেবে তা মাথা পেতে নিব।
এ বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আমরা একক কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে পারিনি। ফলে তাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যেন ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ না হন, সেজন্য আমাদের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী দায়ীত্ব দেয়া হয়েছে এবং দলের শৃংঙ্খলা বঙ্গের কারনে আওয়ামীলীগ থেকে ১৩ জনকে বহিস্কার করা হয়েছে। আজ থেকে তাদের দলীয় সদস্যপদ ও সকল দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করাসহ সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হলো।