মানবিক পুলিশ অফিসার ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমানের বদলী

0
272

কামরুজামান লিটন ঝিনাইদহ : “আমি আপনার পরিচয় জানতে চাই না। আপনি কে, কত বড় কি তাও জানতে চাই না। যদি এটি করে থাকেন তবে সমাধান করুন। নইলে আইনী পদপে নিতে বাধ্য হবো”। জেলার প্রভাবশালী কেও আইন ভঙ্গ করলে মোবাইল ফোনে নির্যাতিতদের প নিয়ে এমন হুংকার দিতেন ঝিনাইদহ সদর থানার সদ্য বিদায়ী ওসি মিজানুর রহমান। নিজের দপ্তর তো বটেই গোটা থানাকে ঘুষ মুক্ত করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে মানবিক এই পুলিশ কর্মকর্তা বদলী হলেন। অল্প দিনে হাজারো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হলেন তিনি। ওসি মিজানুর রহমান ২০২০ সালের ফেব্রয়ারি মাসের ২৩ তারিখে ঝিনাইদহ সদর থানায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই সদর থানা এলাকায় আইনি সেবা ও নিরাপত্তায় মানুষের আস্থা অর্জন করেন। সাধারণ মানুষের পুলিশি সেবা পাওয়ার রাস্তা সহজ করে দেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধনে রাত দিন কাজ করেন। উজ্জ্বল করেন পুলিশের ভাবমূর্তি। ঝিনাইদহ সদর থানা এলাকার হাটগোপালপুর, বেতাই চন্ডিপুর, নারিকেলবাড়িয়া, ডাকবাংলা, কাতলামারী পুলিশ ফাঁড়িতে সিসি ক্যামেরা ব্যবস্থা করেন। ডাকবাংলা বাজার দোকানমালিক ও রাইচ মিল মালিক সমিতি হাটগোপালপুর বাজার দোকান মালিক সমিতির সৌজন্যে পুলিশের জন্য উপহার হিসাবে পেয়েছেন ২টি গাড়ি। শহরের বেশির ভাগ ওষুধের দোকানে এসি লাগাতে বাধ্য করেন। সদর থানা এলাকায় বৃদ্ধি করেছেন টহল টিম। বিট পুলিশিং সাংগঠনিক অবকাঠামোর মাধ্যমে সেবা পৌছিয়ে দিয়েছেন মানুষের দোর-গোড়ায়। সকল মানুষের জন্য থানা ছিল উন্মুক্ত। তিনি দায়িত্ব পালনকালে ঝিনাইদহে হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধ করে হিজড়াদের মধ্যে বিবাদমান দ্ব›দ্ব নিরসন করে বার বার করেছেন ত্রাণের ব্যবস্থা। করোনা কালীন সময়ে দায়িত্বে এসে তিনি নিজ উদ্যোগে দরিদ্র মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ,গ্রাম পুলিশের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম’র লাশ দাফনকারী দলের মধ্যেও ত্রাণ বিতরণ করে উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি থানায় যোগদান করার পরে গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ওয়ারেন্টের আসামি গ্রেফতার, মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। জিডি করে হারানো মোবাইল ও মোটরসাইকেল ফিরে পেয়েছেন অসংখ্য মানুষ। অভিযোগ পেয়ে পাওনা টাকা আদায় করে দিয়েছেন মানুষকে। এলাকায় সুদ কারবারি মহাজনদের করেছেন নিস্ক্রিয়। করোনাকালীন সময়ে পরিবার থেকে ত্যাগ করা প্রতিবন্ধীকে উদ্ধার করে নিজ দায়িত্বে করেছেন চিকিৎসার ব্যবস্থা। শিশু উদ্ধার করে নিঃসন্তান দম্পতির হেফাজতে প্রদান, অজ্ঞাত বৃদ্ধ মহিলাকে উদ্ধার করে বৃদ্ধাশ্রমে থাকার ব্যবস্থা। রাতে খবর পেয়ে পুলিশের টহল গাড়িতে প্রসূতি রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া। মধ্যরাতে পুলিশের গাড়িতে করে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে পৌছে দেওয়াসহ অসংখ্য মানবিক কাজের স্বাী ঝিনাইদহ সদর থানা এলাকার মানুষ। তার যোগদানের পর থেকে জিডি, পুলিশ কিয়ারেন্স ও মামলা করতে কাউকে টাকা দিতে হয়নি। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ঝিনাইদহ সদর থানা হয়ে উঠেছিল মানবিক পুলিশ টিম। গত ১৫ জুলাই মানবিক পুলিশ অফিসার খ্যান সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান চার্জ হস্তান্তর করে ঝিনাইদহ ত্যাগ করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here