শহিদুল ইসলাম দইচ : চাকরির প্রত্যাশায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে গত ছয় মাস ধরে বিনা বেতন কাজ করছেন ১৭ নারী-পুরুষ। কিন্তু অনৈতিক প্রস্তাবের কারণে চাকরি পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তারা। উল্টো তাদের পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন আশ্বাস প্রদানকারী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে আউটসোসিংয়ে কাজ করতেন ওই ১৭ নারী-পুরুষ। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে এক বছরের চুক্তিতে হাসপাতালের বিভিন্ন শাখায় কাজে যোগদান করেন তারা। কিন্তু এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আউটসোর্সিংয়ে কাজ পাওয়া ইমাদউদ্দিন বলেন, ‘আমিসহ বায়জিদ মোস্তাফিজ, প্রকাশ দাশ, উত্তম দাশ, প্রসেনজিৎ দাশ, আশিকুর রহমান, টুম্পা মুনিয়া হক, আমেনা আক্তার রিয়া, শিলারানী পাল, আরিফুর রহমান রকি, নাজমুল হোসেন, সাকিল হোসেন, আল-আমিন, রাকিবুল ইসলাম, মোহাম্মদ হাসান, আরিফ আহম্মেদ, ইমাদ হাসান ও রুবেল আহম্মেদ ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর এক বছরের চুক্তিতে যশোর জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন শাখায় কাজে যোগদান করি। প্রথম সাত মাস আমাদের মাসিক ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা করে বেতন দেওয়া হতো। পরে বেতন বাড়িয়ে ১৬ হাজার ১৩০ টাকা করা হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২০২০ সালের জুন মাসের পর থেকে বেতন বন্ধ হয়ে যায়।’
আশিকুর রহমান, আরিফুর রহমান রকি ও আমেনা আক্তার রিয়া জানান, গত ছয় মাস ধরে কাজ তারা নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করছেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে একটি টাকাও দেওয়া হচ্ছে না। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। বেতনের বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং নতুন ঠিকাদার কাজ পেলে তাদের সেখানে যোগদান করিয়ে বেতন দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তারা আরো জানান, সম্প্রতি একতা ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আউটসোসিংয়ের ইজারা পেয়েছে। কিন্তু তাদের কাজ দিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জনপ্রতি দুই লাখ টাকা করে উৎকোচ দাবি করছেন। এমনকি স্বেচ্ছায় শ্রম না দিলে বাড়ি চলে যেতে বলেছেন।
রুবেল আহম্মেদ ও সাকিল হোসেন বলেন, তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক তাদের ‘বিনা বেতনে স্বেচ্ছায় কাজ করছি’ মর্মে লিখিত দিতে চাপ দিয়ে আসছিলেন। আজ (২ জানুয়ারি) তাদের ডেকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতে বলেছেন। না গেলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।
তারা আরো বলেন, তাদের নতুন করে যদি নিয়োগ না দেয়া হয় তাহলে বিগত ছয় মাসের বেতন পরিশোধ করা হোক।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপকুমার রায় বলেন, ‘তাদের নিয়োগের বিষয়টি ঠিকাদির প্রতিষ্ঠানের। এতদিন ওরা স্বেচ্ছায় কাজ করেছে। এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন ফলে তাদের হাসপাতালে কাজ করতে হলে স্বেচ্ছায় কাজ করছে মর্মে লিখিত দিয়েই কাজ করতে হবে। তা না হলে ওদের পরিচয় কী হবে?’
এসব বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিন বলেন, ‘বিষয়টি আমার অধীনে নয়। কিন্তু এটি একটি মানবিক বিষয়। এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে কথা বলে দেখবো।’
এদিকে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, পুলিশ আইনের মধ্যে থেকে কাজ করে। কারো ব্যক্তিগত ইচ্ছায় নয়।
জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ রকম ঘটনা আমার জানা ছিল না। স্বাস্থ্য বিভাগের বিষয় হলেও আমি কথা বলে দেখবো কী করা যায়। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যক্তিবিশেষের কাজে ব্যবহার হয় না।’