কুষ্টিয়ায় কামারপট্টিতে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য

0
253

নিজস্ব প্রতিবেদক কুষ্টিয়া : মুসলিমদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদুল আযহা। আর এই ঈদে মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা আল্লাহকে খুশি করতে পশু জবাই করে থাকে। পশু জবাইয়ের জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কুষ্টিয়ার কামার সম্প্রদায়। কোরবানির পশু জবাই সংক্রান্ত উপকরণ ছুরি, পাতি, দা, বটিসহ বিভিন্ন ধারালো জিনিস তৈরিতে এখন ব্যাস্ত এ জেলার প্রায় ৮ শতাধিক কামার। কামারপট্টি ঘুরে দেখা যায়, পশু কোরবানির নানা উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত কামাররা। বড়বাজার ও রাজারহাটের জয় কর্মকার বলেন, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে কঠোর বিধিনিষেধ চলায় তাঁদের বেচাকেনা কমে যায়। ঈদ ঘুনিয়ে আসায় এবং বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণা আসায় দুই দিন ধরে এসব উপকরণের চাহিদা বেড়ে গেছে। বড়বাজার ও রাজারহাটের বিভিন্ন কামারের দোকান ঘুরে দেখা যায় দা, ছুরি, চাকু ও বঁটির বেচাকেনা বেড়েছে। আরো জানা যায়, বর্তমানে প্রতি পিস বটি পাইকারি ২০০ টাকা, খুচরা ২৫০-৩০০ টাকা, চাপাতি পাইকারি ৬০০, খুচরা ৭৫০ টাকা, ছুরি সর্বনিম্ন ১০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে জবাই করার ছুরি ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতা রাজ্জাক বলেন, আমি সবসময় কুষ্টিয়ার রাজারহাট থেকে মালামাল নিয়ে যাই। কারণ এখান থেকে মাল নিলে অন্য জায়গা থেকে কমদামে নেওয়া যায় এবং এরা সরঞ্জামগুলো ভালো করে তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, বছরে একবারই চাপাতি, ছুরি, বটির চাহিদা বেশি থাকে। এজন্য আগে থেকেই এগুলোর মজুদ করে রাখছি। এদিকে কামারপট্টির কারিগররা অভিযোগ করেন, তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারা দিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হয়। ফলে বিভিন্ন ধরেনের সমস্যা শরীরে তৈরি হয়। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অভাবে কুষ্টিয়ায় কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছে অনেকে। কুমারখালী উপজেলার কামাররা বলেন, সারা বছর আমাদের মোটামুটি বিক্রি হয়। তবে এই সময় বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় লাভ আগের চেয়ে কম। তিনি আরও জানান, কুষ্টিয়ার বড়বাজার, মিরপুর, খোকসা, কুমারখালী, দৌলতপুর ও ভেড়ামারার বিভিন্ন জায়গায় কামারদের জমজমাট ব্যবসা থাকলেও সদরের রাজারহাটের মতো কোথায়ও নেই। কুষ্টিয়ার কয়েকজন কামার দিলিপ, প্রদীপ কর্মকার, চন্দন কর্মকার জানান, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সময় তাঁদের দোকান বন্ধ ছিল। কোরবানির ঈদ সামনে চলে আসায় দা, বঁটি ও ছুরির ক্রেতার সংখ্যাও কম। সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার রাজারহাটে হাট বসে। এই দুই দিন ছাড়া অন্যান্য দিনেও এখন তাদের এই সব দোকানে বেচাকেনা চলবে। তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান পরিচালনা করছেন। কামাররা আরো বলেন, কোরবানি ঈদে তাঁরা প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করেন। এবারও এসব উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। অন্তত ১০ দিন ধরে তাঁরা দা, চাকু, ছুরি ও বঁটি তৈরিতে ব্যস্ত আছেন। কোরবানির ঈদের আগের দিন পর্যন্ত তাঁদের এই ব্যস্ততা থাকবে। সারা বছর তাঁরা যে আয় করেন, তার অর্ধেক আয় করেন এ সময়ে। কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি হচ্ছে কয়লা। কিন্তু এই কয়লা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে কয়লা সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে সেই তুলনায় কয়লার দামও অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোহার দামও। এদিকে লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। এছাড়া আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব পণ্য তৈরির বেশ কিছু আবার প্রযুক্তি নির্ভর হাওয়ায় কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। এ কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here