নিজস্ব প্রতিবেদক: বাঘারপাড়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারি অধীর কুমার সরকারের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলার টাকা আত্মসাত ও মামলা নিষ্পত্তিতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে অসহায় কৃষকদের পদে পদে হয়রানি হতে হচ্ছে।
সুত্র মতে, বাঘারপাড়া সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কৃষকদের ঋণ দিয়ে সময় মতো পাওনা আদায় করতে না পারলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সার্টিফিকেট অফিসারের আদালতে মামলা দায়ের করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করেন নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারি অধীর কুমার সরকার। সেখানে মামলা নিষ্পত্তিতে পাওনা টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে এমনকি ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে নিজের (অফিস সহকারী) কাছে রেখে দিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এবিষয়ে কথা হয় সার্টিফিকেট মামলায় ভুক্তভোগী অন্তত ১০ জনের সাথে। তারা অভিযোগ করেন, সার্টিফিকেট মামলা হলে, অধীর কুমার সরকার বাড়ী এসে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখান। অফিস খরচ, নোটিশ ও থানা পুলিশসহ বিভিন্ন ধরনের খরচের কথা বলে কৌশলে টাকা নেওয়ার টাল বাহানা শুরু করেন। বিভিন্ন হয়রাণী থেকে বাঁচতে এমনকি দিতে হয়েছে খেজুর গুড়ের পাটালি। কথা হয় ইন্দ্রা গ্রামের মৃত ছাবের বিশ্বাসের পুত্র আব্দুল হকের সাথে (বর্তমান বসবাস করেন মালঞ্চি হাজির কুড় খাস জমির উপর) তিনি জানান, বাঘারপাড়া সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে ২০০৮ সালে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ঐ ঋণ শোধ না করলে ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ সরকারি পাওনা আদায়ে আমার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করেন। যার পত্র নম্বর ৩০২। সার্টিফিকেট অফিসার ২০১৯ সালের ২২ জুলাই ৬৫ হাজার ৫শ’৮৬ টাকা আদায়ে আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা নোটিশ জারি করেন। আমি ধার্য দিনে হাজির হয়ে অফিস সহকারি অধীর কুমার সরকারের নিকট ৫’হাজার টাকা জমা দেয়। এসময় কোন জমা রশিদ আমাকে দেওয়া হয়নি। এর কিছু দিন পর ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ আমার বাড়ীতে হাজির হয়ে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ দেখতে চাই। সেখানে দেখা যায় ব্যাংকে আমার নামে কোন টাকা জমা হয়নি। এরপর কাগজপত্র যাচাই কালে দেখা যায় ২’হাজার টাকা জমা পূর্বক কিস্তির জন্য আবেদনসহ গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন সংবলিত কাগজ আমাকে দেওয়া হয়েছে। আজও কোন টাকা আমার নামে ব্যাংকে জমা হয়নি। ছাতিয়ানতলা এলাকার দরাজহাট গ্রামের মেসার্স রুমিচা পোল্ট্রি ফার্মের মালিক রুমিচা বেগম জানান, সোনালী ব্যাংক বাঘারপাড়া শাখা হতে ৪৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ব্যাংক আমার নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সার্টিফিকেট অফিসারের আদালতে মামলা দায়ের করেন। নির্ধারিত দিনে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর ৩’ হাজার টাকা অফিস সহকারি অধীর কুমার সরকারের নিকট জমা দেয়। ১’হাজার টাকা (অধির কুমার সরকার) এর নিকট রেখে দিয়ে ২’হাজার টাকা আমাকে দিয়ে ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়। ইন্দ্রা গ্রামের মৃত আজগর আলীর দুই ছেলে আব্দুল হালিম ও আব্দুল জলিল ১৯৯৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর কৃষি ব্যাংক বাঘারপাড়া শাখা হতে ৬’হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। দির্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না করার কারণে সার্টিফিকেট মামলা হয়। মামলা হতে অব্যহতি পেতে অতিরিক্ত ১১’শ টাকা দিতে হয়েছে অফিস সহকারি অধীর কুমার সরকারের কাছে। পাইকপাড়া গ্রামের সুবোধ কুমার দেবনাথ জানান, কৃষি ব্যাংক বাঘারপাড়া শাখা হতে ঋণ নিয়েছিলাম। আমার নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলে সুদসহ ১৯ হাজার ৫’শ৬৬ টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করি। মামলা নিষ্পতিতে আমাকে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে অধীর কুমার সরকারের কাছে। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারি অধীর কুমার সরকার বলেন, ‘সার্টিফিকেট মামলায় কারোর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়নি। কে বলেছে টাকা নিয়েছি? কার এত বুকের পাটা আছে? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে’! উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ জানান, অফিস সহকারি অধীর বাবু অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Home
খুলনা বিভাগ বাঘারপাড়া নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারি বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা নিষ্পত্তিতে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ