নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২২ তম হত্যা বার্ষিকী আজ। দীর্ঘ এতবছর পার হলেও বিচার পায়নি স্বজনেরা। বরং গত ১৬ বছর ধরে আইনের মারপ্যাঁচে আটকে আছে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া। এ হত্যাকাÐের বিচার না হওয়ায় ুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। যদিও সরকার চাইলেই এ হত্যাকাÐের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব বলে মন্তব্য আইনজীবীদের। এদিকে সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যাকাÐের ঘাতকদের বিচার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে)। বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপি দেন। এছাড়াও জেইউজে ১৬ জুলাই বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র্যালি ও শহীদের কবর শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন ও দোয়া প্রার্থনা।
আদালত সূত্র জানা গেছে, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান নিহত হবার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। সে সময় বিগত জোট সরকার মতায় আসার পর কয়েক আসামির আগ্রহে মামলার বর্ধিত তদন্ত করে শামছুর রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়।
একইসাথে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাীকে বাদ দিয়ে সাী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্টজনদেরকে। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়; অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট। এরপর বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রæত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শহীদ শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।
আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সাথে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে তার (বাদী’র) পে খুলনায় গিয়ে সাী দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের প্রেেিত হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না তার জন্য সরকারের উপর রুলনিশি জারী করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রীট করেন। সেই রীটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট ইদ্রিস আলী জানান, তাদেরও প্রত্যাশা আপিলের দ্রæত নিষ্পত্তি হয়ে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হবে।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হার্টস্ট্রোকে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপরে হামলায় মারা গেছেন। বাকী আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
এদিকে দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজে ােভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার মতাসীন হবার পর নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর প থেকে দাবি তোলা হয় পুরনো বিতর্কিত তদন্ত বাতিলপূর্বক মামলাটি পুনঃতদন্ত ও দ্রæত বিচারের।