মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর : আকিজ গ্রুপ প্রায় ৭৫ বছর ধরে ব্যবসা করছে দেশে বিদেশে। বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্প সংগঠনের অন্যতম তা। দীর্ঘ দিন ধরে আকিজ পাট শিল্প, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, খাদ্য ও পানীয় এবং সিরামিক সহ বিভিন্ন খাতে সুপরিচিত নাম। শেখ আকিজ উদ্দিন নিজের মেধা সৃজনশীলতা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কিংবদন্তী শিল্পপতি হয়েছেন। একের পর এক সম্ভাবনাময় ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তুলে তিনি লাখ লাখ মানুষের কর্ম সংস্থান করেছেন। বিড়ি কারখানার পর তিনি একে একে প্রতিষ্ঠা করেন অভয়নগরের অত্যাধুনিক চামড়ার কারখানা এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা টোব্যাকে কোম্পানি। ১৯৭৪ সালে গড়ে তোলেন আকিজ প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আকিজ ট্রান্সপোর্ট, নাভারণ প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং, জেস ফার্মাসিটিক্যাল, আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি, আকিজ জুট মিল, আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি, আকিজ টেক্সটাইল, আকিজ পার্টিকেল মিলস, আকিজ হাউজিং, আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ লিঃ, আকিজ অনলাইন, লেবুলা লিঃ, আকিজ কর্পোরেশন লিঃ, আকিজ কম্পিউটার লিঃ, আকিজ ইনস্টিটিউট এন্ড টেকনোলজি, আফিল অ্যাগ্রো লিঃ, আফিল পেপার মিলসসহ আরো কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দেশের বৃহত্তম তামাক উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ঢাকা টোব্যাকো শিল্প। এছাড়াও এই বিবিধ সংস্থার অধীনে ছিল। ২০১৮ তে ঢাকা টোব্যাকো শিল্প জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালের কাছে বিক্রি হয়েছে। আকিজ গ্রুপের অধীনে বর্তমানে আকিজ শিপিং, আকিজ এগ্রো-প্রসেসিং, আকিজ স্টিল সহ ২১টি আলাদা কোম্পানি রয়েছে। আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিন ১৯৪০ এর দশকে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। শেখ আকিজ উদ্দিন ৭০ এর দশকে আকিজ শিল্প গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। একজন সফল উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি হিসাবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে সুপরিচিত না থাকলেও শেখ আকিজ উদ্দিন বাংলাদেশের ব্যবসায়িক জগতে একটি সুপরিচিত নাম।
শেখ আকিজ উদ্দিন ১৯২৯ সালে খুলনার ফুলতলা উপজেলার বেজেরডাঙ্গা মধ্যডাঙা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাবা শেখ মফিজ উদ্দিন এবং মা মতিনা বেগমের একমাত্র সন্তান। শেখ মফিজ উদ্দিন ছিলেন সাধারণ ব্যবসায়ি। আকিজ উদ্দিন কিছুটা বড় বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন, তবে খারাপ মেজাজের কারণে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাননি। তার বাবা তাঁর সম্পর্কে কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিলেন। পারিবারিক সমস্যায় তিনি ব্যবসায় জড়িত হয়েছিলেন। তিনি বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনে চানাচুর, বাদাম এবং লজেন্স বিক্রি করে ব্যবসায়িক জীবন শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে তিনি তার বাবার ব্যবসা কিছুটা সময় ব্যয় করেছিলেন। তবে, যদি তার বাবার ব্যবসায় কোনও ভুল হয় তবে তিনি প্রায়ই আকিজ উদ্দিনকে ধমক দিতেন। ফলে শেখ আকিজ উদ্দিন রাগ করে বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর এবং তার পকেটে ছিলো মাত্র ১ টাকা। তিনি কলকাতায় এসে কিশোর আকিজ যেন সাগরে পড়ে যান। কলকাতায় কোন স্বজন না থাকায় তিনি শিয়ালদহ রেলস্টেশনে আশ্রয় নেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আকিজ পুরোপুরি অপরিচিত পরিবেশে সারাদিন কাজের জন্য ঘোরাঘুরি করেও হাল ছাড়েননি। মিতব্যয়ি আকিজ রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মে শুয়ে রাত কাটাত, ম্যাগাজিন পড়ে এবং চাটু খেয়ে, ধীরে ধীরে টাকা শেষ হয়ে যায়। এরই মধ্যে, একদিন রামলোচন স্ট্রিট পার হওয়ার সময়, তিনি একটি কমলা নিলাম দেখেছিলেন এবং সেখান থেকে চার ঝুড়ি কমলা কিনেছিলেন, যা বিক্রি করে দশ পয়সা উপার্জন করতে সম হয়েছিলেন। আকিজ উদ্দিনের ফল বিক্রেতা হিসেবে কঠোর পরিশ্রম ও জীবনের কষ্টকে ভালবাসার কথা জানতে পেরে, জাকারিয়া হোটেলের মালিক তাকে মাত্র এক আনার বিনিময়ে তার হোটেলে থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। ফল ব্যবসায় সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হল ৩০০ রুপি মূলধন জোগাড় করতে সম হন এবং ধীরে ধীরে মূলধন বাড়ার সাথে সাথে তিনি ব্যবসা পরিবর্তনের কথা ভাবেন। কলকাতায় সেই সময় চার চাকার গাড়ির নিলামের ব্যবসা খুব জনপ্রিয় ছিল যাতে দোকানীরা বিভিন্ন সুন্দর পণ্য সাজিয়ে এবং হিন্দিতে বিভিন্ন পদ তৈরি করে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পারে। ব্যবসাটি লাভজনক ছিল বুঝতে পেরে আকিজ একটি নতুন নিলামকারীর হুইলবারো দোকান কিনেছিলেন। তবে আকিজ যেহেতু হিন্দি বলতে পারতেন না, তাই তিনি এক সহকারি নিয়োগ করেন যিনি হিন্দি ভাল বলতে পারেন। খুব অল্প সময়ে তিনি হিন্দি শিখেছিলেন। তিনি বেশ সফলতার সাথে ব্যবসাটি চালাচ্ছিলেন এবং অন্যান্য নিলামকারীদের তুলনায় আরও ভাল ব্যবসা করছিলেন, তাই পুরানো ব্যবসায়িরা তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে মনোবল হারিয়ে আকিজ উদ্দিন ব্যবসার সব কিছু বিক্রি করে দেন। এ সময় তাঁর মূলধন ছিল ২,২০০ টাকা। তিনি পেশোয়ারের এক প্রখ্যাত ব্যবসায়ির সাথে দেখা করেন। এ সময় তিনি আকিজ উদ্দিনকে তাঁর সাথে পেশোয়ার যাওয়ার প্রস্তাব দেন। পেশোয়ারে গিয়ে তিনি ফলের ব্যবসা আগের মতো শুরু করেন এবং দুই বছরে তার মূলধন ২,২০০ রুপি দ্বিগুণ করতে সম হন। পেশোয়ারে দু’ই বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে তিনি কলকাতায় আবার ব্যবসা করার চেষ্টা করেন। তবে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতায় তিনি ১৯৪৪ সালে ৮০০০ টাকার মূলধন নিয়ে নিজ গ্রাম মধ্যডাঙায় ফিরে আসেন। বাবা শেখ মফিজ উদ্দিন এবং মা মোমিনা বেগম ছেলের পালানোর শোকের কারণে বিধ্বস্ত ছিলেন। পরে তিনি দেশে ফিরে এসে তাঁর বাবা-মাকে ব্যবসার জন্য কলকাতায় যেতে রাজি করান। এর কিছু দিন পরে, তিনি তাঁর বাবা মারা যাওয়ার খবর পান। বাড়ি ফেরেন। গ্রামে থেকে ছোট ব্যবসা শুরু করেন। এ সময় তাঁর বাল্যবন্ধু নিতাই চন্দ্রের সাথে তাঁর দেখা হয়। নিতাইয়ের বাবা সে সময় যশোরের বিখ্যাত ‘বিধু বিড়ি’ (বিধু টোব্যাকো) ব্যবসায়ি ছিলেন। আকিজ তার বন্ধু নিতাইয়ের সাথে ব্যবসায় সম্পর্কে জানতে এবং কীভাবে তামাক তৈরি করতে হয় তা শিখতে তামাক কিনতে বেশ কয়েকবার খুলনায় গিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর মাও হঠাৎ মারা যান। জীবন তাঁর খুব দ্রুত বদলে গেল। কিছু দিনের মধ্যে তিনি বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। তাঁর শ্বশুর কৃষক ছিলেন এবং তিনি চেয়েছিলেন আকিজ তার জমি দেখা শুনা করুক। তবে আকিজের মনে ব্যবসা আসক্তি ছিল। এক পর্যায়ে তিনি শ্বশুরকে খুলনার বেজেরডাঙ্গা স্টেশনে মুদি দোকান স্থাপন করতে রাজি করান।
ব্যবসা কৌশল : তিনি ৮০০০ টাকার মূলধন নিয়ে কলকাতা থেকে ফিরে এসেছিলেন। বেজেরডাঙ্গা স্টেশনে যখন মুদি দোকান শুরু করেন তখন তাঁর ৫০০০ টাকা পুঁজি মাত্র। তবে আকিজ উদ্দিন তার উৎসাহ এবং ভাল আচরণে সবার প্রিয় ছিলেন। তিনি সস্তা পণ্য বিক্রির পাশাপাশি সততা ও নিষ্ঠার সাথে তার ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তিনি ব্যবসায়ের েেত্র খুব ভাল কাজ করেন এবং দোকান খোলার এক বছরে তার মূলধন দাঁড়ায় ৩০০০০ টাকা। তার দোকানে বিক্রি হওয়া পণ্যের মধ্যে একটি ছিল ‘পাতা বিড়ি’। তামাকের প্রতি তার আগ্রহের কারণে, তিনি ১৯৫২ সালে নিজেই তামাক উৎপাদন শুরু করেন এবং আশেপাশের অঞ্চল থেকে তামাকের বিভিন্ন মিশ্রণ সম্পর্কে গবেষণা করতে এবং তার বন্ধুদের স্বাদ দিতে (ধূমপান) তামাকের পাতা কেনেন। এভাবে আকিজ উদ্দিন বাজারের প্রচলিত তামাক ব্র্যান্ডের তুলনায় স্বাদ ও গন্ধে আরও ভাল তামাক তৈরি করতে সম হন। দৌলতপুর থেকে বেনাপোল ও টেন্ডুপাতা থেকে তামাক নিয়ে এসে আকিজ উদ্দিন তিনজন কর্মচারি নিয়ে তামাক কারখানা শুরু করেন। কারখানাটি ছিল বেজারডাঙ্গা স্টেশনে তার মুদি দোকানের ২য় তলায়। তিনি দৌলতপুরে উৎপাদিত তামাক বিক্রি করতেন। কিন্তু বুঝতে পারেন যে এতে পুরোপুরি নতুন এবং শিরোনামহীন তামাক খুচরা বিক্রেতাদের সহযোগিতা ছাড়া বিক্রি করা যাবে না। তিনি বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন। ঐতিহ্যবাহী ওয়াহাব বিড়ি প্রতি হাজারে নয় টাকা এবং জলিল সুরমা বিড়ি হাজারে আট টাকায় বিক্রি হোত। আকিজ তার তামাক খুচরা বিক্রেতাদের কাছে প্রতি হাজারে সাত টাকায় সরবরাহ করতেন। আকিজের তামাকের স্বাদ, গন্ধ এবং গুণ উপলব্ধি করে বিক্রেতারা বেশি লাভের আশায় অন্যান্য প্রচলিত তামাকের চেয়ে আকিজের তামাক বিক্রি করতেন। ধূমপায়ীরা এই তামাকের স্বাদ এবং গন্ধের মধ্যে পার্থক্যের কারণ জানতে চান। তাদের আকিজ প্যাকেজ যুক্ত তামাক সম্পর্কে অবহিত করেন। আকিজের তৈরি তামাক খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়।
আকিজের ব্যবসায়িক কৌশলে ছিল বাজারের অন্যদের তুলনায় সস্তা মানের পণ্য বিক্রি। এ ছাড়া তার ভাল ব্যবহারের ফল স্বরূপ, ক্রেতারা আকিজের দোকান থেকে কেনাকাটা করতেন। ফলে আকিজ তামাক ব্যবসার পাশাপাশি মুদি দোকানেও বেশ ভাল করতে সম হন। আশেপাশের ব্যবসায়িরা আকিজকে ঈর্ষা করতেন। এক রাতে যখন কর্মচারি ঘুমন্ত অবস্থায় দোকানে আগুন লাগাল তখন আকিজ উদ্দীন সামনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে বুঝতে পারলেন যে দোকানের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। সাহসী আকিজ ভয় না পেয়ে নগদ ৪০০০০ টাকা নিয়ে বেরোতে সম হলেও পণ্যাসহ পুরো দোকান আগুনে পুড়ে যায়। আগুনে ৩০,০০০ টাকার মালামাল পুড়ে গেলেও আকিজ হতাশ হননি। তিনি অন্যান্য ব্যবসায়ি বন্ধুদের সহায়তায় আবার দোকান ও কারখানা স্থাপন করেন। বেজেরডাঙ্গা ছাড়াও তিনি দৌলতদিয়া স্টেশনের পাশে একটি টিনের দ্বিতল বাড়ি ভাড়া নিয়ে নীচে এবং উপরের গোডাউনে তাঁর অফিস করেন। সেখান থেকে তিনি নিজের তামাক বিতরণ করতেন।
১৯৫৪ সালে তিনি তার তামাকের জন্য সরকারি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন এবং সে বছরের শেষের দিকে তাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। তিনি আকিজ বিড়ি (আকিজ টোব্যাকো) নামে লাইসেন্স নেন এবং ১৯৫৫ সাল থেকে লেবেলে আকিজ টোব্যাকো বিক্রি শুরু করেন। তিনি যশোর জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধানও কিনতেন। তা নওয়াপাড়া এবং দৌলতপুরের ব্যবসায়িক কেন্দ্র বা মোকামে সরবরাহ করেন। উদ্যোক্তা ও উদ্যোগী আকিজ উদ্দিন সর্বদা নতুন ব্যবসার সুযোগ খুঁজছিলেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন মৌসুমী ব্যবসায় যেমন গুড়, ছোলা, গম ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁর ব্যবসায়ের ত্রে প্রসারিত করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি দেশের বৃহত্তম পাটকলার ক্রিসেন্ট মিলের পাট ক্রয়কারি এজেন্ট মোহাম্মদ আলীর সাথে দেখা করেন। সৎ নিবেদিত ও দ আকিজ উদ্দিন দ্বারা মুগ্ধ হয়ে তিনি আকিজ উদ্দিনকে ক্রিসেন্ট পাট দিয়ে পাট সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। এ সময় পাট বাংলাদেশের রফতানিতে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। ফলস্বরূপ, এই ব্যবসায় লাভের প্রচুর সম্ভাবনা ছিল এবং অসাধু ব্যবসায়িরা বেশি লাভের আশায় কম ওজন দিয়ে পাটে নিম্ন মানের পাট প্রবেশ করানো এবং ইট কেনার আশায় বিভিন্ন অসাধু উপায়ে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করত। প্রথম দিকে তাকে প্রতি সপ্তাহে এক ট্রাক বোঝা পাট সরবরাহ করতে হয়। তবে তিন মাসের মধ্যে তিনি প্রতিদিন এক ট্রাক বোঝা পাট সরবরাহ শুরু করেন। আকিজ এসব ব্যবসায় খুব সফল ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তাঁর বেজারডাঙা তামাক কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৫০ জন দাড়ায়। ১৯৫৬ সাল ও পরের কয়েক বছরে আকিজ উদ্দিন খুব সফল হন। সে সময়ে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য বাজারজাত করতে মধ্যস্থতাকারী বা উপহাসকারীদের উপর নির্ভর করতেন। খুচরা বিক্রেতারা পণ্য কেনার জন্য আসতেন। এ সময়ে তরুণ আকিজের মধ্যস্থতার উপর নির্ভরতা হ্রাস করে বিভিন্ন অঞ্চলে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে নিজস্ব পণ্য সরবরাহ করতে বেবি ট্যাক্সি কিনেছিল। পণ্য সরবরাহের শৃঙ্খলার উপর আকিজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং তিনি তার উৎপাদন অনুযায়ি পণ্য বাজারে দিতে পারেন। সাপ্লাই চেইন তার নিয়ন্ত্রণে আসায় তিনি মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কাছে ব্যয় কমিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তার পণ্য সরবরাহ করতে সম হন। ফল স্বরূপ, খুচরা বিক্রেতারা সস্তায় আকিজ পণ্য বিক্রি করে ভাল আয় করছিলেন। সুতরাং তারা বাজারে অন্যান্য তামাকের চেয়ে আকিজের তামাক বিক্রিতে আগ্রহী ছিল। এ ছাড়া যশোর বেনাপোল হাইওয়ে এবং বেনাপোল সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায আকিজ উদ্দিন নাভারনে এক মিলিয়ন তামাকের উৎপাদন মতা সম্পন্ন একটি কারখানা স্থাপন করেন। শুরুতে স্থানীয় প্রভাবশালী প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি স্থানীয় শ্রমিক ও ব্যবসায়িদের সহায়তায় নাভারনে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সম হন। ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে তামাকের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে তিনি নাভারন বাজারের পাশে ২০ বিঘা জমি কেনেন এবং সেখানে তার কারখানা বসান। তিনি আরও পাঁচটি বেবি ট্যাক্সি কিনে খুলনা, যশোর ও আশপাশের অঞ্চলে বিড়ি সরবরাহ অব্যাহত রাখেন। পাট ব্যবসায় সাফল্যের সাথে তিনি নিজের পাট গুদাম নাভারনে স্থানান্তরিত করেন। নাভারনে তার ব্যবসা প্রসারের সাথে সাথে তিনি এবং তাঁর পরিবার ১৯৬২ সালের গোড়ার দিকে নাভারণে বসতি স্থাপন করেন এভাবে আকিজ উদ্দিনের ব্যবসার পরিধি ক্রমশ বাড়তে থাকে। ১৯৬৪ সালের তিনি ইয়াকুব আলী নামে এক ব্যক্তির সাথে যৌথভাবে পাট ক্রয় কেন্দ্র শুরু করেন। ইয়াকুব আলী প্রায় দুই লাখ টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। আকিজ উদ্দিন দীর্ঘ দিন যৌথ উদ্যোগে জড়িত হননি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের কারণে ভারত থেকে তেন্ডু পাতার আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘ স্থায়ি হয়নি। আকিজ ঢাকার বাজার পর্যালোচনা করে বুঝতে পারেন যে কাগজের তামাক এবং সিগারেট আস্তে আস্তে পাতা তামাকের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সে সময় চাহিদা অনুযায়ি আকিজ তামাক কাগজ তামাকে রূপান্তর করার টাকা তাঁর হাতে ছিল না। ১৯৭০ সালে তিনি সোনালী ব্যাংকের ঝিকরগাছা শাখা থেকে পাঁচ ল টাকা ঋন নেন। তবে ততণে দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। যুদ্ধ শুরু হলে, হিন্দু অধ্যুষিত নাভারনের অনেক বাসিন্দা প্রতিবেশী ভারতে চলে যায় এবং দেশ ছাড়ার আগে তাদের সমস্ত জিনিসপত্র আকিজ উদ্দিনের কাছে বিক্রি করেন। ডিপোজিট বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং তার নিজস্ব কারখানা এবং গুদাম থাকায় তিনি সহজেই এই ঝুঁকি নিতে সম হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে আকিজ উদ্দিন ক্ষতিগ্রস্থ হন। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের ও তার বুদ্ধি এবং প্রাকৃতিক সাহায্যে তিনি যুদ্ধে বেঁচে যান। যুদ্ধের পর দেশের প্রতি সেক্টরে অস্থিতিশীলতা বাড়ে এবং পণ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়ে। এ সময় আকিজ উদ্দিন যুদ্ধ চলাকালীন তার গুদামজাত পণ্য বিক্রি করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা উপার্জন করেন। এই অর্থ আকিজ উদ্দিনকে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িদের একজন হতে সাহায্য করে। স্বাধীনতার পরে পাটের ব্যবসা চললেও তামাক উৎপাদন বন্ধ ছিল। ১৯৭৩ সাল থেকে আকিজ উদ্দিন আবার তামাক উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন এবং এবার তিনি কাগজ তামাক উৎপাদনের চেষ্টা করেন। তামাকের প্রত্যন্ত পরিবহণের সুবিধার্থে তিনি তিন টন মতার একটি ইসুজু ট্রাক কেনেন। এর আগে,আকিজ উদ্দিনের তামাক খুলনা, যশোর এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে যায় তবে তিনি তা ঢাকায় সরবরাহ করেননি। কারণ আকিজ বুঝতে পারেন ঢাকার বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতা মূলক এবং আপনি যদি এই বাজারে নিয়মিত সরবরাহ করতে না পারেন তবে আপনি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না। তাছাড়া তামাকের স্বাদ এবং গন্ধের মধ্যে পার্থক্য আনাটা গুরুত্ব পূর্ণ। আকিজ তাঁর সহকারিকে ঢাকার সমস্ত ঐতিহ্যবাহী তামাকের নমুনা সংগ্রহ করে আনতে বলেন। সে নমুনা নিয়ে গবেষণা করার পরে, আকিজ বুঝতে পারেন যে এই তামাক প্রচলিত তামাকের চেয়ে ভাল মানের। সে সময়ে আরমানিটোলা ঢাকার তামাক ব্যবসা কেন্দ্র ছিল এবং আকিজ সেখানকার ব্যবসায়িদের মধ্যে বিনা মূল্যে তার তামাক বিতরণ করেন। ঢাকায় আজিজ তামাক সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিল এবং আজিজ তামাকের স্বাদ ও গন্ধে আকিজ তামাক যেহেতু উচ্চতর তাই ব্যবসায়িরা বুঝতে পারে যে এটি খুব সহজেই জনপ্রিয় করা যায়। আকিজ তামাকের বাজার ভাগ কমিয়ে আনার জন্য আকিজ উদ্দিন তার তামাককে কম দামে ২ টাকা করে সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং কাভার্ড ভ্যানে করে পঁচিশ ল তামাক নাভারন থেকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। তা বিক্রি করতে এক সপ্তাহ লাগে। তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তামাকের চাহিদা বুঝতে এবং সেসব অঞ্চলে আকিজের তামাক ব্যবসার সুবিধার্থে আঞ্চলিক ব্যবসায়ি নিয়োগ দেন।
তিনি তামাক পরিবহনের পাশাপাশি প্রচারণায় গভীর নজর দেন। তিনি তার পণ্য প্রচারের জন্য এক উদ্ভাবনী পদ্ধতির সন্ধান করেন। তিনি পরিবহণের জন্য তার দুটি কাভার্ড ভ্যানের শরীরে তামাকের বিজ্ঞাপন দেন। ১৯৭৬ সালে রেডিওতে তামাকের বিজ্ঞাপন শুরু হয়। তখন আকিজ তামাকের বিজ্ঞাপন প্রথম প্রচারিত হয়। ১৯৭৬ সালের মধ্যে আকিজ তামাকের দৈনিক উৎপাদন প্রায় ৭০ ল কেজি ছিল। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে আকিজ উদ্দিনের তামাকের বাজার থেকে হ্রাসমান গুণমান সম্পর্কে অভিযোগ ওঠে। তিনি রংপুর ও কুষ্টিয়া জেলা থেকে সরাসরি তামাক ক্রয় এজেন্ট নিয়োাগ দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি রংপুরে তামাক ক্রয় কেন্দ্র ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় আকিজ তামাকের চাহিদা ছিল দৈনিক প্রায় ৮ মিলিয়ন কেজি। আকিজ উদ্দিন তামাক ব্যবসায় ও সিগারেটে ধীরে ধীরে উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন। ১৯৭৭ সালে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ করা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ঢাকা টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তির পরে, আকিজ ৮৩,০০,৫০৫ টাকার দরপত্র জমা দিয়ে ২য় সর্বোচ্চ নিলামকারী হন। নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতারা কিছু শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হলে আকিজ ঢাকা টোব্যাকোর মালিকানা পান। আকিজ উদ্দিন জনতা ব্যাংকের অর্থায়নে এই নিলামে অংশ নেন। ১৯৭৮ সালে তিনি যখন ঢাকা টোব্যাকোর মালিক হন। কেবল কে-২ ব্র্যান্ডের সিগারেট তৈরি হয়। এছাড়া ১৯৭৯ সালে সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন জিএমের অনুরোধে আকিজ উদ্দিন এসএএফ শিল্প চামড়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে এসএএফ-এর মালিক স্কটিশ নাগরিক মিঃ কুপারের সাথে বিরোধের কারণে আকিজ উদ্দিন অপমান স্বীকার করে একই বছর নিলামের মাধ্যমে দেউলিয়া হয়ে এসএএফ শিল্প কিনেছিলেন। আকিজ উদ্দিনের চামড়া ব্যবসায় খুব বেশি জ্ঞান না থাকলেও তিনি বুঝতে পারেন যে ভবিষ্যতে এই ব্যবসায় লাভ করার সম্ভাবনা আছে, তাই তিনি তার ছেলে শেখ মমিন উদ্দিনকে চামড়া প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে ইংল্যান্ডে পাঠান।
ব্যবসা সম্প্রসারণ : শিল্প স্থাপনের পাশাপাশি আকিজ উদ্দিন একের পর এক নিলামে অংশ নিয়ে তার ব্যবসা সাম্রাজ্য প্রসারিত করতে থাকেন। এই সংস্থা
র মধ্যে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আকিজ প্রিন্টিং এবং প্যাকেজিং লিমিটেড, ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত আকিজ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি লিমিটেড এবং নাভরান প্রিন্টিং এবং প্যাকেজিং লিমিটেড অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯২ সালে তামাক ও সিগারেটের ক্রেতাদের কাছ থেকে তামাকের বিপুল চাহিদা অনুধাবন করে, তিনি তার ছেলেকে আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিঃ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিয়ে যান তাদের ম্যাচের কারখানায়। দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় মেশিন স্থাপন করেছিলেন এবং এই মেশিনে উৎপাদিত ডলফিন ব্র্যান্ড একসময় শীর্ষে ছিল জনপ্রিয়তা মেলে। যদিও তিনি কাঁচা পাট বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছিলেন, সরকারি নীতিমালার কারণে আকিজ পাটকল ব্যবসায় প্রবেশ করতে পারেননি। ১৯৯৯ সালে আকিজ উদ্দিন বাংলাদেশের কাঁচা পাটের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসাবে স্বীকৃতি পেলে তিনি আবার আবেদন করেন এবং অনুমতি পান। শেষ অবধি ১৯৯৪ সালে আকিজ পাটকল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এদিকে ১৯৯৩ সালে সরকারি মালিকানাধীন খুলনা হার্ডবোর্ড মিল টেন্ডার জিতেছে তবে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কারণে সরকার মালিক আকিজ উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করেনি। ফলস্বরূপ, আকিজ তার নিজের হার্ডবোর্ড মিল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশের চাহিদা বিবেচনা করে আকিজ ১৯৯৭ সালে পুত্র বশির উদ্দিনের পরামর্শে পার্টিকাল এবং বোর্ড মিল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮২ সালে দেশে তৈরি পোশাক খাত সম্প্রসারণ শুরু হলে আকিজ একটি টেক্সটাইল মিল স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। কয়েক বছর গবেষণা ও প্রচেষ্টার পরে অবশেষে ১৯৯৯ সালে আকিজ টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। আকিজ উদ্দিন তার ব্যবসা শুরু করেন দ্রুত চলমান ভোক্তা পণ্য হিসাবে কমলা দিয়ে ২০০১ সালে। আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড খাদ্য ও পানীয় ব্যবসার মাধ্যমে বাজারে আসে। ৯০ এর দশকে রিয়েল এস্টেট এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসার স্বর্ণযুগ শুরু হয়, আকিজ উদ্দিন ২০০২ সালে প্রথম ভিআরএম বা ভার্টিকাল রোলার মিল দিয়ে আকিজ সিমেন্ট কারখানা শুরু করেন। এছাড়া দেশের শীর্ষ সিমেন্ট প্রস্ততকারকরা বেশি লাভের স্বার্থে সিমেন্টে ফাই অ্যাশ মেশায়। আকিজ উদ্দিন আকিজ সিমেন্টে ফাই অ্যাশ মিশ্রনের পে ছিলেন না। আকিজ সিমেন্ট উড়াল ছাই ছাড়াই সিমেন্ট বাজারজাতকৃত দেশের প্রথম সিমেন্ট সংস্থা। নির্মাণ সামগ্রী শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ পণ্য টাইলস। ভবিষ্যত টাইলসের চাহিদা অনুমান করে আকিজ উদ্দিন সিমেন্ট কারখানায় কাজ করার জন্য বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী খুঁজছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশে টাইলস শিল্প স্থাপনের কথা ভাবেন। সেই অক্টোবরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রবাদ শিল্পপতি আকিজ উদ্দিন মারা যান। মৃত্যুর পরে বিষয়টি কয়েক বছর স্থগিত করা হয়। আকিজ সিরামিক তার পুত্রদের প্রচেষ্টায় ২০১২ সালে চালু হয়েছিল।
পাট ও তামাক শিল্প বিকাশে শেখ আকিজ উদ্দিনের অবদান অপরিসীম। যখনই ব্যবসা করেন, সততা ও নিষ্ঠার সাথে তিনি তা করেছেন। কাঁচামাল থেকে শুরু করে সেরা মানের পণ্যকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। পণ্যের গুণমানের পাশাপাশি তিনি শুরু থেকেই পণ্য বিতরণ ও সরবরাহ চেইনে একটি আধুনিক বিপণন কৌশল গ্রহণ করেন। তৎকালীন সমাজে, পণ্যের গুণ মান ভাল থাকলে ক্রেতা নিজের খোঁজ নেবে এই ধারণার বাইরে তিনি তার পণ্যের বিজ্ঞাপনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। যখনই আকিজ একটি নতুন শিল্পে প্রবেশ করে, শুরু থেকেই তিনি বড় বিনিয়োগ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তার ক্রিয়াকলাপ দেশের শিল্পের উন্নয়নে সহায়তা করেছে। শিল্প বিকাশের পাশাপাশি তিনি ছিলেন সমাজসেবায় অগ্রণী। ১৯৮০ সালে তিনি আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৮ সালে ঢাকার মগবাজারে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট আদ-দ্বীন মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, নার্সিং প্রতিষ্ঠান, স্কুল এবং কলেজ রয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে আকিজ গ্রুপের অবদান স্বীকার্য। ২০১২-১ অর্থবছরে আকিজ গ্রুপ ৩২৩২.৯৫ কোটি টাকা কর দিয়েছে। এছাড়া আকিজের টোব্যাকো কনসার্ন, যা ২০১৫ সালে জাপান টোব্যাকোর কাছে বিক্রি হয়, এর মূল্য ১.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা তার চেয়ে বেশি ১২০০ কোটি টাকার বেশি। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ।
শিল্পে বাংলাদেশের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত শেখ আকিজ উদ্দিন। যেমন ছিলেন দূরদর্শী তেমনি দৃঢ় প্রত্যয়ী। ১৩ বছরের বালক মাত্র ১৬ টাকা পুঁজি নিয়ে বাণিজ্য শুরু করে পরিণত বয়সে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন। নিজের স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ দেয়ার দুর্দান্ত সাহস ছিল শীর্ষ শিল্পপতি শেখ আকিজ উদ্দিনের। তাঁর এক বিড়ি কারখানা থেকে যে শিল্প প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু তা এক সময় বিকশিত হয়ে রূপ নেয় আকিজ গ্রুপে। বাণিজ্য শিল্পের প্রায় প্রতিটি স্তরে তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন। সে সাফল্য দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুখ্যাতি এনেছে। তাঁর বাণিজ্যের বিশাল প্রসার ভূমিকা রেখেছে দেশের রাজস্ব খাতে। শুধু বাণিজ্যকে জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে দেখেননি তিনি। তাঁর ভূমিকা ছিল সেবা মূলক কাজেও। তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবার অন্যতম প্রতিষ্ঠান আদ্-দ্বীন হাসপাতাল ও আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। মেধাবি দরিদ্র শিার্থীদের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক শিালয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি মানব কল্যাণে শেখ আকিজ উদ্দিন প্রতিষ্ঠা করেন আদ্-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট, আদ্-দ্বীন হাসপাতাল, আদ্-দ্বীন নার্সিং ইনস্টিটিউট,আকিজ কলেজিয়েট স্কুল, সখিনা স্কুল ফর গার্লসসহ আরো কিছু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। শেখ আকিজ উদ্দিন ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ৭৭ বছরের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটিয়ে এই প্রবাদ পুরুষ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ২০০৬ সালের ১১ অক্টোবর জন্মস্থান বেজেরডাঙ্গায় চির নিদ্রায় শায়িত হন বাংলাদেশের এই শীর্ষ শিল্পপতি। তিনি আজও জাগ্রত দেশের শিল্প-বাণিজ্য ও বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মাধ্যমে বহু মানুষের মনে। দেশের শীর্ষ শিল্প সংস্থা আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিনের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শিল্প বিকাশে প্রবাদ প্রতীম এই ব্যক্তিত্বকে তার পরিবারসহ তার হাতে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানার সকল স্তরের কর্মী শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করেছেন।