কারাবন্দি অনেকেই এখন অনুশোচনায় ভোগেন

0
263

শহিদুল ইসলাম দইচ : মামলায় জড়িয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলহাজত খাটছেন তারেক। এখন সে ভোরে ঘুম থেকে ওঠে। সকাল সাতটায় নাস্তা করেন নিজের হাতে। বেলা ১২টার মধ্যে গোসল, এরপর একটার মধ্যে দুপুরের খাবার। বিকেল চারটা পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম। রাতের খাবার বুঝে নিয়ে ইচ্ছা অনুযায়ী খাওয়া। আর রাত দশটার পরে ঘুমে বিভোর। প্রতিদিন এই নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে এখন তার সময় কাটছে।
এই তথ্য দিলেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা হাজতি তারেক কাজীর মা খালেদা বেগম।
তিনি জানান, সম্প্রতি কোর্টে হাজিরা দিতে এসে ছেলে তার অনুশোচনার কথা ব্যক্ত করেছে।
তার ভাষ্যমতে, কবে মামলার বিচার কাজ শেষ হবে জানা নেই। বিচারে মুক্তি হবে না কি জেল! জেল হলে কতো দিন বন্দি থাকতে হবে- অজানা। যদি বাবা-মার (বড়দের) কথা মেনে চলতো, তাহলে আজ এই দুরবস্থা হতো না। এখন কারাগারে সে যে নিয়মশৃংঙ্খলা মেনে চলছে, তা আগে বুঝলে জীবন অন্যরকম হতো।
ছেলে তার মাকে বলেছে, তাদের কথা শুনলে আজ মুক্ত আলো-বাতাসে থাকতো, পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারতো।
খালেদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে তার ভুলগুলো বুঝতে পেরে অনুশোচনা করছে। তার মতো আরো অনেক বন্দি একইরকম অনুশোচনায় ভুগছে। জীবনটা নতুন করে শুরু করতে চাইছে।’
যশোরের অভয়নগর উপজেলার মোয়াল্লেমমতলা গ্রামের বাসিন্দা মুসতাক হোসেনের স্ত্রী খালেদা বেগম বলেন, ‘তারেক কাজী গত ২৬ ডিসেম্বর আদালতে মামলায় হাজিরা দিতে আসে। তার সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, সে নিজের ভুলত্রুটি বুঝতে পেরেছে।’
শুধু তারেক কাজী নয়। যশোর শহরতলীর পাগলাদহের হাসান মোল্যার ছেলে মহিদুল ইসলাম, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে নূর ইসলাম- সবার স্বজন প্রায় একই কথা বলেন।
মহিদুলের মা কুলসুম বেগম বলেন, ‘ইচ্ছে করলেই ছেলের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারি না। কিন্তু জেলার স্যার মাঝেমধ্যে টেলিফোনে তার সঙ্গে আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেন। ছেলে আমাকে জানিয়েছে, শীতের মধ্যেও সেখানে কোনো কষ্ট পেতে হয় না। জেলখানায় আছে টেলিভিশন, খেলাধুলার ব্যবস্থা, রয়েছে পড়াশুনা করার জন্যে লাইব্রেরি।’
নূর ইসলামের ভাই নূর হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের একটি মামলায় ১৭ বছর জেল হয়েছে। এখন কারাগারে বন্দিদের জীবমানের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যারা কিনতে পারে না, তাদের জন্যে হুডি, সোয়েটার, কম্বল ইত্যাদি গরমের কাপড় সরবরাহ করা হচ্ছে।’
শার্শা উপজেলা উলাসী গ্রামের বাসুদেবের ছেলে অরবিন্দু দেব রয়েছেন কারাগারে। তার মা যোগবালা বলেন, ‘মাদক মামলায় ছেলের ৩০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। মাঝেমধ্যে জেলার স্যারের সহায়তায় ফোনে ছেলে কথা বলে। এখন অনেক অনুশোচনা তার। কিন্তু এখন বুঝে কী হবে? যখন বুঝিয়েছি, শোনেনি কোনো কথা।’
জানতে চাইলে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিনকান্তি খান বলেন, ‘আমি কারাগারে বন্দিদের রক্ষক। তাদের সাথে যখন কথা বলি, মনে হয় আমি তাদের খুব আপন। তারা আমার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলে। তাদের সুখ-দুঃখের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি। তাদের জন্যে যতটুকু করা সম্ভব- চেষ্টা করি করতে। তারা যদি একটু ভালো থাকে, আমারও ভালো লাগে। কারাগারে তারা যেন ভালো থাকে, সেই চেষ্টা আমার রয়েছে।’
তিনি জানান, সরকারি বরাদ্দ ছাড়াও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান এনে এক হাজারেরও বেশি বন্দিকে শীতের কাপড় সরবরাহ করতে পেরেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here